রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ নিয়ে চার ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ নিয়ে চার ছবি

লাল মোরগের ঝুঁটি

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে বেশ কিছু চলচ্চিত্র। এর মধ্যে চারটি চলচ্চিত্রের কোনোটি দেশের, আবার কোনোটি মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্পকে আবর্তিত হয়ে নির্মিত হয়েছে। এসব ছবির মধ্যে রয়েছে, ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’, ‘কালবেলা’, ‘রাতজাগা ফুল’ ও ‘ছিটমহল’।

আগামী ১০ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। ২০১৪-১৫ সালের সরকারি অনুদানে তৈরি এই সিনেমার কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন নূরুল আলম আতিক। পাণ্ডুলিপি কারখানা প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে পরিচালক নূরুল আলম আতিক জানালেন, ‘১৯৭১ সাল। বাংলাদেশ এক বন্দীশালা। বিহারি অধ্যুষিত ছোট এক শহর। সেখানে ব্রিটিশদের গড়া বিমানবন্দর সচল করতে সেনাবাহিনী আসে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে জনপদে ঘটে যাওয়া কাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে “লাল মোরগের ঝুঁটি”। আমাদের সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধ একরৈখিকভাবে উপস্থাপিত হয়, এর বাইরেও অসংখ্য প্রেক্ষাপট রয়েছে, “লাল মোরগের ঝুঁটি” তেমনই এক প্রচেষ্টা।’ ছবিটির প্রযোজক মাতিয়া বানু শুকু বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছরে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’কে বলব সিনেমার মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের ৫০ বছর

উদযাপনে ছবিটি আমাদের নিবেদন।” ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’তে অভিনয় করেছেন লায়লা হাসান, আহমেদ রুবেল, আশনা হাবিব ভাবনা, দিলরুবা দোয়েল, স্বাগতা, অশোক ব্যাপারী, আশীষ খন্দকার, জয়রাজ, শিল্পী সরকার অপু, ইলোরা গওহর, জ্যোতিকা জ্যোতি, শাহজাহান সম্রাট, জোবায়ের, দীপক সুমন প্রমুখ।

একই দিন মুক্তি পাবে সাইদুল আনাম টুটুল পরিচালিত ‘কালবেলা’। মুক্তিযুদ্ধের দহনকালের ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কালবেলা’র চিত্র ধারণের একেবারে শেষ পর্যায় এসে না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। এটাই ছিল তার জীবনের শেষকর্ম। চলচ্চিত্র কালবেলা মুক্তিযুদ্ধের দারুণ সময়ের গল্প। যে গল্পের খানিকটা শুনিয়েছিলেন নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই চলচ্চিত্র মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নারীদের দহনকালের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা বই ‘নারীর ৭১’ ও যুদ্ধ-পরবর্তী কথ্য কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত। তৎকালীন সদ্য পাস করা সানজিদা নামের একজন শিক্ষিত নারীর জীবনের ছায়া অবলম্বনের ঘটনা। সানজিদা মাস্টার্স পাস করা একটা ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করে। ছেলেটা খুলনা জুটমিলে অফিসার পদে চাকরিতে যোগ দেয়। বিয়ের দুই-আড়াই মাসের মাথায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারা অন্য অফিসারের সঙ্গে সানজিদার স্বামীকে গ্রেফতার করে। সানজিদা পাগলের মতো স্বামীকে খুঁজতে থাকে। শেষে স্বামীর পরিহিত গায়ের জামা দেখে তাকে শনাক্ত করে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, স্বামীর মৃত্যু এর মধ্যে সানজিদা অন্তঃসত্ত্বা। প্রসবকাল খুব কাছাকাছি। যুদ্ধ শেষে সন্তানসহ সানজিদা স্বামীর বাড়িতে যায়; শ্বশুরবাড়িতে তাদের অনানুষ্ঠানিক বিয়ে, পাকসেনাদের হাত থেকে নিজের সতীত্ব রক্ষা এবং সানজিদার কোলের সন্তানের যথার্থ পিতৃ পরিচয়সহ আরও অনেক নির্দয় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। এ যেন যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকেও ভয়ংকর। এমনি হৃদয়স্পর্শী গল্প নিয়ে এগোতে থাকে চলচ্চিত্র ‘কালবেলা’। নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিণী অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম চলচ্চিত্রের বাকি কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। এর প্রধান দুটি চরিত্রে রয়েছেন তাহমিনা অথৈ ও শিশির আহমেদ। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাসুম বাশার, মিলি বাশার, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, লুৎফর রহমান জর্জসহ অনেকে।

এবারই প্রথম ‘রাতজাগা ফুল’ নামে একটি দেশের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালনা করলেন অভিনেতা মীর সাব্বির। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত মীর সাব্বিরের এই চলচ্চিত্রটি ৩১ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। পরিচালনার পাশাপাশি মীর সাব্বির এতে অভিনয়ও করেছেন। আরও অভিনয় করেছেন চুমকি, তানভীর, ঐশী, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ। মীর সাব্বির বললেন নামটা রূপক অর্থে ব্যবহার করেছি। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একটা অন্ধকার থাকে। সেই অন্ধকারের পর একটা আলো আসে। বোঝাতে চেয়েছি আলো এবং অন্ধকারের মাঝখানে মানুষ বিচরণ করে সেখান থেকে আলোর বিচ্ছুরণটাকে ধরে নিই বিজয়। আলো এবং অন্ধকারের দুটো জিনিস বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, প্রেম-ভালোবাসা, দেশ সবকিছুকে রাতজাগা ফুল এই তিন শব্দের মধ্যে আনার চেষ্টা করেছি। বাংলার মাটি, প্রকৃতি, গান, প্রেম চারপাশের সবকিছু মিলিয়ে রাত জাগা ফুলে বাংলাদেশের ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।

ছিটমহল

বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলের নাগরিকদের দুঃখ-দুর্দশা, জীবনপ্রবাহের টানাপড়েন নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ছিটমহল’। এতে অন্যতম অভিনেতা ও সহপ্রযোজক শিমুল খান। ‘ছিটমহল’ ছবিটির পরিচালক এইচ আর হাবিব। পাশাপাশি ছবিটির কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক নিজেই। ছবির প্রধান চরিত্রের অন্য অভিনয় শিল্পীরা হলেন- মৌসুমী হামিদ, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া ও আরমান পারভেজ মুরাদ।

‘ছিটমহল’ ছবি প্রসঙ্গে শিমুল খান বললেন, ‘এটি মূলত একটি দেশপ্রেমের ছবি। ছিটমহলে বসবাসকারী একটি হিন্দু পরিবারের জীবনপ্রবাহের টানাপড়েন নিয়ে এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে।  ছবিটিতে আমার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন মৌসুমী হামিদ। আর আমার বিধবা বোনের  চরিত্রটি করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ৩১ ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর