সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সিনেমায় রোগের পূর্বাভাস

সিনেমায় রোগের পূর্বাভাস

একেকটি সিনেমা যেন একেকটি রোগের পূর্বাভাস। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে একটি গ্রিক নাম করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ নিয়ে। যে নাম কিছু দিন আগেও অজানা ছিল সে নামেই রয়েছে বেশ কিছু সিনেমা।  অজানা ভাইরাস নিয়ে নির্মিত কিছু সিনেমা নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল

   

ওমিক্রন

১৯৬৩ সালে নির্মিত হয়েছে ইতালীয় সিনেমা ‘ওমিক্রন’। সম্প্রতি সিনেমাটির পোস্টার সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। এতে লেখা ‘দ্য ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট’। তবে সিনেমার মূল নাম ‘ওমিক্রন’। যদিও ইতালির এই সিনেমার গল্পে নেই কোনো ভাইরাসের কথা। এর গল্পে রয়েছে ভিনগ্রহের এক প্রাণী পৃথিবীতে এসে এক ব্যক্তির মৃতদেহ কবজা করে। মানবদেহে ঢুকে সে পৃথিবীবাসীর আদব-কায়দা শিখতে থাকে। ভবিষ্যতে পৃথিবী আক্রমণ করলে তারা যাতে যুদ্ধে জিততে পারে, এ ছিল তারই প্রস্তুতি। পৃথিবীর রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ক্রমে বুঝতে পারে ভিনগ্রহী। এরপর নানা কাহিনি নিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমাটির গল্প। করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নাম ছড়িয়ে পড়তেই ইউটিউবে ভেসে উঠেছে সাদাকালো যুগের ‘ওমিক্রন’ সিনেমাটি। মজা করে আরেকটি সিনেমার পোস্টারে নাম বদলে দেওয়া হয়েছে ‘দ্য ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট’। সেই পোস্টারটি ১৯৭৬ সালের একটি স্প্যানিশ সিনেমার। পরে জানাজানি হয় পোস্টারটি ভুয়া। ৭০-এর দশকের বেশ কিছু সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রের পোস্টার ফটোশপ করে তৈরি করা সেটি। 

 

কন্টেজিয়ন

হলিউডের নামকরা নির্মাতা স্টিভেন সোডারবার্গের সিনেমা ‘কন্টেজিয়ন’-এর সঙ্গে চীনে রহস্যময় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অদ্ভুতভাবে মিলে যায়! ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১১ সালে নির্মিত সিনেমাটি। সিনেমাটিতে ভাইরাসের আতঙ্কজনক সংক্রমণের ঘটনা ফুটে উঠেছে। কভিড-১৯ ভাইরাস বিস্তারের পর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায় এক দশক আগের এই চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্রটির গল্প আর বাস্তবতার সঙ্গে অবিশ্বাস্য মিল দেখা গেছে। যদিও বেশ কয়েকজন তারকা নিয়ে চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছিল, যাদের মধ্যে রয়েছেন ম্যাট ডেমন, গিনেথ প্যালট্রো, জুডি ল, কেট উইনস্লেট এবং মাইকেল ডগলাস।

 

আই অ্যাম লিজেন্ড

হলিউড সুপারস্টার উইল স্মিথ অভিনীত ২০০৭ সালের সিনেমা ‘আই অ্যাম লিজেন্ড’। সিনেমায় ভাইরোলজিস্টের চরিত্রে অভিনয় করেন স্মিথ। সেখানে দেখানো হয় বেশ কয়েক বছর আগে প্লেগে আক্রান্ত নিউইয়র্কের বেশির ভাগ মানুষ মারা যায়, বাকিরা পরিণত হয় দানবে। একমাত্র বেঁচে থাকা মানুষ স্মিথ এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে থাকে।

 

রেসিডেন্ট ইভিল সিরিজ

২০০৪ সালে ‘রেসিডেন্ট ইভিল : অ্যাপোক্লিপ্স’ মুক্তি পায়। এরপর ২০০৭-এ ‘রেসিডেন্ট ইভিল : এক্সটিংশন’ ও ২০১০-এ ‘রেসিডেন্ট ইভিল : আফটার লাইফ’, ২০১২ সালে ‘রেসিডেন্ট ইভিল : রিট্রিবিউশন’, ২০১৬ সালে ‘রেসিডেন্ট ইভিল : দ্য ফাইনাল চ্যাপ্টার’ এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে মুক্তি পায় ‘রেসিডেন্ট ইভিল : ওয়েলকাম টু র‌্যাকন সিটি’। মিলা জোভোভিচ অভিনীত এই সিনেমার সিরিজগুলোতে দেখানো হয় একটি বিশেষ চক্রের কারণে জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে কীভাবে জোম্বি হয়ে পড়ছে গোটা শহর।

 

ক্যারিয়ার্স

২০০৯ সালের সিনেমা ‘ক্যারিয়ার্স’-এ দেখানো হয় চার বন্ধু ভয়াবহ ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একপর্যায়ে তারা জানতে পারে, আসলে তারা নিজেরাই অন্য ভাইরাসের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

 

প্যানডামিক

ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে মহামারীতে মারা যাচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় এক ডাক্তার ও তাঁর দল ওই মহামারী থেকে যেসব মানুষ বেঁচে গেছে, তাদের খুঁজে বের করে। এমন কাহিনি ওঠে এসেছে ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘প্যানডামিক’-এ।

 

আউটব্রেক

১৯৯৫ সালে জার্মান পরিচালক উলফগ্যাং পিটারসনের ‘আউটব্রেক’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। ডাস্টিন হফম্যান, রেনে রুশো, মরগান ফ্রিম্যান, কিউবা গুডিং-এর মতো জাঁদরেল সব অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলেন এই সিনেমায়।  আফ্রিকার দেশ জায়ারে অনেকটা ইবোলার মতো প্রাণঘাতী কল্পিত এক ভাইরাস ‘মোতাবা’ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সে ভাইরাস আমেরিকার ছোট্ট এক শহরে সংক্রমিত হয়।

 

ওয়ার্ল্ড ওয়ার জেড

এক ধরনের ভাইরাসের কারণে জোম্বি অর্থাৎ নরঘাতক হয়ে ওঠার কাহিনি দেখানো হয় ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ার জেড’ সিনেমায়। ব্র্যাড পিট সিনেমাটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও ছিলেন।

 

টোয়েন্টিএইট ডেজ লেটার

২০০২ সালে ড্যানি বয়েল পরিচালিত সিনেমাটিয় দেখানো হয় অসাবধানতাবশত উন্মুক্ত হওয়া একটি ভাইরাস কীভাবে পুরো সভ্যতাকে ধ্বংস করতে শুরু করে। সিনেমাটি একটি মাইলফলক তৈরি করে। প্রশংসার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সাফল্যও পায়। সে কারণে ২০০৭ সালে এর সিকুয়েল ‘টোয়েন্টিএইট উইকস লেটার’ মুক্তি পায়।

 

ব্লাইন্ডনেস

২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে দেখানো হয় একটি সমাজে অন্ধত্ব কীভাবে মহামারী রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

 

ম্যাগি

ভাইরাসজনিত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার কাহিনি দেখানো হয় অ্যাকশন স্টার আর্নল্ড শোয়ের্জনিগার অভিনীত ২০১৫ সালের সিনেমা ‘ম্যাগি’তে। সিনেমায় এই নায়ককে আবেগতাড়িত, খুব ভিন্ন এক চরিত্রে দেখা গেছে।

 

ডুমস ডে

২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় ভবিষ্যতের স্কটল্যান্ডে এক ভয়াবহ ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা দেখানো হয়।

 

ভাইরাস নিয়ে আরও সিনেমা...

ডেথ কিউর, দ্য ডে আফটার টুমরো, টোয়েন্টি উইকস লেটার, দ্য হেপেনিং, টোয়েন্টি ডেজ লেটার, দ্য এনড্রর্মিডা স্ট্রেইন, কোয়ারেন্টাইন, দ্য লাস্ট ম্যান অন আর্থ, টুয়েলভস মানকিস, ডেথ ইন ভেনিস, ব্লাক ডেথ, দ্য মস্ক অব দ্য রেড ডেথ, ফ্লু, দ্য ক্যাসান্ডারা ক্রোসিং, ইনফেকশন, বার্ড বক্স, জম্বিল্যান্ড, চিলড্রেন টু মেন, ওয়ার্ম বডিস, ভাইরাস প্রভৃতি। বিভিন্ন রকমের রোগ ও ভাইরাস নিয়ে হলিউডের আদলে কোরিয়ান সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। জীবিত কিছু মানুষের চারপাশে জোম্বিদের অত্যাচার ও বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে তৈরি হয়েছে কোরিয়ান ফিল্ম ‘ট্রেন টু বুসান’। যেটি ২০১৬ সালে কানে প্রদর্শিতও হয়।

সর্বশেষ খবর