রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

৬৭ বসন্তেও আবেদনময়ী রেখা

৬৭ বসন্তেও আবেদনময়ী রেখা

অভিনেত্রী রেখা। অভিনয়ের শুরুতেই গ্লামার দিয়ে আবেদনের ঝড় তোলেন। জীবনের ৬৭ বসন্তে এসে সেই আবেদনে একটুও ভাটা পড়েনি। বলিউডের চিরসবুজ অভিনেত্রী আর ‘ডিভা’ হিসেবে পরিচিত তিনি।  তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকে হাজারও ভক্ত। আজ রেখার  জন্মদিনে তাঁর জীবনের যত ঘটনা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

ভানুরেখা থেকে রেখা

রেখার আসল নাম ভানুরেখা গনেশন। তিনি দক্ষিণী অভিনেতা জেমিনি গনেশন এবং তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যাল্লির কন্যাসন্তান। ভারতের চেন্নাইয়ে ১০ অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রেখার ছোটবেলা ছিল বিষাদে ভরা। ছেলেবেলায় রেখার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন রেখার বাবা। শুধু তাই নয়, রেখা যে তারই ঔরসজাত সন্তান তা-ও মেনে নেননি। এর কারণ ছিল রেখার মা-বাবার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক।

 

বিমানবালা হতে চেয়েছিলেন

রেখার দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। তাই বিমানবালা হতে চেয়েছিলেন, অভিনেত্রী নন। বিমানবালার চাকরির চেষ্টা করলেও অল্প বয়সের কারণে বাদ পড়েন।

 

পরে হতে চান নান

পরে রেখা নান হতে চেয়েছিলেন। আইরিশ নান স্কুলে পড়াশোনার কারণে তাঁর মনে এমন ভাবনার উদয় হয়। শেষ পর্যন্ত নানও হতে পারলেন না তিনি।

 

আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন

চরম হতাশায় একসময় আত্মহত্যা করতে যান রেখা। এ হতাশার কারণ তাঁর গায়ের রং ছিল কালো। গায়ের রং কালো বলে কারও মন আকৃষ্ট করতে পারছিলেন না তিনি। ফলে সিদ্ধান্ত নেন এ হতাশার জীবন আত্মহত্যার মাধ্যমেই সাঙ্গ করবেন। কিন্তু তাঁর সৎ বোনরা তাকে খুব ভালোবাসতেন। তারাই তাঁকে সাহস জুগিয়ে বুঝিয়ে সেই পথ থেকে ফেরান।

 

অভিনয়ে...

১৯৬৬ সালে ‘রাঙ্গোলা রত্নাম’ নামে একটি তেলেগু ছবির মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্রজীবন শুরু। নায়িকা হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু ১৯৬৯ সালে। কান্নাডা ফিল্ম অপারেশন ‘জ্যাকপট নাল্লি সিআইডি-৯৯৯’ ছবিতে। ১৯৭০ সালে ‘সাওয়ান ভাদন’ নামে হিন্দি ছবিতে তিনি প্রথম নায়িকার অভিনয় করেন। ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে ১৮০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এ আবেদনময়ী অভিনেত্রী।

 

হিন্দি ভাষায় অদক্ষতা

হিন্দিতে খুব একটা ভালো ছিলেন না রেখা। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছর তাই অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাঁকে। অনেক ছবি থেকে এ কারণে বাদও পড়েছেন।

 

গানেও পারদর্শী

রেখা চমৎকার গানও করেন। ‘খুবসুরাত’ সিনেমার গানে প্লেব্যাক করেন তিনি। অভিনয়ে ব্যস্ততা আর অভিনয়কে বেশি ভালোবেসে ফেলায় গানের প্রতি তাঁর দুর্বলতা কমে যায়।

 

যে কষ্ট ভুলতে পারেননি

বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। অভিনয়ে আসার পরই যৌন লালসার শিকার হয়েছিলেন রেখা। কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা বিশ্বজিৎ জোর করে চুমু খেয়েছিলেন তাঁকে। ‘আনজানা সফর’-এর শুটিং চলাকালে হঠাৎ করে তাঁকে জড়িয়ে ধরে গভীর চুম্বন করেছিলেন অভিনেতা।  রেখা তখন চলচ্চিত্রে নবাগত বলে ভয়ে কিছু বলতে পারেননি।  এ কষ্ট এখনো তাঁকে ভোগায় বলে কিছু দিন আগে মিডিয়াকে জানান তিনি।

 

অমিতাভের সঙ্গেই আলোচিত

১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’ সিনেমাতে অমিতাভের সঙ্গে অনবদ্য অভিনয় করে সবার নজরে আসেন রেখা। এ জুটির রসায়ন বলিউডে নতুন আলোড়নের সূচনা করে। ‘সিলসিলা’, ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দার’ ‘খুন-পাসিনা’, ‘সুহাগ’, ‘মিস্টার নটবরলাল’সহ ১১টি জনপ্রিয় ছবিতে তাঁরা জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেন।

 

অমিতাভকে বিয়ের খবর

অমিতাভ-রেখা নাকি বিয়েও সেরে ফেলেছেন। ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি ঋষি কাপুর এবং নিতুর সিংয়ের বিয়েতে শাঁখা-সিঁদুর পরে উপস্থিত হন রেখা। সাদা শাড়ি, লালটিপ, সিঁদুর; সব মিলিয়ে রেখাকে বধূ বেশেই সেদিন দেখেছিলেন সবাই।

 

স্বামীর আত্মহত্যা

১৯৯০ সালে ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রেখা। বিয়ের ৭ মাসের মাথায় ১৯৯০-এর ২ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন মুকেশ।  রেখা তখন আমেরিকায় ছিলেন। স্বামীর অপমৃত্যুর জন্য রেখাকেও দায়ী করে অনেক সংবাদমাধ্যম।

 

যত বিতর্কিত দৃশ্যে

রেখা তাঁর অভিনয় জীবনে অনেক বিতর্কিত দৃশ্যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৮৬ সালে ‘উৎসব’ সিনেমায় শেখর সুমনের সঙ্গে রেখার ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সাড়া ফেলেছিল। ১৯৯৬ সালে ‘খিলাড়িও কা খিলাড়ি’ সিনেমায় রেখা আর অক্ষয় কুমারের ‘ইন দ্য নাইট নো কন্ট্রোল’ গানের দৃশ্যায়নের বিরুদ্ধেও অশালীনতার অভিযোগ উঠেছিল। বিনোদ মেহরার বিপরীতে ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় তাঁর ‘ঘর’ ছবিটি। যা নিয়ে পুরো ভারতে প্রচুর শোরগোল হয়, এ সিনেমায় ধর্ষিতা নারীর চরিত্রে তাঁর অভিনয় ব্যাপক সমালোচিত ও প্রশংসিত হয় এবং বক্স অফিসেও বাজিমাৎ করে।

 

বলিউডের একমাত্রডিভা

দক্ষ অভিনয়, মনকাড়া সৌন্দর্য, আকর্ষণীয় ফিগার আর চির আবেদনময়ী আমেজ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারার সুবাদে বলিউডের একমাত্র ডিভা উপাধি লাভ করেন তিনি।

 

যত সম্মাননা

তিনবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। ১৯৮২ সালে ‘উমরাও জান’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারও জেতেন রেখা।

 

এখন যেমন আছেন

২০০০ সালের পর থেকে তাঁকে বছরে একটি বা দুটি ছবিতে দেখা যায়। ২০১৫ সালে ‘শমিতাভ’-এর পরে আর কোনো ছবি করেননি তিনি। রেখা ছবি করা ছেড়ে দিলেও জীবনযাত্রায় তাঁর কোনো প্রভাব পড়েনি। এখনো তিনি সত্তর ও আশির দশকের মতোই অতি রঞ্জিতভাবে জীবনযাপন করেন। মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় রেখার একটি বাংলোবাড়ি ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এবং মুম্বাইয়ের আরও কয়েকটি জায়গায় তাঁর সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তি থেকে তিনি নিয়মিত ভাড়া পান। এ ছাড়া বেশ কিছু পুরনো ছবির জন্য এখনো টাকা দেওয়া হয় রেখাকে।

সর্বশেষ খবর