শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

সংগীতের ক্ষেত্রটা বাড়ছে না বাড়ছে গানের ব্যবসা

সংগীতের ক্ষেত্রটা বাড়ছে না বাড়ছে গানের ব্যবসা

দেশের বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা। নজরুলসংগীত কণ্ঠে ধারণ করে পৌঁছে গেছেন দেশ-বিদেশের শ্রোতাহৃদয়ে। শুধু গান নয়, তাঁর ধ্যান, জ্ঞান ও গবেষণায় নজরুল। আজ কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম প্রয়াণ দিবস। এ উপলক্ষে জাতীয় কবির কাব্য ও গান নিয়ে চর্চা, বর্তমান পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন- আলী আফতাব 

 

বর্তমানে নজরুলচর্চাটা অনেকাংশে বিশেষ দিবসে পরিণত হয়েছে আপনি কী মনে করেন?

অনেকাংশে নয়, বলা চলে পুরোটাই। মিডিয়া চলছে আসলে লোকদেখানো সবকিছু নিয়ে। যাকে প্রাধান্য দিচ্ছে, সে যোগ্য কি না, রাস্তায় চলতে পারবে কি না, অন্তঃসারশূন্য কি না- না ভেবেই দিচ্ছে। এই যে দেখ, তোমার সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে, এটাও তো বিশেষ দিবসের জন্যই। বিভিন্ন চ্যানেলে বছরভর অসংখ্য গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে- কতজন নজরুলসংগীত শিল্পী? বা কতজন নজরুলের গান গাইছে?

 

বাংলাদেশ নজরুলচর্চায় এখনো অনেকটাই পিছিয়ে আপনি কী মনে করেন?

নজরুলের সাহিত্য এবং সংগীত- বিষয়বস্তু, ভাষা, অন্তর্নিহিত মানের দিক থেকে অনেকেই নিতে পারে না। তাই তাদের প্রচারণাটা থাকে নেতিবাচক। কিন্তু নজরুলের কাব্য বা গীতি আমাদের ঠাঁই, এই সহজ কথাটা তাদের মাথায় ঢোকে না। দেশ ও ভাষার মুক্তির সঙ্গে তিনি আগাগোড়া জড়িয়ে। এটা আসলে আমাদের মানসিকতার দোষ, ব্যর্থতা। কেউ কেউ বলেন কঠিন- আরে, কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে তারা সিদ্ধহস্ত কিন্তু নজরুল সাহিত্য বা গান কঠিন!

 

তবে কি আমরা নজরুলচর্চায় ব্যাহত?

তা বলব না। আশার ব্যাপার হচ্ছে, এত মানসিক দৈন্যতা সত্ত্বেও নজরুলচর্চাটা বাড়ছে। যেহেতু রাগাশ্রয়ী গান, তাই সাধনার ব্যাপার। আজকাল মিডিয়ার চাকচিক্য দেখে কিংবা শর্টকাটে তারকা হওয়ার বাসনায় অনেকেই সাধনায় সময় দিতে চায় না। তবে শিল্পের সত্যিকারের মহিমা তো অস্বীকার করা যায় না। তাই আগের চেয়ে নজরুলের গানের সাধনা ও চর্চা বেড়েছে। শিল্পী যেমন প্রতিনিধিত্ব করে, আবার শিল্পীর জন্য প্রয়োজন সবার অনুপ্রেরণা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা।

 

বর্তমানে সংগীত জগতে অস্থিরতা বিরাজমান তার পেছনে কী কারণ আছে বলে আপনি মনে করেন?

সেটাই তো স্বাভাবিক। শিল্প ও শিল্পী অমার্যাদা সহ্য করে না। আজকাল ইন্টারনেটে গান প্রকাশ করছে, তার মানে ক্ষেত্রটা বেড়েছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সংগীতের ক্ষেত্রটা বাড়ছে না- বাড়ছে গানের ব্যবসা এবং উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার। আসলে মূল কথা টাকা- কিন্তু শিল্পের তো শুদ্ধতা দরকার, সুস্থতা দরকার। বাণিজ্যিকীকরণ, প্রয়োগ ও ব্যবহারে শিল্পের তো মর্যাদা হারাবেই। আর শিল্পীদের কথা কী বলব? কেউ কেউ রিয়েলিটি শো টাইপের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গান গেয়ে তারকা হয়ে যাচ্ছে- আরে! তাদের শেখার সময় দাও, ধারণ করার সময় দাও- তবেই তো গানটাকে বহন করতে পারবে।

 

তাহলে... নতুন শিল্পীদের নিয়ে আপনি কী বলতে চান?

আজকাল একটা বিষয় আমাকে আনন্দ দেয়। তা হলো নতুন প্রজন্মের নজরুলপ্রীতি। এখন অনেক ছেলেমেয়ে নজরুলের গান, নাটক, কবিতা নিয়ে নিয়মিত চর্চা করছে। আগেও তাঁর গান, কবিতা, নাটক ইত্যাদি নিয়ে মানুষের ভালোবাসা ছিল।

সঙ্গে চর্চাটাও ছিল নিত্যদিনের বিষয়। কিন্তু সময়ের কাছে অনেক কিছু হার মেনে যায়। অস্থিরতার কাল যখন আমাদের ওপর ভর করতে শুরু করেছে, তখন আমরা সঠিক চিন্তাধারা থেকে সরে গেছি। তাই আমাদেরও উচিত তরুণ প্রজন্মের এই নজরুলপ্রীতিতে যাতে ভাটা না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা। এ জন্য তাঁর সৃষ্টিকে পূর্ণাঙ্গ আকারে সহজলভ্য করে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। তাঁর সৃষ্টি বেঁচে থাকবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।  তারপরও নতুন প্রজন্ম যেন শ্রবণ, দর্শন আর পাঠাভ্যাসের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহী কবিকে চিনে নেয়- তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর