শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

৫৯ বছরেও অনবদ্য টম ক্রুজ

৫৯ বছরেও অনবদ্য টম ক্রুজ

টম ক্রুজ। যার হৃদয় হরণ করা হাসির ফাঁদে আটকা পড়েছে সুন্দরীরা। ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন ধর্মযাজক। সামান্য ভুলের কারণেই আজ হলিউডের অভিনেতা হয়ে গেছেন তিনি।  তাকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

কে এই টম...

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাইরেকিউজে প্রকৌশলী তৃতীয় থমাস ক্রুজ ম্যাপোথার ও শিক্ষিকা মেরি লির ঘর আলোকিত করে ১৯৬২ সালের ৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন টম ক্রুজ। প্রকৃত নাম থমাস ক্রুজ ম্যাপোথার চতুর্থ। বাবা থমাস ম্যাপোথার ৪৯ বছর বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্রুজের পূর্বপুরুষরা ছিলেন জার্মান, আইরিশ ও ইংরেজ গোত্রের।

 

স্বপ্ন ছিল ধর্মযাজক হওয়ার

টম ক্রুজের ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল ক্যাথলিক গির্জার যাজক হওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সেন্ট ফ্রান্সিস সেমিনারিতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন টম ক্রুজ। হঠাৎ এক দিন ক্রুজ ও তার বন্ধুরা কয়েক বোতল অ্যালকোহল পান এবং কোনো একসময় সেগুলো পান করে মাতাল হন। মাতাল অবস্থায় ধরা পড়েন যাজকদের হাতে এবং সেই ছেলেরা ক্রুজের নাম বলে দেন। এরপর সেমিনারি স্কুল থেকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে চিঠি লেখা হয়। পরে তারা বের হয়ে চলে আসেন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন টম ক্রুজকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তা ঠিক নয়।

 

রেসলিং ছেড়ে অভিনয়ে

এক সময় রেসলারও হতে চেয়েছিলেন টম ক্রুজ। কিন্তু এখানে স্বপ্নভঙ্গ। এক সময় হাইস্কুলের রেসলিং টিমের সদস্যও হয়েছিলেন। কিন্তু হাঁটুতে আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি রেসলিং ছেড়ে অভিনয় শুরু করেন।

 

অভিনয় জীবন শুরু

তার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯ বছর বয়সে অ্যান্ডলেস লাভ (১৯৮১) চলচ্চিত্র দিয়ে। তবে হেনরি মুনরো মিডল স্কুলে পড়াকালে ক্রুজ নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার অভিনীত প্রথম নাটকের নাম আইটি। ট্যাপ্স (১৯৮১) ও দ্য আউটসাইডার্স (১৯৮৩) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের পর ক্রুজ তার প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান রোমান্টিক কমেডি চলচ্চিত্র রিস্কি বিজনেসে। ক্রুজ পুরোপুরি তারকা হয়ে ওঠেন অ্যাকশন-নাট্যধর্মী টপ গান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর। এরপর তিনি আশির দশকের কয়েকটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র দ্য কালার অব মানি (১৯৮৬), ককটেল (১৯৮৮), রেইন ম্যান (১৯৮৮) ও বর্ন অন দ্য ফোর্থ অব জুলাই (১৯৮৯)-এ অভিনয় করেন। নব্বইয়ের দশকেও তিনি কয়েকটি হিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯২ সালে ফার অ্যান্ড অ্যাওয়ে ও অ্যা ফিউ গুডম্যান, ১৯৯৩ সালে দ্য ফার্ম, ১৯৯৪ সালে ইন্টারভিউ উইথ দ্য ভ্যাম্পায়ার, ১৯৯৬ সালে কমেডি-নাট্যধর্মী জেরি ম্যাগুইর, ১৯৯৯ সালে আইজ ওয়াইড শাট ও ম্যাগনোলিয়া। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মিশন : ইম্পসিবল এর ছয়টি সিরিজে ইথান হান্ট চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

বহু সম্পর্ক ও একাধিক বিয়ে

অভিনয় দিয়ে টম ক্রুজ যেমন আলোচিত তেমনি সম্পর্ক ও বিয়ে নিয়েও বিশ্ব মিডিয়ায় সমানভাবে আলোচিত। তিনি তার থেকে বয়সে বড় নারীর সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। যার ফলে তার থেকে তিন বছরের বড় রেবেকা, ৯ বছরের বড় প্যাট্রিসিয়া ও ১৬ বছরের সিনিয়র চের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। টম ক্রুজ প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮৭ সালে মিমি রজারসকে। তিন বছর সংসার করার পর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর ডেস অব থানডার ছবির সেটে নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে পরিচয় এবং ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন। এ সময় ইসাবেলা জেন ও কনর অ্যান্টনি নামে দুটি সন্তান দত্তক নেন। কিডম্যানের সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর পেনেলোপ ক্রুজের সঙ্গে টানা তিন বছর প্রেম করার পর ছাড়াছাড়ি। এরপর ২০০৫-এ কেটি হোমসের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু, যার ফসল হিসেবে ক্রুজকে বিয়ে করার আগেই কেটি হোমস একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। অবশেষে ২০০৬-এর ১৮ এপ্রিল ইতালির একটি প্রাসাদে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। ‘সুরি’ নামে তাদের সাত বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান আছে। সুরিকে নিয়ে দুজনের মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ২০ আগস্ট বিচ্ছেদ ঘটে ক্রুজ-হোমস জুটির।

 

দৌড়ালেই ছবি সুপারহিট

টম ক্রুজকে বেশি দেখা গেছে অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্রে। কখনো উড়োজাহাজের চাকা ধরে ঝুলছেন, আবার কখনো তাকে দেখা যায় উঁচু ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিতে। কখনো দেখা যায়, মেরে একাকার করছেন প্রতিপক্ষের লোকজনকে। চিত্র সমালোচকরা কৌতুক করে বলে থাকেন, টম ক্রুজের দৌড় মানেই ছবি সুপারহিট। টম ক্রুজ থাকা মানেই চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। সিনেমা হলের পর্দায় ঘণ্টায় গড়ে ১০ মাইল গতিতে দৌড়ান টম ক্রুজ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, প্রতি সেকেন্ডে ১৪ দশমিক ৭ ফুট পেরিয়ে যান টম। তিনি ন্যূনতম ১ হাজার ফুট দৌড়েছেন এমন চলচ্চিত্রের একটি তালিকা করেছে রেটিং দেওয়া কিছু প্রতিষ্ঠান। তাতে দেখা গেছে, টম ক্রুজের অত্যধিক দৌড়াদৌড়িতে বক্স অফিস ভালোই জমে। এতে প্রযোজকের পকেট ফুলেফেঁপে যেমন ওঠে, সমালোচকরাও দেন স্টার মার্কস। যেসব চলচ্চিত্রে টম ক্রুজ ১ হাজার ফুটের বেশি দৌড়েছেন, ওই সব ছবি বিশ্বজুড়ে গড়ে ৫৩৮ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে থাকে। সমালোচকরাও সেগুলোকে দিয়েছেন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। কারণ বেশি দৌড়ানো মানেই বেশি অ্যাকশন। আর যত অ্যাকশন, তত পয়সা। মিশন ইম্পসিবল সিরিজের তৃতীয় কিস্তিতে ৩ হাজার ২১২ ফুট দৌড়েছেন টম ক্রুজ। এ ছবি আয় করেছে ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। একই সিরিজের ‘ঘোস্ট প্রটোকল’-এ ৩ হাজার ৬৬ ফুট দৌড়ানোয় প্রযোজকের পকেটে ঢুকেছে ২০ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯২১ ডলার। ‘ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস’-এ ভিনগ্রহের প্রাণীদের ভয়ে ১ হাজার ৭৫২ ফুট দৌড়েছেন টম ক্রুজ। তাতে আয় হয়েছে ২৩ কোটি ৪১ লাখ ৪১ হাজার ৮৭২ ডলার। এই তিন ছবিতেই সবচেয়ে বেশি দৌড়েছেন টম।

 

ব্লকবাস্টার ফিল্ম...

ক্রুজ অভিনীত ব্লকবাস্টার হিট ছবি-রেইন ম্যান, এ ফিউ গুডম্যান, জেরি ম্যাগুইরো, ভ্যানিলা স্কাই, মাইনরিটি রিপোর্ট, দ্য লাস্ট সামুরাই, কোলাটেরাল, ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ড, ট্রপিক থানডার, জ্যাক রিচার।

 

জীবন দৌড়ের ৫৯ বছর

টম ক্রুজ ৩ জুলাই জীবন  দৌড়ের ৫৯ বছর পূর্ণ করেছেন। এখনো তিনি দুর্ধর্ষ ও বেপরোয়া পর্দায়।

 

সেরা ধনী

২০১৩ সালে বিশ্বের সেরা ধনী অভিনেতাদের মধ্যে টম ক্রুজ ছিলেন ৫ নম্বরে। তিন তিনবার অস্কারজয়ী এই তারকার ঝুলিতে রয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। স্ট্যালনের মতোই ৩৫ মিলিয়নের একটি প্রাসাদের মালিক ক্রুজ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর