রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বলিউডে অকালমৃত্যু যত নায়িকার

বলিউডে অকালমৃত্যু যত নায়িকার

রংবেরঙের জৌলুসে ঠাসা বলিউড জগৎ। যুগ যুগ ধরে এই বলিউডি ঘরানায় নিজেকে মেলে ধরতে আসে কত শত পতঙ্গ। কেউ পায় নাম, যশ, খ্যাতি। আবার কারও ভাগ্যে স্থায়ী হয় বিস্মৃতি। তারার মতো জ্বলে উঠে আচমকাই খসে পড়ে যায় তাদের সব জৌলুস। তাদের নিয়ে আজকের এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন-            আলী আফতাব

 

শ্রীদেবী

পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারজয়ী এ বলিউড অভিনেত্রী বলতে গেলে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ননদের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পরিবারের সঙ্গে দুবাই গিয়েছিলেন। সেখানেই একটি হোটেলে বাথটাবের পানিতে ডুবে মারা যান তিনি।

 

দিব্যা ভারতী

মুম্বাইয়ে পাঁচতলায় নিজের অ্যাপার্টমেন্টের বেলকুনি থেকে পড়ে অকালে মারা যান দিব্যা ভারতী। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯। এই অল্প বয়সেই দিওয়ানা, ভিষ্মাত্মার মতো বেশ কিছু হিট ছবি দিয়েছিলেন তিনি। রূপের মাধুরীই দিব্যাকে শীর্ষে তুলেছিল। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল রাতে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হয় তার। অনেকেরই বিশ্বাস, দিব্যার মৃত্যুর পিছনে তার স্বামী সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার হাত আছে। শোলে অর শবনম সিনেমার সেটে মাত্র ১৮ বছর বয়সী এ নায়িকাকে বিয়ে করেছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সাজিদ।

 

মীনা কুমারী

বলিউডের রঙিন জগতে টানা ৩৩ বছর ধরে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন মীনা কুমারী। তার জীবনদীপ দ্রুত নিভে গিয়েছিল। ১৯৭২ সালে মুম্বাইয়ে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু হয় তার। ‘ট্র্যাজেডি কুইন’ খ্যাত এই অভিনেত্রীর মৃত্যু সম্পর্কে চিকিৎসকরা জানান, লিভার সিরোসিসে মৃত্যু হয়েছে তার। অতিরিক্ত মদপান থেকেই এ রোগ তিনি বাঁধিয়েছিলেন, মনে করেন অনেকে।

 

মধুবালা

২২ বছরের ক্যারিয়ারে বলিউডকে প্রায় ৭০টি সফল ছবি উপহার দিয়েছিলেন মধুবালা। মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই সাঙ্গ হয় তার ইহলীলা। হৃদযন্ত্রে ফুটো নিয়েই জন্ম নিয়েছিলেন মধুবালা। এই রোগের চিকিৎসা তখন ছিল না বললেই চলে। এই অসুখ নিয়েই বহু কষ্টে অসাধারণ অভিনয় প্রতিভা দেখিয়ে গেছেন তিনি। পরে রোগটির সঙ্গে যুক্ত হয় জন্ডিস। ১৯৬৯ সালের শুরুতে জন্ডিস হয়েছিল মধুবালার। সেই ধাক্কা আর সারেনি। সেই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি অকাল মৃত্যু হয় মধুবালার।

 

স্মিতা পাতিল

বলিউডের গ্ল্যামার দুনিয়ায় জ্বলে উঠেও অচিরেই নিভে গেছেন স্মিতা। ১৯৮৬ সালে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে চাইল্ড বার্থ কমপ্লিকেশনে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে স্মিতা পাতিলের বয়স হয়েছিল মাত্র ৩১ বছর। ছেলেকে জন্ম দেওয়ার পর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক বেঁচে ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর অনেক পরে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছিল। সে অভিযোগ নাকি তুলেছিলেন খোদ বাংলা চলচ্চিত্র জগতের দিকপাল পরিচালক মৃণাল সেন।

 

সিল্ক স্মিতা

আশি-নব্বই দশকে বলিউডের রগরগে অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম সিল্ক স্মিতা। মূলত নৃত্যশিল্পী হিসেবেই বড় পর্দায় সিল্কের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। মাত্র ৩৫ বছরেই জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সিল্ক। অবসাদগ্রস্ত হয়ে দিনের পর দিন মনের জ্বালা জুড়োতেন নেশায় ডুবে থেকে। অত্যধিক মদপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় নিজের বাড়িতেই। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলে, তার শরীরে প্রচুর অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছিল।

 

গীতা বালি

পঞ্চাশ দশকে বলিউডে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন গীতা বালি। তার ঝুলিতে রয়েছে ‘বড়ি বেহেন’, ‘নিশানা’, ‘বাজি’, ‘সোহাগ রাত’, ‘কফি হাউস’ আর ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র মতো ছবি। শাম্মি কাপুরকে বিয়ে করে কাপুর পরিবারের সদস্য হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গীতা বালির জীবনও ছিল একেবারে ক্ষণস্থায়ী। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তার।

 

জিয়া খান

২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি হিন্দি ছবিতে দেখা গেছে জিয়া খানকে। বলিউডে অভিনয়ের জন্য তিনি যত না জনপ্রিয় ছিলেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জনপ্রিয়তা পান তিনি মারা যাওয়ার পর। কারণ তার মৃত্যুও রহস্যের ঘেরাটোপে বাঁধা। ২০১৩ সালের ৩ জুন মুম্বাইয়ে নিজের বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় জিয়া খানের দেহ। তার বয়স হয়েছিল মাত্র ২৫। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

 

ভিমি

সত্তর দশকে বলিউডের চেনা মুখ ছিলেন ভিমি। বেশ কিছু ছবিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু একটা সময় তার একের পর এক ছবি মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে বক্সঅফিসে। ফলে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এই পাঞ্জাবি অভিনেত্রী। কলকাতায় একটি ছোটখাটো ব্যবসাও শুরু করেছিলেন, তবে দাঁড় করাতে পারেননি। নেশার মাঝেই ভিমি খুঁজতে চেয়েছিলেন মুক্তি। সেই নেশাই তাকে মুক্তি দিয়েছে। ১৯৭৭ সালে ৩৪ বছর বয়সে লিভারের জটিল রোগে মৃত্যু হয় তার। অতিরিক্ত মদপানের ফলেই এই পরিণতি, জানান চিকিৎসকরা।

 

পারভিন ববি

সত্তর দশকে বলিউডের ফ্যাশন আইকন ছিলেন পারভিন ববি। গ্ল্যামার দুনিয়ায় তার দাপট ছিল দেখার মতো। ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘কালা পাথর’, ‘নমক হালাল’-এর মতো ছবিতে অভিনয়ে মাত করেছিলেন ববি।

বিয়ে না করলেও হিন্দি ফিল্ম দুনিয়ায় একাধিক তারকার সঙ্গে পারভিন ববির সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যায়। শেষ জীবনে তুমুল ডিপ্রেশনে ভুগেছেন তিনি। অবসাদই তার প্রাণ কেড়েছে অকালে। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মাল্টিপল অর্গ্যান ফেলিওরে মৃত্যু হয় ববির।

সর্বশেষ খবর