সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নগরীতে কনসার্টের সুবাতাস

নগরীতে কনসার্টের সুবাতাস

দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে ফের মুখর হচ্ছে সংগীতাঙ্গন। কনসার্টে ফিরছেন শিল্পীরা। নগরে-বন্দরে কনসার্টের সুবাতাস বইছে। ইতিমধ্যেই দেশের ব্যান্ড দলসহ সংগীতশিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আয়োজিত বিভিন্ন কনসার্টে। এসব নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

একসময় শীতের আগমনীতে রাখঢাক পড়ে যেত কনসার্ট আয়োজনের। পাড়া-মহল্লা, স্থানীয় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে কমলাপুর-আর্মি স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন ভেন্যু মেতে উঠত বিভিন্ন ব্যান্ড দলের ধামাকা পারফরমেন্সে। ব্যান্ড দল ছাড়াও প্রিয় শিল্পীদের একক আয়োজনে মুখর হতো শীতের সন্ধ্যা। এখন সেই অবস্থা অলীক স্বপ্ন মাত্র! অন্যদিকে মহামারীর কারণে কনসার্টের দুটি মৌসুম ঘরবন্দী কেটেছে শিল্পী ও সংগীতপ্রেমীদের। তবে এখন করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। তাই দেশের জনপ্রিয়-আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড দলসহ গানের শিল্পীরা পুরোদমে ইনডোর-ওপেন এয়ার কনসার্টে অংশ নিতে শুরু করেছেন। শীত আসতে না আসতেই পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়ে গেছে কনসার্ট আয়োজনের। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আয়োজন করছে কনসার্টের। ফলে এই মৌসুমে কনসার্ট-স্টেজ শোর সংখ্যা বেড়ে চলছে ব্যান্ড দল ও অন্যান্য জনপ্রিয় শিল্পীদের। শীত মানেই কনসার্ট; আর কনসার্ট মানেই ব্যান্ড! সে রেশ ধরেই ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বড়সড় রক ফেস্ট। এতে অংশ নেবে দেশের অন্যতম ১৫টি ব্যান্ড দল। কনসার্টে অংশ নেবে ব্যান্ড দল ওয়ারফেজ, অর্থহীন, অ্যাভয়েডরাফা, ক্রিপটিকফেট, ইনডালো, শুভযাত্রা,  কনক্লুশন, সার্পনেল ম্যাথোড, ব্রহ্মপুত্র, দ্য ট্রি, সাবকনসাস, আফটারম্যাথ, থ্র্যাস, আরেকটা রক ব্যান্ড ও ক্যালিপসো। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির বসুন্ধরার নবরাত্রী হলে এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর রাজধানীবাসীকে মাতাতে এবং ২০২১ সালকে বিদায় জানাতে আয়োজিত হচ্ছে এই ‘ঢাকা রক ফেস্ট ২.০’।

এদিকে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল চিরকুটও জানাল সুখবর। চিরকুটের ভোকাল, গীতিকার ও সুরকার শারমিন সুলতানা সুমি জানান, ‘এটা আনন্দের বিষয় যে, সংগীতাঙ্গনে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। চিরকুট এই ডিসেম্বরেই সাতটি কনসার্ট করেছে। সামনে আরও রয়েছে পাঁচটি কনসার্ট। আজ সিলেট স্টেডিয়ামে কনসার্টে অংশ নেবে চিরকুট। ২২ তারিখে বুটেক্স ও ২৫ তারিখে কলাবাগান মাঠসহ এ মাসের ২৯, ৩০ ও ৩১ তারিখেও রয়েছে কনসার্ট।’

শিরোনামহীনের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যান্ড প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এটা আনন্দের যে, সব ব্যান্ড দল ও শিল্পীরা আবারও নতুন উদ্যমে ফিরছে। এই ডিসেম্বরে তো প্রতিদিনই আমরা কনসার্ট করেছি। ডিসেম্বরের বাকি দিনগুলোসহ সামনের বছরের জানুয়ারির অর্ধেক পর্যন্ত ব্যস্ত থাকবে শিরোনামহীন ব্যান্ড। দম ফেলার ফুরসত নেই! ‘বিজয় কনসার্ট-২০২১’-এর জন্য ঢাকায় কনসার্ট করে আবার চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে উড়াল দিয়েছি। বিশাল আয়োজনে কনসার্ট হয়েছে। এটা সত্যিই অসম্ভব অভিজ্ঞতা। সবাইকে পাশে পাচ্ছি, সবাই সহযোগিতা করছে।’ অন্যদিকে জলের গানের পারকাশনিস্ট ও জলপুতুল পাপেটের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল জার্নাল জানান, ‘এই সময়ে ব্যস্ততা বেড়েছে ‘জলের গান’ দলের। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে  মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১২ ডিসেম্বর ‘সুবর্ণজয়ন্তী কনসার্ট’-এ সংগীত পরিবেশন করে জলের গান। ২৪ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের অনুষ্ঠানে অংশ নেবে জলের গান। এ ছাড়া আরও কিছু কনসার্ট রয়েছে অপেক্ষায়।’

সাধারণত শুষ্ক মৌসুমেই দেশে ওপেন এয়ার কনসার্টগুলোর আয়োজন করেন আয়োজকরা। ঋতুচক্রে নভেম্বর থেকেই শীতের আমেজ শুরু হয়। মাস ভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ অবধি মধ্যকার সময়কে কনসার্টের মৌসুম বলা হয়। সে ধারায় শীতকাল সামনে রেখে সংগীতশিল্পীদের মধ্যে চলছে কনসার্টের প্রস্তুতি। শীতকালে কনসার্ট বেশি হয় এটি সত্যি, তবে কনসার্ট নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকেন সংগীতশিল্পীরা। শীত কনসার্টের মৌসুম হওয়ায় এ মাধ্যমে শিল্পীদের ব্যস্ততা বাড়ছে। শিল্পীদের পাশাপাশি মিউজিশিয়ানদেরও ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে শিল্পীরা চান ওপেন এয়ার কনসার্ট বেশি বেশি হোক। তাঁদের মতে, দেশের প্রেক্ষাপটে শিল্পীরা ততক্ষণ স্বস্তি পাবে না যতক্ষণ ওপেন এয়ার কনসার্ট শুরু না হবে। কারণ, বেশির ভাগ শিল্পী-কলাকুশলী আসলে কনসার্টের ওপরই নির্ভরশীল। কিন্তু এখনো তেমন করে ওপেন কনসার্টের অনুমতি মিলছে না। স্বল্প পরিসরে হচ্ছে। ব্যান্ড দলের শিল্পীদের কাছে অন্যরকম জায়গা কনসার্ট। পাশাপাশি আয়েরও মাধ্যম। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল ‘ওপেন এয়ার কনসার্ট’। তবে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে কনসার্টের মৌসুম। ইতিমধ্যেই অনেক ব্যান্ড দল অংশ নিচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে আয়োজিত বিভিন্ন কনসার্টে। নগরবাউল জেমস ডিসেম্বরজুড়েই ব্যস্ত থাকবেন কনসার্ট নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মঞ্চে ওঠে জেমস সবাইকে মাতিয়ে তোলেন। এদিকে জেমস অংশ নিয়েছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আয়োজিত কনসার্টে। গুলশান ক্লাব, প্যারেড গ্রাউন্ডসহ বিজয় দিবসের একাধিক কনসার্টে তাঁকে পাওয়া যায়। বছরের শেষ দিনে জেমস থাকবেন চট্টগ্রামে। সেখানে র‌্যাডিসন ব্লুতে গাইবেন। গত মাসের ১২ তারিখে বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত ‘নভেম্বর রেইন’ কনসার্টে গানের তালে সুরের ছন্দে মঞ্চ মাতিয়েছেন নগর বাউল। কনসার্টে জেমস ছাড়াও ছিল আর্টসেল, ক্রিপটিক ফেইট, ব্ল্যাক, ভাইকিং, স্যাভাজেরি, প্লাসমিক নক এবং ফিউজ। দীর্ঘ বিরতির পর জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসও শুরু করেছে তাদের কনসার্ট যাত্রা। তবে মাইলস এবার কনসার্টে অংশ নেবে শাফিন আহমেদকে ছাড়াই। কিছুদিন আগে ঢাবিতে সহিংসতাবিরোধী কনসার্টে ১২টি ব্যান্ড দল- শিরোনামহীন, মেঘদল, সহজিয়া, শহরতলী, বাংলা ফাইভ, গানপোকা, কৃষ্ণপক্ষ, কাল, অবলিক, অসৃক, গানকবি, বুনোফুলসহ গান পরিবেশন করেন সংগীত তারকা জয় শাহরিয়ার, তুহিন কান্তি দাস, সাহস মোস্তাফিজ, লালন মাহমুদ প্রমুখ। গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘কফি কার্নিভ্যাল’-এ অংশ নেয় আর্টসেল, শিরোনামহীন, নেমেসিস, অ্যাভোয়েডরাফা, আরেকটা রক ব্যান্ড, সাভেজেরি ও এনকোর। এদিকে ১৭ ডিসেম্বর ‘কনসার্ট ফর মাইগ্রেন্টস’-এ গান করেন কুমার বিশ্বজিৎ, ফজলুর রহমান বাবু, শিরোনামহীন, লুইপা, আসিফ আকবর, কুদ্দুস বয়াতি, নন্দিতা, প্রীতম আহমেদ এবং মাশা ইসলাম। দীর্ঘ ১০ বছর পর চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অর্থহীন, শিরোনামহীন, ভাইকিং, সোলস, ওয়ারফেইজ, অ্যাভয়েডরাফা, আরভোভাইরাস, আর্টসেল ও তীরন্দাজের মতো দেশসেরা ব্যান্ড দলের গানে গানে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে মানুষ। চট্টগ্রামের মানুষের বাঁধভাঙা এই উচ্ছ্বাসে দর্শকের স্রোত ঠেকাতে পারেনি স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীরও। এদিকে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ঝামেলা কাটিয়ে ফের পুরনো ছন্দে ফিরেছেন রকস্টার মিলা। এরই মধ্যে স্টেজ শোতে ফিরেছেন তিনি। বিজয় দিবস উপলক্ষে বড় মাপের দুটি কনসার্টে অংশ নেন মিলা।

সর্বশেষ খবর