শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এবার শীতেও উৎসবে ভাটা

‘করোনার কারণে আয়োজনটি আমরা করছি না। এটা তো শুধু আমাদের ওপর নির্ভর করে না, অন্য অনেক বিষয় থাকে। এ বছর ফোক ফেস্ট হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত।’

এবার শীতেও উৎসবে ভাটা

শীতেও তেমন করে নেই কোনো উৎসব-আয়োজন। গানের আসর, কনসার্ট, নৃত্যসহ অন্যান্য আয়োজন হচ্ছে না বিনোদনপ্রেমী মানুষের জন্য। যদিও ফেরার প্রস্তুতিতে সবাই।  লিখেছেন - পান্থ আফজাল

 

এবারও হচ্ছে না ঢাকা ফোক ফেস্ট

করোনার কারণে চলতি বছরের ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট আয়োজনটি স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠান মিডিয়া কম লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার অজয় কুমার কুন্ডু বলেন, ‘করোনার কারণে আয়োজনটি আমরা করছি না। এটা তো শুধু আমাদের ওপর নির্ভর করে না, অন্য অনেক বিষয় থাকে। এ বছর ফোক ফেস্ট হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত।’ গত বছরও করোনাভাইরাসের কারণে আয়োজনটি স্থগিত করা হয়। সবশেষ ২০১৯ সালে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে লোকসংগীতের সুরের মূর্ছনায় মেতেছিলেন দর্শক। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো পাঁচটি দেশের শতাধিক শিল্পী নিয়ে আয়োজিত হয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট।

 

বন্ধ উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব

এর আগে প্রতি বছর আয়োজন হতো উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে উৎসবটি বন্ধ। আগে আর্মি স্টেডিয়ামে বসত বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। যেটি ছিল সংগীতপ্রেমীদের মহামিলন। তবে মাঝের কয়েকটা বছর সরকারের অনুমতি না পেয়ে এই প্রাণের উৎসবটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে অনুমতি পেলে বেশ বড় পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবটির। বর্তমানে ব্যান্ড ফেস্ট, জ্যাজ অ্যান্ড ব্লুজ ফেস্টসহ বিভিন্ন গানের উৎসবও হচ্ছে না।

 

স্বল্প পরিসরে কনসার্ট

আগে শীতের আগমনীতে রাখঢাক পড়ে যেত কনসার্ট আয়োজনের। পাড়া-মহল্লা, স্থানীয় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে কমলাপুর-আর্মি স্টেডিয়াম মেতে থাকত বিভিন্ন ব্যান্ড দলের ধামাকা পারফরমেন্সে। ব্যান্ড দল ছাড়াও প্রিয় শিল্পীদের একক আয়োজনে মুখর হতো শীতের সন্ধ্যা। এখন সেই অবস্থা অলীক স্বপ্ন মাত্র। যদিও করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক এখন। কোনো কোনো দল স্বল্প পরিসরে ইনডোর বা ওপেন এয়ার কনসার্টে অংশ নিতে শুরু করেছে। তবে জনপ্রিয় ব্যান্ড দলগুলো সে কাতারে নেই।

 

বন্ধ নৃত্য উৎসব

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব ‘ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল-২০১৯’। চার দিনের নাচের উৎসব বসেছিল কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের বছরের মতো এ বছরও নৃত্যের এই মহাউৎসবটি বন্ধ রয়েছে। এ বছরও সমুদ্রের মুহুর্মুহু ঢেউ আর দেশ-বিদেশের অগণিত নৃত্যশিল্পীর নূপুরের ঝংকারে আন্দোলিত হবে না আর সমুদ্রসৈকত। এদিকে করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিকতার দরুণ দেশের নৃত্যশিল্পী ও তাঁদের প্রতিষ্ঠান তেমন করে সরব নেই। তবে আস্তে আস্তে নতুন উদ্যমে ও নবপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছেন নৃত্যশিল্পী ও বিভিন্ন নৃত্যচর্চা কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সাধনা, নৃত্যযোগ, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার, রেওয়াজ পারফরমার স্কুল, ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যশিল্পী সংস্থা, নৃত্যাঞ্চলসহ বেশ কিছু নৃত্যচর্চা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতি নিচ্ছে নৃত্য আয়োজনের।

 

নৃত্য নিয়ে কাজল ইব্রাহিমের উদ্যোগ

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০১৯ সালে শিবলী-নীপার নৃত্যাঞ্চল প্রযোজিত ‘মীরা’ নৃত্যনাট্যে নাম ভূমিকায় অভিনয়ে মঞ্চে এসে আলোড়ন তুলেছিলেন দেশের প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী কাজল ইব্রাহিম। নৃত্যজগতে একসময় যিনি কাজল মাহমুদ নামেই পরিচিত ছিলেন। ২৫ বছর ধরে নাচের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নৃত্যশিল্পী ৪ তারিখ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে হাজির হচ্ছেন ভিন্ন পরিচয়ে। তিনি ‘নৃত্যে গাঁথা কথামালা’ বই নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন। এ অভাবনীয় উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিও (৭-৮)টি নাচ করে ফেসবুকে প্রকাশ করার পর ভাবলাম নাচ নিয়ে নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সে ভাবনা থেকেই আমার ৫ বছর থেকে এই সময়ের নাচের যত স্মৃতি রয়েছে সেগুলোর ৮০টি পেপার কাটিং দিয়ে সাজিয়েছি ‘নৃত্যে গাঁথা কথামালা’। ১৭০টি পেপার কাটিং থেকে বেছে ৮০টি নিয়ে করেছি। আসলে প্রজন্মের কাছে আমাদের রেখে যাওয়ার অনেক কিছুই রয়েছে। সে ভাবনা থেকেই এ উদ্যোগ নেওয়া’।

 

নতুন নাটক মঞ্চায়ন

নাট্যাঙ্গন কিন্তু জমে উঠেছে। মঞ্চকর্মীরা দারুণ ব্যস্ত নাটকের মহড়া ও প্রদর্শনী নিয়ে। ৪ ও ৫ তারিখে শিল্পকলার উদ্যোগে মাসুম রেজার রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হবে ‘জনকের অনন্তযাত্রা’। জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হতে যাওয়া নাটকে অভিনয়ে আজিজুল হাকিম, মুনিরা মেমী, রামিজ রাজু, সাইকা, মিলন, মাইন হাসান প্রমুখ। 

 

পিছিয়ে গেলেও প্রস্তুতিতে আবৃত্তি উৎসব

নভেম্বরের ১১ তারিখ থেকে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে দেশব্যাপী আবৃত্তি উৎসব হওয়ার কথা ছিল। তবে তা কিছু কারণে পিছিয়ে যায়। ডিসেম্বরে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের মতো আবৃত্তিচর্চা হয়ে পড়ছে অনলাইননির্ভর। এখন দলের আবৃত্তিচর্চা, প্রতিযোগিতা, সাংগঠনিক মিটিং, প্রশিক্ষণ ও উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে। ফিজিক্যালি একত্রিত না হতে পারলেও দেশের ছোট-বড় আবৃত্তি দলগুলো এখন আবৃত্তিচর্চা, মিটিং, প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা-উৎসব করছে অনলাইনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর