রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

অবশেষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সিনেমা হল

আলাউদ্দীন মাজিদ

অবশেষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সিনেমা হল

গত বছরের শেষ দিকে সরকার সিনেমা হল/সিনেপ্লেক্স নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেয়। পরে একনেকের বৈঠকে সিদ্ধান্তটি পাসও হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারও জারি করে। ব্যস ওই পর্যন্তই। সিনেমা হল উন্নয়নে ঋণ আর প্রদান করেনি ব্যাংক। গড়িয়েছে দীর্ঘ সময়। আশা হারিয়ে ফেলেন সিনেমা হল মালিকরা। অবশেষে গত ২৬ আগস্ট সরকার জরুরিভাবে এ নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করে। এতে সিনেমা হল ঘুরে দাঁড়ানোর আশার আলো দেখা দিয়েছে জানিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার শোবিজ বিভাগে ‘নতুন ছবি নেই, দর্শকশূন্য সিনেমা হল’ এবং ২৬ আগস্ট ‘যেভাবে ঘুরে দাঁড়াবে সিনেমা হল’ শিরোনামে পর পর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা সরকারের নজরে আসে এবং সরকার বিষয়টি বাস্তবায়নে জরুরি বৈঠক আহ্‌বান করে এবং দিকনির্দেশনা দেয়। সুদীপ্ত দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পত্রিকাটি প্রকাশের পর থেকে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে যেভাবে নিরলস ভূমিকা পালন করে আসছে তা সত্যিই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সুদীপ্ত দাস আরও বলেন,‘আমিও গত দুই মাস ধরে সিনেমা হল উন্নয়নে সরকার ঘোষিত ঋণ বাস্তবায়নে একাধারে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছিলাম। এখন ২৬ আগস্টের বৈঠকের পর আশার আলো দেখছি। এই বৈঠকে ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদানের জন্য দ্রুত সার্কুলার জারি করবে বলে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন আশা করছি ঘুরে দাঁড়াবে সিনেমা হল।

এদিকে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সিনেমা হলের উন্নয়নে এবং নতুন সিনেমা হল/সিনেপ্লেক্স নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ১ হাজার কোটি টাকার পূর্ণ অর্থায়ন তহবিল থেকে অর্থ ছাড়ের প্রশ্নে গত কয়েক মাস ধরে যে অচলাবস্থা চলছিল তার অবসান হতে চলেছে। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট তথ্য সচিব মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসরকারি ব্যাংক খাতের পূবালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা, ইউসিবিএল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ প্রধান প্রধান ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ ঋণ বিতরণের অচলাবস্থা কাটিয়ে গতি আনার জন্য এক জরুরি গুরুত্বপূর্ণ সভা তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদ হাসান, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস ও সমিতির আইনবিষয়ক সম্পাদক ইউনুস রুবেল, অতিরিক্ত তথ্য সচিব (চলচ্চিত্র) খাদিজা বেগম, এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিন, যুগ্ম সচিব নজরুল ইসলাম এবং উপসচিব সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সভার সভাপতি তথ্য সচিব তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে সৃষ্ট এই তহবিলের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সাময়িক সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠে দ্রুত ঋণ বিতরণের অনুকূলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মাঠপর্যায়ের ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপকদের বরাবর প্রেরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এরপর প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাস ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহের শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নেতিবাচক মনোভাব সভায় উপস্থাপন করেন এবং সুষ্ঠু বিতরণ ও ঋণের অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা রাখেন। তার এই প্রস্তাবনাসমূহকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করার জন্য তথ্য সচিব ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্‌বান জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকসমূহের উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে তহবিলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও বিতরণের লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন এবং সুদীপ্ত দাস উত্থাপিত একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাবকেও স্বাগত জানান ও কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রদর্শক সমিতির নেতৃবৃন্দকে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান। সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ এবং নির্দেশনায় দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নকল্পে তথা শক্তিশালী একটি চলচ্চিত্র বাজার তৈরির লক্ষ্যে এই ঋণ পূর্ণ অর্থায়ন তহবিল গঠিত হয়েছে। সরকার চায় জরুরিভাবে এই তহবিলের সুষ্ঠু বিতরণের মাধ্যমে বিদ্যমান সিনেমা হলগুলোর আধুনিকায়ন হবে এবং নতুন সিনেমা হল এবং সিনেপ্লেক্স নির্মিত হবে। তিনি নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরির ক্ষেত্রে বহুমুখী আয়ের ব্যবস্থা রাখার যেমন ফুডকোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের আয়ের ব্যবস্থাসমৃদ্ধ সিনেপ্লেক্স নির্মাণের ওপর বেশি জোর দেন ও ব্যাংকারদের প্রতি দ্রুত ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরুর আহ্‌বান জানান।

সভায় আগ্রহী সিনেমা হল মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিজ দায়িত্বে সব প্রকল্প সারপত্র তৈরি করে প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়ের ঋণ বিতরণ বিভাগে যোগাযোগ করতে প্রদর্শক সমিতির নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দেন সভায় উপস্থিত ব্যাংকাররা।

সর্বশেষ খবর