রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার । রজতাভ দত্ত

এ বাংলার শিল্পীদের অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে

এ বাংলার শিল্পীদের অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা রজতাভ দত্ত রনি। যিনি পুজন মজুমদারের নির্মাণে বাংলাদেশি ছবি ‘প্রিয়া রে’তে চাঁদপুরে শুটিং করছেন। ছবিটিতে নায়ক শান্ত খানের বিপরীতে রয়েছেন কৌশানি মুখোপাধ্যায়। শুটিং চলাকালীন এক বিকালে রজতাভ দত্তের সঙ্গে বিশেষ আড্ডায় ছিলেন- পান্থ আফজাল

 

চলচ্চিত্রে অভিনয়ে বাংলাদেশে তো কয়েক দফায় আসা হয়েছে সেই হিসেবেপ্রিয়া রে ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা আগে থেকে কতটা আলাদা মনে হচ্ছে?

আগে বেশির ভাগ ছবিই এফডিসিতে করেছি। একটা ছবি অনেক দিন আগে করেছিলাম, সেটা বান্দরবানে। আর বাংলাদেশের একদম নিজস্ব শেকড়ে গিয়ে কাজ করার বা  গ্রামাঞ্চলে গিয়ে কাজ করার সুযোগ এর আগে হয়নি। সেটা এই শাপলা মিডিয়ার সেলিম খানের কল্যাণে হয়েছে। চাঁদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুটিং করছি সবাই। পুজন এটি নির্মাণ করছে। সে তো এতদিন অ্যাসিস্ট করেছে। তার এটা প্রথম ছবি। তবে তাকে চিনি বহুদিন ধরেই। আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় পুজনের। এই ছবিতে নায়ক হিসেবে শান্ত খান রয়েছেন, খরাজ মুখার্জি, কৌশানিও রয়েছেন। এ বাংলা থেকে শিবা শানু, শিরিন আলম, শাহীন মৃধা, কমল, অনুভব মাহবুবসহ অনেকেই রয়েছেন। তারা খুবই ভালো অভিনেতা। তাদের সঙ্গে কিছু দৃশ্যের চিত্রায়ণ হয়েছে। সব মিলিয়ে নিশ্চয়ই একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা হচ্ছে।

 

ছবিতে আপনার অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে জানতে চাই...

গল্পে আমার যে চরিত্র সেটা নায়িকার বাবার। প্রাথমিকভাবে সে দুষ্টু লোক, যথারীতি...হা হা হা! কিন্তু বরাবরই যে রকম থাকে আমার চরিত্রটি, খানিকটা কমেডির মোড়ক রয়েছে। নেগেটিভ চরিত্রে কমেডির মোড়কে দুই বাংলাতে দর্শক খুবই উপভোগ করেন। সেই স্বাদটা মনে হয় এ ছবিতেও পাবেন। আমি তাদের সেই ভালো লাগাটা দিতে পারব। তবে যেই চরিত্রটা আমি করছি তার প্রথমটা খুব খারাপ, মাঝখানটা মাঝারি খারাপ। কিন্তু মেয়ের ব্যাপারে একেবারে অন্ধ। তারপর একটা ট্র্যাজিক পরিণতি আছে। কারও মৃত্যু সব সময়ই ট্র্যাজিক; তবে ছবিতে যখন খলনায়ক মারা যায়, তখন দর্শক আনন্দই পায়। তবে এই ছবিতে তেমন নয়; সব দর্শকেরই খারাপ লাগবে। কাজেই অনেক শেডস রয়েছে। যে কোনো অভিনেতার পক্ষে এটা খুব লোভনীয়। শান্তর সঙ্গে আগে কাজ করেছি, সেলিম খানের সঙ্গেও হয়েছে। তবে পুজনের নির্দেশনায় প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করা হচ্ছে। বেশ ভালো লাগছে। সে ধরে ধরে কাজ করছে। যতদূর জানি, এটা রিলিজ করার প্ল্যান করছে ভ্যালেন্টাইনস ডেতে। এটি একটি প্রেমের ছবি। কাজেই একটি প্রেমের উদযাপনের দিবসে রিলিজের থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে!

 

কলকাতায় কাজের সার্বিক অবস্থা কেমন?

ইন্ডিয়ায় প্রচুর কাজ হচ্ছে, তবে সেটা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য হচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা থিয়েটার বা ফিল্ম থেকে এসেছি, সেটা থিয়েটার হলেও যেমন পারফর্ম না করতে পারলে আমাদের ভালো লাগে না তেমনি কষ্ট লাগে ছবিগুলো হাউসে না দেখতে পেলে। দর্শকদের মধ্যে দেখা, নিজেও আমি অন্যের ছবি হাউসে গিয়ে দেখি। আমার বাড়িতে টেলিভিশন প্রায় চলেই না। আমি হাউসে গিয়ে ছবি দেখা পছন্দ করি খুব। আমি এসব অভিজ্ঞতা খুব মিস করছি। আমি জানি, আমার মতো দুই বাংলার দর্শকও খুব মিস করছে। যারা চলচ্চিত্রকে ভালোবাসেন। কারণ হলের এক্সপেরিয়েন্স ওটিটির মাধ্যমে কখনই পূরণ হওয়ার নয়। একটা কথা, আমাদের ও-বাংলায় গ্রামাঞ্চলের ছবি করা কিন্তু একেবারেই কমে গেছে। সে রকম সুযোগ আমরা কম পাই। সব শহুরে গল্প নিয়ে। সেই সুযোগ এবার এ দেশে পাচ্ছি। এটা আমার প্রথম গ্রামনির্ভর ছবি।

 

পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের জয়া, মোশাররফ, বাঁধন, চঞ্চলরা এখন দাপিয়ে কাজ করছেন তাদের কারণে নাকি সেখানকার জনপ্রিয় শিল্পীদের কাজ কমে গেছে? ম্প্রতি আনন্দবাজারের একটা রিপোর্টে তাই বলা হয়েছে

আমরা ছোটবেলা চকলেট বলতে একটা বেগুনি রঙের জিনিসকেই চিনি। বাচ্চার জন্য একটা সাবান, তেলের প্যাকেট সবাই উপহার দেয়। আমার মেয়েও সেটা মেখেছে। তিনটা জেনারেশন পার হয়ে গেছে। এবার সেই লোকটা তো পায়ে ধরে বলেনি যে আমারটা কেন, আমারটা খাও। সে স্টাবলিশ করেছে সে ভালো বানায়। লোকজন কিনতে বাধ্য হচ্ছে। কাজেই যারা এ-বাংলা থেকে গিয়ে ওখানটায় কাজ করেছেন, অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, ৫০টি ছবি পেয়েছেন-সেটা তারা নিজের যোগ্যতায় পেয়েছেন। ঠোঁট ফুলিয়ে অভিনয় করে, এ-করলা না ও-করলা না-এই নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়িয়ে লাভ কী! উনারা কি মেশিনগান নিয়ে ঢুকেছেন, যে ছবি দেন, না হলে গুলি করে মেরে ফেলব! আজিব। আমরাও তো এ বাংলায় এসে চুটিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যদি মানুষ ভালোবাসে, তাহলে করব; না হলে করব না। এটা নিয়ে আক্ষেপ করার তো কিছুই নেই। তারা তাদের প্রতিভা দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। যদি প্রতিভা না থাকে তাহলে তো হবে না। বাংলাদেশি এসব শিল্পীর মধ্যে নিশ্চয় কোনো এক্সফ্যাক্টর আছে। যে কারণে জয়া, চঞ্চল, মোশাররফ, বাঁধনরা সেখানে জায়গা করে নিতে পারছেন। এ নিয়ে আক্ষেপ বা ক্ষোভ ঝাড়িয়ে তো লাভ নেই, তাই না!

 

ওখানে সব ঘরানার ছবিতেই অভিনয় করেছেন আগের মতো এখন কেন কমার্শিয়াল ছবি ব্যবসাসফল হচ্ছে না?

কোনো সিরিয়াস ছবির দর্শকই চান না তার ছবি ব্যবসা না করুক। কমার্শিয়াল ছবি মানেই হচ্ছে ব্যবসানির্ভর ছবি। কাজেই সবাই চান যে তার ছবি ব্যবসা করুক। এখন ব্যবসাসফল ছবি করতে গিয়ে সেই ছবি কি আমি সস্তায় বাজিমাত করার চেষ্টা করছি, নাকি আমি রুচির অংশটা একেবারেই নামিয়ে দেব বা সূ²তার দিকে কোনোভাবেই মন দেব না-সেগুলো একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি কোনো কমার্শিয়াল ছবি ফ্লপ করে থাকে তবে আমার ধারণা, সেই মাপের কমার্শিয়াল ছবিই হচ্ছে না বা কোনো কারণে হোক ফেল করছে। অথবা দর্শকদের টেস্ট ধরতে পারছে না কেউ। আবার যারা বানাচ্ছেন তারা হয়তো ভাবছেন যে টেস্টটা বেশিই ধরে ফেলেছি; ফলে মসলাটা বেশি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছবিটা তো বুকের মধ্যে থেকে বানাতে হয়! মনটা যদি তার মধ্যে না থাকে তাহলে সম্ভব নয়। কিছুতেই না। এটা মনে রাখবেন।

 

মূল গলদটা কোথায় বলে মনে হচ্ছে?

এখন তো অনেকের বাড়িতেই অসংখ্য চ্যানেল রয়েছে। ১৫ বছর আগের কমার্শিয়াল ছবিগুলো যখন চলে তখন কেন আবার মানুষ দেখতে বসে? বা শোলে যদি কোনো ভারতের হলে আসে, মানুষ ফিরে দেখে কেন? কাজেই কমার্শিয়াল ছবিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। অন্য কোথাও কোনো একটা গন্ডগোল আছে, সেটা সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে। আমরাও চেষ্টা করছি। কোথাও ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এরপর এখন কিন্তু প্রচুর মাল্টিপ্লেক্স হচ্ছে। আগে তো এত মাল্টিপ্লেক্স ছিল না। এটিতে যে টিকিটের দামটা থাকছে সেটা সাধারণ সিঙ্গেল স্ক্রিনিং থেকে চড়া। এখন মাল্টিপ্লেক্সে যারা যাচ্ছেন তারা কিন্তু সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম। এটা হলো একাংশ। বাকিদের কিন্তু অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই চড়া দামে টিকিট কেটে ছবি দেখার। এসব নিয়ে দ্রুতই ভাবার দরকার।

সর্বশেষ খবর