বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানুষের ভালোবাসায় আমি সিক্ত

আলী আফতাব

মানুষের ভালোবাসায় আমি সিক্ত

গল্পটা স্বাধীনতার আগের। সে সময় ঢাকার ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন একটি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। সব ঠিকঠাক থাকলেও গোলটা বাধে অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে। যে কণ্ঠশিল্পীর গান গাওয়ার কথা, তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আসতে পারবেন না। অকস্মাৎ এমন খবরে আয়োজকদের তো মাথায় হাত! হলভর্তি দর্শক অথচ শিল্পী আসবে না! এ যাত্রায় বুঝি আর রক্ষা নেই! এমন পরিস্থিতির কবল থেকে রক্ষা পেতেই সে সময় অসুস্থ কণ্ঠশিল্পীর ছোট বোনকে ঠেলে দেওয়া হয় মঞ্চে; কিন্তু এ তো ছয় বছরের এক বাচ্চা! ওর চেয়ে তো তানপুরাই বড়। আয়োজকদের দুশ্চিন্তা যায় না। মেয়েটি ততক্ষণে তানপুরায় হাত রেখে কণ্ঠে মেলে ধরেছে ক্ল্যাসিক্যাল রাগ। মুহূর্তেই দর্শক সারিতে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা। অনুষ্ঠানের পুরোটা সময়ই ছোট্ট মেয়েটির কণ্ঠের জাদু সবাইকে যেন মোহাচ্ছন্ন করে রাখল। গান শেষ হতেই তুমুল করতালি আর অ্যাওয়ার্ড ও ক্যাশপ্রাইজে ভরে গেল ছোট্ট মেয়েটির দুটি হাত। সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটিই আজকের উপমহাদেশ কাঁপানো কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। কণ্ঠ দিয়ে যিনি শাসন করেছেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়, একটি নয় দুটি নয় তিন তিনটি ভূখন্ড! আজ উপমহাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী, সুরকার, বাংলাদেশের গর্ব রুনা লায়লার জন্মদিন।  জন্মদিনটি এবার তাঁর ঢাকায়ই কাটছে। জন্মদিনসহ আরও নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে আপনাকে জন্মদিনের  অনেক অনেক শুভেচ্ছা। 

ধন্যবাদ বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। আগামীর পথচলা আরও সুন্দর হোক, আরও পাঠকনন্দিত হোক।

 

জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

না, না। এই করোনার মধ্যে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। বাসায়ই থাকব। বাসায়ই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটবে। এই আমার আনন্দ। জন্মদিনে আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন আমি, আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুস্থ থাকি, ভালো থাকি। আমিও সবার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন সবাইকে সুস্থ রাখেন, নিরাপদে রাখেন।

 

জন্মদিন উপলক্ষে কোনো টিভি অনুষ্ঠানে থাকছেন এবার?

হ্যাঁ, মাছরাঙা টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে থাকছি। ‘রাঙা সকাল’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে আজ সকাল ৭টায়।  

 

করোনা মহামারীর মধ্যে সময় কাটছে কীভাবে?

করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছর ধরে খুব বেশি জরুরি কাজের বাইরে আমি একদমই বাসা থেকে বের হইনি। দুবার বের হয়েছিলাম কভিড-১৯-এর টিকা দেওয়ার জন্য। আরেকবার আরেকটি জরুরি কাজে বের হয়েছিলাম। এ ছাড়া দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করার জন্য বের হয়েছিলাম। এ ছাড়া আর বের হইনি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে আমার বাইরে যাওয়ার চেয়ে ঘরে থাকাটাই বেশি নিরাপদ। যে কারণে বাসায়ই ছিলাম। তবে মাঝে আলমগীর সাহেবের করোনা হওয়ায় একটু উদ্বিগ্ন ছিলাম। আল্লাহর রহমতে এখন তিনি বেশ ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

 

ঘরে বসেই কেমন করে কাটছে সময়টা?

ঘরে বসে আসলে নানা ধরনের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। কখনো গানের সুর করি, কখনো গান শুনি, টিভি দেখি, বই পড়ি। সিনেমা দেখারও অভ্যাস রয়েছে আমাদের দুজনেরই। মাঝে মাঝে আমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলি, এটা তো আসলে সেভাবে বলার কিছু নেই।

 

এ প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশে আপনার বিশেষ কিছু বলার আছে কী?

সত্যি বলতে কী আমাদের দেশে কিন্তু মেধাবী অনেক শিল্পী আছে। কিন্তু তাদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে না বলেই তাদের মেধার বিকাশ ঘটছে না। তারপরও কেউ কেউ আছে নিজেদের মেধা বিকাশের জন্য নিজের মতো করেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে আমি বিশ্বাস করি যেসব মেধাবী শিল্পী আছে তারা ভালো সুযোগ পেলে নিজেদের মেধা প্রকাশ করতে পারবে। একজন ভালো ইনভেস্টর প্রয়োজন। আবার এটাও সত্যি যে, এ প্রজন্মের শিল্পীদের মৌলিক গানের খুব অভাব। যে কারণে তাদের নির্দিষ্ট কয়েকটি গানের বাইরে আমাদের গানগুলোই সাধারণত গেয়ে থাকে। এটা খারাপ বলছি না আমি। কিন্তু তারপরও নিজেদের মৌলিক গানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নিজেদের যথাযথভাবে তৈরি করেই মৌলিক গানের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

 

যে অবস্থানে আপনি আছেন, সেখান থেকে আপনার কাছেও হয়তো অনেকের শেখার আগ্রহ থাকতে পারে?

আমি রুনা লায়লা, আমি একজন গায়িকা। এর বাইরে আমি কিছুদিন আগে থেকে সুর করছি। সুরকার হিসেবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছি। দেশের অনেক শিল্পী যেমন আমার সুরে গান গেয়েছেন ঠিক তেমনি দেশের বাইরেরও অনেক প্রথিতযশা শিল্পী আমার সুরে গান গেয়েছেন।

আমি এখনো গান শেখার চেষ্টা করি। কোনো ওস্তাদ বা প-িত পর্যায়ের আমি কেউ নই যে, কোনো প্রতিষ্ঠান করে আমি গান শেখাব। বরং এটা হতে পারে, সরকারি পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ নিয়ে কোনো গানের প্রতিষ্ঠান করা হলে তার সঙ্গে আমি কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকতে পারি।

 

এ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে আপনার দৃষ্টিতে কারা ভালো করছে?

বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ইউসুফ, ইমরান, ন্যান্সি, কণা, লুইপা, হৈমন্তী, ঝিলিক, কোনাল ভালো করছে। তারা সত্যিই খুব ভালো গায়। নিজেদের প্রতি যত্নশীল হলে তারা আরও ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস। এ প্রজন্মের যারা সুর করছে তাদের সুর করা অনেকের গানই আমার শোনা হয় না। তবে বাপ্পা মজুমদার খুব ভালো করছে। তার সুর আমাকে মুগ্ধ করে। যারা ভালো করছে অর্থাৎ আগেই বলেছি আমি তাদের নাম, তাদের নিয়েই কাজ করতে চাই। আগামীতে আরও নতুন কিছু প্রজেক্ট আছে। হয়তো যাদের নাম বলেছি তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকবে।

 

সংগীতকে ঘিরে আপনার ভিতর কোনো অপূর্ণতা?

সংগীত জগৎকে ঘিরে আমার মাঝে কোনো অপূর্ণতাই নেই। এক জীবনে আল্লাহর অশেষ রহমতে সত্যি অনেক কিছুই পেয়েছি আমি। মনেপ্রাণে মানুষের ভালোবাসা, দোয়ায় আমি পরিপূর্ণ। এখানে আমার অপূর্ণ কিছু নেই। আমি মনে করি এখন আমার আসলে দেওয়ার সময়। যতদিন বাঁচি আমাদের দেশের সংগীতাঙ্গনকে ভালো কিছু দিয়ে যেতে চাই।

 

একবার তো সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। আর কখনো কী অভিনয় করার সম্ভাবনা রয়েছে?

না, না। আর অভিনয় করা সম্ভব নয়। তবে সুর করার ইচ্ছা আছে। অনেক ভালো ভালো কিছু সুর সৃষ্টি করে যেতে চাই।  আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন, ভালো রাখেন এই দোয়া চাই।

সর্বশেষ খবর