রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সিনেমা হল খুললেও মুক্তি পাচ্ছে না নতুন ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমা হল খুললেও মুক্তি পাচ্ছে না নতুন ছবি

‘দীর্ঘদিন পর যখন সিনেমা হল খুলল তখন সিনেমা হলে একটি প্রাণবন্ত জোয়ার দেখতে চেয়েছিলেন দর্শক। কারণ সিনেমা হল বন্ধ থাকায় হলে গিয়ে ছবি দেখতে না পারায় ক্ষুধার্ত হয়ে আছেন তারা। তাই তারা এখন নতুন ছবি দেখে সেই ক্ষুধা মেটাতে চেয়েছিলেন। তা না পেয়ে তারা সত্যিই হতাশ। একজন দর্শকপ্রিয় নির্মাতা হিসেবে বলব- দর্শকের দাবি ও প্রযোজক-প্রদর্শকদের চাহিদা কোনোটিই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। দর্শক যেমন নতুন ছবি চান তেমনি একজন প্রযোজকও তার ব্যবসার পূর্ণ স্বার্থ রক্ষার দাবি রাখেন। একই সঙ্গে সিনেমা হল মালিকরাও তাদের ব্যবসা পরিচালনার অনুকূল দিক অবশ্যই চাইতে পারেন। আমার মনে হয় সব কিছুর সমন্বয় হয়নি বলেই হয়তো দর্শক, প্রদর্শক ও প্রযোজক, কেউই কাক্সিক্ষত আকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম হচ্ছেন না। এদিক থেকে সব ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’ বললেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মতিন রহমান।

চলচ্চিত্র নির্মাতা কামাল কিবরিয়া লিপু বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন পর সিনেমা হল খুলেছে এবং করোনা কাল চলছে তাই আমরা নির্মাতারা লোকসানের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। আমরা অনলাইনের ওপর নির্ভর করতে পারি না। কারণ অনলাইন কখনো সিনেমা হলের বিকল্প হতে পারে না। অনলাইন থেকে টাকা কতটা উঠে আসবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সিনেমা হল বাঁচানোর দায়িত্ব কিন্তু প্রযোজকদের। তাই কিছুটা সময় প্রদর্শকদের ধৈর্য ধরতে হবে।

প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, শুক্রবার থেকে দেশে প্রায় অর্ধ-শতাধিক সিনেমা হল খুলেছে। কিন্তু নতুন ছবি দেয়নি প্রযোজকরা। এখন প্রদর্শিত হচ্ছে টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই, নবাব এল এল বি-সহ বেশ কটি পুরনো ছবি। নতুন ছবির জন্য আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে প্রযোজকদের আহবান জানানো হয়েছে। তাদের কথা হচ্ছে তারা হুট করে ছবি দিতে চায় না। অন্তত কয়েক সপ্তাহ সিনেমা হলে দর্শক সমাগম পর্যবেক্ষণ করে তারা ছবি দিতে চান। অর্থাৎ তারা লোকসানের ঝুঁকিতে পড়তে চান না। আমরা প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীদের নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য বসব। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেলে পুনরায় সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কারণ নতুন ছবি ছাড়া সিনেমা হলে দর্শক কেন আসবে।

সিনেমা হল খুললেও পুরনো ছবি মুক্তি কেন? চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশীদ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির কাছে এই প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘গত বছর প্রথমবার যখন করোনার কারণে সিনেমা হল বন্ধ ছিল এবং প্রযোজক সমিতির দায়িত্বে ছিল প্রশাসক তখন প্রযোজক সমিতি একাধিকবার প্রদর্শক সমিতির প্রশাসকের কাছে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার লিখিত দাবি জানিয়ে আসছিল। অথচ এখন সিনেমা হল খোলার পর তারা নতুন ছবি দিচ্ছে না। কেন তাদের এই অযৌক্তিক পদক্ষেপ তাও জানাচ্ছে না। প্রযোজকরা তো তাদের সঙ্গে সুবিধা-অসুবিধার বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতে পারেন। তারা তা করছেন না। এ অবস্থায় প্রদর্শকদের সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখতে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানি করতে হবে আর না হয় সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে হবে। একটি কথা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, আরেকবার সিনেমা হল বন্ধ হলে তা আর খোলা সহজ হবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তার এ প্রশ্নের উত্তরে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হল খুলতে গিয়ে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হয়েছে। এতে একজন প্রযোজক তার কোটি টাকার নতুন ছবি কীভাবে মুক্তি দেবেন। প্রযোজক তো এতে শতভাগ রেন্টাল ও দর্শক অর্ধেক থাকায় মুনাফা দূরে থাক মূলধনই ফেরত পাবেন না। সেজন্য আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চেয়েছিলাম, সরকার যেন এই ক্ষতি পূরণে ভর্তুকি অথবা প্রণোদনা দেয়। এতে প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়ই আর্থিক ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা পেতেন। আমি বলতে চাই, এখনো সময় আছে। প্রদর্শকরা আসুন, আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করি। তা না হলে এ অবস্থায় কোনো প্রযোজকই লোকসান নিশ্চিত জেনে ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাবেন না।’ প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখারউদ্দীন নওশাদ তার সিনেম হল খোলেননি। তিনি বরাবরই বলে আসছেন, নতুন এবং মানসম্মত ছবি না পেলে সিনেমা হল খোলার কোনো মানে নেই। কারণ এমনিতেই বন্ধ সিনেমা হল চালাতে গিয়ে স্টাফদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, নানা ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করতে চরম লোকসানের মধ্যেই আছি। তার ওপর নতুন ছবি ছাড়া সিনেমা হল খোলা মানে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।

এ ক্ষেত্রে আমি বলব, প্রযোজকরা যদি নতুন ও মানসম্মত ছবি দিতে না পারেন তাহলে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে বিদেশি ছবি একসঙ্গে এ দেশে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক সরকার। এদিকে মধুমিতা ছাড়াও দেশের অনেক সিনেমা হলই নতুন ছবির অভাবে খোলা হয়নি। এসব সিনেমা হলের মালিকেরও একই কথা-‘নতুন ও ভালো ছবি না পেলে সিনেমা হল কীভাবে খুলব?’ বর্তমানে মুক্তির জন্য প্রায় প্রস্তুত রয়েছে দুই ডজনেরও বেশি ছবি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, দীপংকর দীপেনের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২২’, জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত নাদের চৌধুরী পরিচালিত ‘জ্বীন’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকাল’, সানী সানোয়ারের ‘মিশন এক্সট্রিম’ পর্ব-১, প্রযোজক আজাদ খানের ‘শান’, শামীম আহমেদ রনির ‘বিদ্রোহী’ ছাড়াও ‘নীল মুকুট’, ‘পরাণ’, ‘বান্ধব’,  ‘নীল ফড়িং’ প্রভৃতি।

সর্বশেষ খবর