বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ওপার বাংলায়ও জনপ্রিয় তাঁরা...

শিল্পীরা হচ্ছেন স্বাধীন। তাঁদের নির্দিষ্ট কোনো সীমানায় সীমিত করা যাবে না। এক দেশের শিল্পী অন্য দেশে কাজ করবে এবং তাতে দেশ, শিল্পী এবং শিল্পের পরিচিতি বাড়বে। এটিকে অবশ্যই অ্যাপ্রিসিয়েট করা দরকার

আলাউদ্দীন মাজিদ

ওপার বাংলায়ও জনপ্রিয় তাঁরা...

এপার বাংলা আর ওপার বাংলা। দুই বাংলার মাঝে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও আশা, ভাষা, সংস্কৃতির মধ্যে একটা মেলবন্ধন বরাবরই আছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ঢাকাই ছবির তারকারা কলকাতার ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব আর সাংস্কৃতিক বন্ধনকে অটুট রাখতেই এক দেশের শিল্পীদের অন্য দেশে কাজ করা শুরু।

১৯৭৩ সালে কলকাতায় সত্যজিৎ রায় নির্মিত ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে অভিনয় করেন ববিতা। ১৯৭৬ সালে টালিগঞ্জে রাজেন তরফদার পরিচালিত ‘পালঙ্ক’ ছবিতে অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন। এ ছাড়া রাজ্জাক, শাবানা, অঞ্জু ঘোষ, নূতন, চম্পা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ফেরদৌসসহ অনেকে অভিনয় করেছেন টালিগঞ্জের ছবিতে। এখনো ঢাকাই ছবির তারকাদের কলকাতা মিশন চলছে এবং এর পরিমাণ বেড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যাঁরা কলকাতার ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শাকিব খান, জয়া আহসান, দিলরুবা ইয়াসমিন রুহি, নিপুণ, মিশা সওদাগর, জলি, নুসরাত ফারিয়া, সোহানা সাবা, আরিফিন শুভ, আহমেদ রুবেল, মাহিয়া মাহী, ববি, পরীমণি, আমান, রোশন, অপি করিম, শম্পাসহ অনেকে। নব্বই দশকের শেষ ভাগ থেকে অভিনেতা ফেরদৌসকে কলকাতায় বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। যৌথ প্রযোজনার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবির সাফল্যের পর ‘দাদু নাম্বার ওয়ান’, ‘পরদেশী বাবু’সহ কলকাতার আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। এমনকি বলিউড ছবি ‘মিট্টি’তে দেখা গেছে তাঁকে। ফেরদৌস এ দেশের সেই অভিনেতাদের একজন, যাঁকে সর্বাধিক ভারতীয় ছবিতে দেখা গেছে। ফেরদৌস বলেন, ‘আমি আসলে দেশ বিচার করে অভিনয় করিনি। গল্প ও চরিত্র ভালো লেগেছে বলেই কলকাতার এত ছবিতে অভিনয় করা। এটাও প্রমাণ হয়েছে, শিল্পীদের কোনো গন্ডিতে আটকে রাখা যায় না। সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে তাঁদের আনাগোনা চলতেই থাকবে।’ জয়া আহসান বলেন, শিল্পী তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকেন। তাই অভিনয়ের তৃষ্ণা মেটাতে শিল্পীদের যদি বিশ্বব্রহ্মা- চষে বেড়াতে দেখা যায়, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ঢাকা, কলকাতা আমার এই আসা-যাওয়ার মূলে একটাই কারণ, ভালো কাজের মধ্য দিয়ে নিজের শিল্পীসত্তাকে বাঁচিয়ে রাখা এবং দর্শক-প্রত্যাশা পূরণ করে যাওয়া।’  ‘আবর্ত’, ‘ক্রিসক্রস’, ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’, ‘রাজকাহিনী’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘বিসর্জন’, ‘রবিবার’, ‘বিজয়া’, ‘কণ্ঠ’, ‘ভালোবাসার শহর’ থেকে শুরু করে ‘বিনিসুতোয়’ পর্যন্ত প্রতিটি ছবিতে জয়া নিজেকে ভেঙে নতুনরূপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, অনবদ্য অভিনয়ের জন্য দেশের বাইরে থেকে দুবার পুরস্কৃত হয়েছেন। ঢালিউডের শীর্ষনায়ক শাকিব খান ২০১৪ সালে ‘শিকারি’ ছবির মাধ্যমে ওপার বাংলার ছবিতে অভিষেক ঘটান। এরপর ‘নবাব’, ‘নাকাব’, ‘ভাইজান এলোরে’, ‘চালবাজ’সহ বেশ কটি ছবিতে অভিনয় করেন এবং এপার বাংলার মতো ওপার বাংলায়ও ব্যাপক সাড়া জাগান। শাকিবের কথা ওপার বাংলা আর এপার বাংলার কাজের মধ্যে আমি কোনো ভিন্নতা দেখি না। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। চলচ্চিত্রে উভয় দেশের চলচ্চিত্রের মানুষের কাজের মাধ্যমে সংস্কৃতির দিক দিয়ে এই বন্ধন আরও জোরালো হবে এটাই বাস্তবতা।

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’ এবং যৌথ প্রযোজনার ‘বাদশা’, ‘বস-টু’; বিদ্যা সিনহা মিম ‘সুলতান : দ্য সেভিয়ার’, ‘ব্ল্যাক’, ‘ইয়েতি অভিযান, ‘থাই কারি’; সোহানা সাবা ‘ষড়রিপু’ এবং অপু বিশ্বাস ‘শর্টকাট’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন। মোশাররফ করিম ‘ডিকশনারি’ এবং চঞ্চল চৌধুরী ‘মনের মানুষ’ ছবিতে কাজ করে দেশীয় শিল্পীদের পরিচিতি তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়। সম্প্রতি মিথিলা ‘মায়া’ নামের একটি ছবিতে কাজ করেছেন। শুরু করতে যাচ্ছেন ‘অ্যা রিভার ইন হ্যাভেন’ নামের আরেকটি ছবির কাজ। আরও অনেকে এখন ওপার বাংলার রুপালি পর্দা আলো করার পথেই হাঁটছেন। চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ বলেন, বর্তমানে অন্য দেশে আমাদের দেশের শিল্পীদের অভিনয় করা নিয়ে কারণ খোঁজার প্রয়োজন নেই। শিল্পীরা হচ্ছেন স্বাধীন। তাঁদের নির্দিষ্ট কোনো সীমানায় সীমিত করা যাবে না। এক দেশের শিল্পী অন্য দেশে কাজ করবে এবং তাতে দেশ, শিল্পী এবং শিল্পের পরিচিতি বাড়বে। এটিকে অবশ্যই অ্যাপ্রিসিয়েট করা দরকার। চলচ্চিত্রকার সুচন্দা বলেন, আমাদের দেশের শিল্পীদের অন্য দেশ বিশেষ করে ভারতে কাজ করা নতুন কিছু নয়। এটিকে মন্দ বলা যায় না। ওই দেশের শিল্পীরাও আমাদের ছবিতে কাজ করছেন। দুই দেশের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের জন্য এটির দরকার আছে।

সর্বশেষ খবর