সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সালমান শাহর অর্পূণতা রয়েই গেল

সালমান শাহর অর্পূণতা রয়েই গেল

দেশীয় চলচ্চিত্রের বরপুত্র খ্যাত স্টাইলিশ ও ফ্যাশন আইকন নায়ক সালমান শাহর চিরপ্রস্থানের আজ ২৫ বছর। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ আয়োজন তৈরি করেছেন  -  আলাউদ্দীন মাজিদ  ও  পান্থ আফজাল

 

অপ্রতিদ্বন্দ্বী ফ্যাশন আইকন

মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭ সিনেমার নায়ক সালমান শাহ। আর এই ২৭ সিনেমায় সালমান শাহ ফ্যাশন নিয়ে যা করে গেছেন, দীর্ঘ ২৪ বছরে ঢাকাই সিনেমার আর কোনো নায়ক তা করতে পারেননি। সালমান শাহর মৃত্যুর পর সিনেমার আর কোনো তারকা এখনো ভক্তদের ‘ফ্যাশন আইকন’ হয়ে উঠতে পারেননি। ১৯৯৩ সালে প্রথম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায়ই ফ্যাশনে ভিন্নতা দেখিয়েছিলেন সালমান। ওই সিনেমায় তিনি মাথায় ভিন্ন স্টাইলের ক্যাপ পরেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সিনেমায় সালমানের ফ্যাশনের তালিকায় ছিল মাথায় রং-বেরঙের টুপি, স্ট্রিচ জিন্স প্যান্টের হাঁটুতে রুমাল বাঁধা, ছোট চিপের ব্যাকব্রাশ করা চুলের ডিজাইন, চুল ঝুঁটি করা, কানে দুল, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা, টি-শার্টের সামনের দিকে ইন করে পেছনের দিকে একটু খুলে রাখা, বড় বকলেসওয়ালা বেল্ট পরা, ডান হাতে ঘড়ি পরা, কপাল ঢেকে রাখা ব্যান্ডেনা, গলায় আরবীয় রুমাল প্যাঁচানো, পুলিশি পোশাক ও টুপিতে রোদচশমা আর গোঁফ, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, বড় চুলে ঠোঁটের কোণে সিগারেট রাখাসহ এমন অসংখ্য নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন সালমান। চুলের স্টাইলেও এনেছিলেন পরিবর্তন। সে সময় নতুন সিনেমা মুক্তির সঙ্গে সালমানের নিত্যনতুন স্টাইল দেখে পাড়া-মহল্লায় ফলো করার হিড়িক লেগে যেত। সালমানের মতো স্টাইলে চুল রাখত তাঁর ভক্তরা, পরত গোল ফ্রেমের চশমা, বিভিন্ন রঙের টুপি। এ ছাড়া কপাল ঢেকে রাখা ব্যান্ডেনা ও স্ট্রিচ জিন্স প্যান্টের হাঁটুতে রুমাল বাঁধা নব্বই দশকে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সালমানের জন্যই।

 

সেই গাড়ি এখন

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ির কোম্পানি টয়োটা ১৯৯০ সালে নিয়ে আসে নতুন মডেল- টয়োটা সেরা। যে মডেলটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়। এর দরজাগুলো ছিল পাখির ডানার মতো। ১৯৯৫ সালের শুরুর দিকে বেশ বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে ‘টয়োটা সেরা’ গাড়ি কিনে ফেলেন সালমান। এতটাই পছন্দের ছিল যে, গাড়িটা তিনি ‘প্রিয়জন’ ছবিতে ব্যবহার করেন। সে সময় তাঁর দেখাদেখি এ দেশের অনেক তরুণ একই মডেলের গাড়ি কিনেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর গাড়িটি পরিবারের কাছে ছিল। ২০১৭ সালের দিকে তাঁর মা নীলা চৌধুরী গাড়িটি বিক্রি করে দেন। সেটি আরও কয়েক হাত ঘুরে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোফাজ্জলের কাছে এখন।

 

যত পছন্দ...

সালমান সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন ড্রাইভিং। কাজ শেষ করে প্রায় রাতেই বেরিয়ে পড়তেন লংড্রাইভে। বেশির ভাগ রাতেই চলে যেতেন গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয়। সে রেস্তোরাঁর মিল্ক শেক খুব পছন্দ ছিল সালমানের। এমনও হয়েছে, দোকান বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু শুধু সালমানের জন্য দোকানদার রাতে দোকান খোলা রেখেছেন। উত্তরার একটি ফুটপাথের দোকানের চিতই পিঠা খুব পছন্দ ছিল তাঁর। একজন বয়স্ক নারী বানাতেন পিঠা, রাস্তার এক পাশে বসতেন। সেই বৃদ্ধাকে সালমান ‘নানি’ বলে ডাকতেন। হুটহাট গাড়ি চালিয়ে চলে যেতেন সেখানে।

 

ভালোবাসার স্বাক্ষর

সালমানের ভক্তকুলের অভাব নেই। এখনো অনেক ভক্ত তাঁকে ভালোবেসে অনেক কিছু তৈরিও করেছেন। তাঁর নামে ধামরাইয়ের ফিল্ম ভ্যালিতে হয়েছে শুটিং ফ্লোর। গাজীপুর সিটিতে তাঁর নামে হয়েছে বাসস্ট্যান্ড; তৈরি হয়েছে ভাস্কর্য। সালমান শাহর সবচেয়ে সুপারহিট সিনেমা ‘স্বপ্নের ঠিকানা’। এই সিনেমাটির নামে তাঁর ভক্ত মো. রাশেদুল ইসলাম (রাশেদ খান) নির্মাণ করেছেন একটি রিসোর্ট। যেখানে তৈরি হয়েছে সালমানের একটি নান্দনিক ভাস্কর্য। গাজীপুরের উলুখোলায় বীরতুল উত্তরপাড়ায় সালমানের এই ভাস্কর্যটি স্থাপিত হয়।

 

২৩ তরুণীর আত্মহত্যা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা হার্টথ্রব নায়ক সালমানের অকাল মৃত্যুর খবর কেউই মেনে নিতে পারেনি। শোনা যায়, প্রায় ২৩ জনের মতো তরুণী আত্মহত্যা করে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে। তাঁর নজরুল নামে এক বন্ধু ছিল। সালমান মারা যাওয়ার পর সে শুধু পাগলের মতো এফডিসির সামনে ঘুরে বেরাত। ফারুক নামে আরেকজন বন্ধু ছিল তাঁর। সে-ও কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

সালমানের যত নায়িকা

১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও শাবনূর ছিলেন সালমানের সর্বোচ্চ ১৪টি ছবির নায়িকা। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।

 

মজার ঘটনা

একবার একটি মেয়ে অনেকদূর থেকে কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছে সালমান শাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য। সে তাঁর ফ্ল্যাটের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। সালমান এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছে সে। তারপর মেয়েটিকে চলে যেতে বললেন। আর এতে রাগ হয়ে মেয়েটি তাঁর সামনেই ব্লেড দিয়ে তার একটি হাত কেঁটে ফেলল। সালমান যতক্ষণ এফডিসিতে থাকতেন, গেটের বাইরে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষায় থাকত তাঁকে একবার দেখার জন্য।

সর্বশেষ খবর