শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

যেমন চলছে রাজবাড়ী জেলার সংস্কৃতি চর্চা

যেমন চলছে রাজবাড়ী জেলার সংস্কৃতি চর্চা

একসময় পালাগান, যাত্রা, সার্কাস, নাটক আর সংগীতে রাজবাড়ী জেলার বিশেষ ঐতিহ্য ছিল। শিশুদের মনন বিকাশে সুপরিচিত বেশ কিছু শিশু সংগঠন ছিল। এখন সদিচ্ছা ও কর্মী সংকটে সেসব স্থবির। তবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সেই জৌলুস না থাকলেও এখন রাজবাড়ীতে সংগঠনের কমতি নেই। বিস্তারিত লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

নাট্যদল অনেক, সচল দু-একটি

রাজবাড়ীতে নাট্যচর্চার প্রধান কেন্দ্র ছিল হোসনেবাগ হল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও সদিচ্ছার অভাবে এটি আজ ভাগাড়ে পরিণত। তৎকালীন টাউন হলে সপ্তাহে তিন দিন নাট্য প্রদর্শনী হতো। তখন এ জেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল রাজবাড়ী থিয়েটার গ্রুপ, চারণ থিয়েটার। আবোল-তাবোল শিশু একাডেমিতে চলত শিশুতোষ নাট্যচর্চা। সেসব এখন শুধুই রূপকথার গল্প। জেলায় আমরা কজনা, স্বদেশ নাট্যাঙ্গন, মঙ্গলনাট, মৈত্রী থিয়েটার, দহন থিয়েটারসহ বেশ কিছু নাট্যদল থাকলেও বর্তমানে শুধু স্বদেশ নাট্যাঙ্গনের কার্যক্রম চোখে পড়ে। এ সংগঠনের প্রধান অজয় বলেন, ‘পথশিশুদের নিয়ে একটি নাটক ও শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ৬৪ জেলায় পরিবেশ থিয়েটার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তার অংশীদার হয়ে নাটকের মহড়ার কাজ শুরু করেছি।’ 

 

নিয়মিত চলছে আবৃত্তি চর্চা

আবৃত্তি চর্চার প্রসারে বেশ এগিয়েছে রাজবাড়ী। জেলার সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম মাধ্যম শিল্পকলা একাডেমি হলেও আবৃত্তি চর্চায় অন্য সংগঠনগুলোর কার্যক্রম কিছুটা এগিয়ে। শিশুদের মানসিক বিকাশে ২৭-২৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত আবোল-তাবোল শিশু সংগঠনে চলত নাটক, আবৃত্তি, সংগীত, তবলা, নৃত্য, চিত্রাঙ্কন চর্চা। অন্যদিকে শিশু একাডেমিও ছিল শিশুদের প্রতিভা বিকাশের অন্যতম কেন্দ্র। তবে এখন শিশু একাডেমিতে নামমাত্র আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন চর্চা চলছে। দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব। তবে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশ আবৃত্তি সম্বন্বয় পরিষদের সহযোগী সংগঠন ‘প্রিয়তমাষু আবৃত্তি নিকেতন’ নিয়মিত আবৃত্তি চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনটি সারা বছরই আবৃত্তি চর্চা ও নিয়মিত অনুষ্ঠান করছে বলে জানান সংগঠনটির সভাপতি মিরুনা বানু মুন। আবোল-তাবোল শিশু সংগঠনও তাদের নিজস্ব ভবনে প্রশিক্ষক দিয়ে আবৃত্তি চর্চা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আবৃত্তি প্রসারে এ জেলায় প্রথম ‘রাজবাড়ী আবৃত্তি পরিষদ’ গঠিত হলেও এর কার্যক্রম কিছুটা স্থবির।

 

নৃত্যচর্চার বেহাল দশা 

একসময় এ জেলার অন্যতম আকর্ষণের বিষয় ছিল নৃত্য। শিল্পকলা, প্রশাসন বা যে কোনো সংগঠনের অনুষ্ঠানে মনোমুগ্ধকর নৃত্যের মাধ্যমে অতিথিকে বরণ করা হতো। এক্ষেত্রে আবদুস সাত্তার কালুর নাম থাকবে সর্বপ্রথম। তাঁর ছাত্রী হিসেবে ছন্দা, নীলা, দিলরুবা সাথীসহ অনেকেই রাজবাড়ীর সুনাম বাড়িয়েছে। মোহন, আরিফুজ্জামান চয়নসহ অনেকেই জেলাকে সুন্দরভাবে সবার কাছে তুলে ধরলেও নৃত্যচর্চা চলছে এখন কিছুটা জটিলতায়। শিল্পকলার প্রশিক্ষক হিসেবে অনেক দিন ধরেই নেই আবদুস সাত্তার কালু। তিনি এখন নিজের দিব্য নৃত্যকলা নিয়েই আছেন। জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস জানান, ‘শিল্পকলার নৃত্য প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি নেই। তিনি নিজে থেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। আসলে তিনি যে পর্যায়ের নৃত্যশিল্পী, সেই হিসেবে তাঁকে সম্মানী দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।’

 

ভালো নেই সংগীতাঙ্গন

একসময় আজাদী ময়দান, ডিসি অফিস কিংবা পাবলিক লাইব্রেরিতে বসত সংগীতের অনুষ্ঠান। বিভিন্ন মেলা, অনুষ্ঠান সংগীত ছাড়া হতোই না। বিভিন্ন সংগঠন পালাক্রমে গান পরিবেশন করত। এখন সে অবস্থা নেই। দোলনচাঁপা সংগীতাঙ্গন, উদীচী, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, পঞ্চভাস্কর, বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, লালন-বাউল একাডেমি, রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ, আবোল-তাবোল, শিশু একাডেমির কার্যক্রম ধীরলয়ে চলছে।

 

ভালো অডিটোরিয়াম নেই, অ্যাক্রোবেটিক সেন্টার সংস্কার

রাজবাড়ী সদরের শ্রীপুরে দেশের বৃহৎ সাংস্কৃতিক চর্চা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হলেও সেটি আজ বন্ধ। তৈরির প্রথম দু-একবার বড় আয়োজনে সংস্কৃতি সম্মেলন হলেও এটি এখন রূপান্তরিত অ্যাক্রোবেটিক সেন্টারে। কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম জানালেন, ‘এটি সংস্কারের কাজ চলছে। আর ছোট্ট একটি হলরুমে অ্যাক্রোবেটিক রিহার্সেল চলে’। নাট্যকর্মী-সার্কাস শিল্পী সঞ্জয়ের কাছ থেকে জানা যায়, ঢাকা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নিয়মিত প্রদর্শনী হয় অ্যাক্রোবেটিকের। সামনে দেশব্যাপী অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন মানুষের অভিযোগ, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কেন একটি অডিটোরিয়াম তৈরি হয়নি? সবার সদিচ্ছা থাকলে টাউন হলের পাশেই কিন্তু অডিটোরিয়াম হতে পারত। অন্যদিকে শিল্পকলায় এখনো বেশি হল ভাড়া দিয়ে ভাঙা চেয়ার, ভাঙাচোরা দুর্বল চিনচিনে সাউন্ড সিস্টেম দিয়ে অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের।

 

সচল নতুন কিছু সংগঠন সিনেমা হল এখন মৃতপ্রায়

রাজবাড়ীসহ উপজেলার প্রায় সিনেমা হলই এখন বন্ধ। অন্যদিকে রাজবাড়ী হয়ে পড়ছে সংগঠননির্ভর। আবার একজনই অনেক সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য। নতুন করে হচ্ছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। সম্প্রতি তৈরি হয়েছে রাজবাড়ী সোসিও কালচারাল ফোরাম।

সর্বশেষ খবর