বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
নতুন ছবি নেই

দর্শকশূন্য সিনেমা হল

আলাউদ্দীন মাজিদ

দর্শকশূন্য সিনেমা হল

মধুমিতা সিনেমা

সিনেমা হল নতুন ছবি আর দর্শকের অভাবে এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আর্থিক সমস্যায় পড়ে গুমড়ে কাঁদছেন সিনেমা হল মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অব্যক্ত বেদনা নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। দীর্ঘদিনের মতো গতকালের এই চিত্রটিও এমনই ছিল। ২০ আগস্ট ৫ মাস পর সিনেমা হল খুললেও নেই নতুন ছবি নেই দর্শক। তাই ফাঁকা সিনেমা হল।

১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলা শহরে সিনেমা হল ছিল ৪৪টি। এখন আছে ২৫টি। ঢাকা জেলায় ছিল ১৭টি। এখন আছে পাঁচটি। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে থাকা গুলিস্তান সিনেমা হলটি ভেঙে ১২ তলা ভবন নির্মাণ করে। সিনেমা হল ভাঙার শুরুটা এখান থেকেই শুরু। এরপর একে একে ঢাকার নাজ, রূপমহল, তাজমহল, বিউটি, মুন, মল্লিকা, জ্যোতি, লায়ন, শাবিস্তান, গ্যারিসন, পর্বত, সাগরিকা, মেঘনা, যমুনা, ডায়না, আগমন, অতিথি, পূর্ণিমা, রাজমণি ভেঙে ফেলা হয়। সারা দেশের একই চিত্র। বলাকা হলের অন্যতম ব্যবস্থাপক শাহিন জানান, হলের ব্যবসা নেই, কিন্তু বেতন দিতে হয় ৬ লাখ টাকার বেশি। প্রতি মাসে ভর্তুকি দিতে হয়। তা মার্কেটের ভাড়া থেকে অ্যাডজাস্ট করা হয়। মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানান প্রতি মাসে স্টাফ বেতনসহ নানা খরচ চালাতে লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। করোনাকালে ছবির অভাবে সিনেমা হল চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই গত বছরের অক্টোবরে লকডাউন শেষ হলেও ছবির অভাবে তিনি আর সিনেমা হলটি খুলেননি। রায়েরবাজারের মুক্তি সিনেমা হলে কাজ করেন ২২ জন কর্মচারী। হলটির ব্যবস্থাপক শহিদুল্লাহ বলেন, নতুন ছবি ও দর্শক নেই। বেতন কীভাবে চালিয়ে যাবে সেই চিন্তায় অস্থির কর্তৃপক্ষ। মিরপুরের পূরবী হলের ম্যানেজার পরেশ জানান, তাঁদের হলে ৩২ জন কর্মচারী কাজ করেন। ব্যবসা না থাকলে মালিকের পক্ষে বেতন দেওয়া কীভাবে সম্ভব? লোকসান গুনে বন্ধ করে দেওয়া ঢাকার  ‘অভিসার’-এর কর্ণধার সফর আলী ভূঁইয়া উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, প্রতি মাসে ৪-৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। এভাবে আর কতদিন। তাই বাধ্য হয়ে মার্চ মাস থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৯৬৮ সালে  প্রতিষ্ঠিত হাজার আসনের অভিসার। সফর আলী জানান, একসময় এটি ছিল উন্নত জীবন ধারণের ব্যবসা। মাসে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিট মুনাফা হতো। হঠাৎ চলচ্চিত্রের মানে ধস নামলে দর্শকের অভাবে বছরের পর বছর শুধুই লোকসান গুনে যাচ্ছি। সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করলেও ‘সিনেমা হল’ শিল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ঢাকার আজাদ সিনেমা হলের কর্ণধার কলিমুল্লাহর উদ্বেগ আরও তীব্র। তাঁর কথায় ২৫ জনের মতো স্টাফ আর বিদ্যুৎ বিলসহ যাবতীয় লাখ লাখ টাকার খরচ আর কতদিন এভাবে বেকার বসে লোকসান গুনে চালাব। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য এই সিনেমা হলটি করোনার লকডাউনে বন্ধ থাকায় এর  যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, আসন সবই নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সংস্কারের টাকা কোথায় পাবেন তিনি জানেন না। সরকারের কাছে সিনেমা হলের জন্য কোনো সহযোগিতা চেয়ে কখনো পাওয়া যায়নি বলেও তাঁর ক্ষোভ। সরকার গত বছর সিনেমা হলের উন্নয়নের জন্য হাজার কোটি টাকার ঋণ ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত সেই টাকা পাওয়া যায়নি। প্রদর্শক সমিতি বলছে ঢাকা শহরে এই ঋণের সুদ ধরা হয়েছে ৪ পার্সেন্ট। ছবি ও দর্শক নেই তাই উচ্চ সুদে এই ঋণ নেওয়ার পর তা কীভাবে শোধ করা হবে সেই আশঙ্কায় অনেক সিনেমা হল মালিকই এখন এই ঋণ গ্রহণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এদিকে চলতি বছর করোনার লকডাউনের কারণে প্রায় ৫ মাস সিনেমা হল বন্ধ থাকার পর গত ২০ আগস্ট আবার ঢাকার কিছু সিনেমা হল খুললেও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সেগুলোতে নেই নতুন ছবি, নেই দর্শক। হাহাকার চলছে সিনেমা হল মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।

আনন্দ সিনেমা

 

জোনাকী

 

বলাকা

 

চিত্রামহল

ছবি : জয়ীতা রায়

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর