বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সরকারি ঋণে সিনেমা হলের উন্নয়ন শুরু

আলাউদ্দীন মাজিদ

সরকারি ঋণে সিনেমা হলের উন্নয়ন শুরু

এবার কি সিনেমা হল আর চলচ্চিত্র ব্যবসার সুদিন ফিরছে? এই প্রশ্নের কারণ হলো অবশেষে সিনেমা হল উন্নয়ন ও সংস্কারে সিনেমা হল মালিকরা পাচ্ছেন বহু প্রতীক্ষিত সরকারি ঋণ। প্রথম পর্যায়ে সারা দেশে ২৫টি সিনেমা হল উন্নয়ন ও নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিতে যাচ্ছে সিনেমা হল মালিকদের সংগঠন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি।

২০০০ সালের শুরু থেকেই দেশে সিনেমা হল ভাঙা ও বিলুপ্ত হতে চলছে। এক জরিপ বলছে, ৮০ শতাংশ সিনেমা হলই বন্ধ হয়ে বিপণি বিতান, মেডিকেল সেন্টার বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিগত ২৫ বছরে দেশে নতুন কোনো সিনেমা হল নির্মিত হয়নি। এতে করে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের স্থান সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় চলচ্চিত্র প্রযোজকরা আর্থিক লোকসানের আশঙ্কায় সিংহভাগ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও সিনেমা নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। ফলে চলচ্চিত্র শিল্প পড়ে যায় চরম বিপর্যয়ে। এমন তথ্য জানিয়ে প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস আরও বলেন, আগামী সপ্তাহ অথবা নতুন বছরের শুরুতে প্রকল্প প্রস্তাবগুলো তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তা অনুমোদন করলেই সিনেমা হল মালিকরা পেয়ে যাবেন কাক্সিক্ষত ঋণ এবং শুরু হবে সিনেমা হল নির্মাণ ও উন্নয়নের কাজ। সরকার সিনেমা হলের ধরন বুঝে প্রতিটি সিনেমা হলকে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে। সরকার প্রথমে ঘোষণা করেছিল প্রতি সিনেমা হল উন্নয়নে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। পরে প্রদর্শক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা বৃদ্ধি করে ১০ কোটি টাকা করা হয়। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নতুন সিনেমা হল নির্মাণ, বিদ্যমান হলের সংস্কার ও আধুনিকায়নে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। একই ভবনে একটি প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তিমালিকানাধীন (একক বা যৌথ) সিনেপ্লেক্সের যতগুলো পর্দা বা স্ক্রিন থাকুক না কেন, তা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণপ্রাপ্তিতে একটি ইউনিট হিসেবে বিবেচিত হবে। এরূপ নতুন একটি ইউনিট স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। আর একটি ইউনিট সংস্কারে মিলবে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা ঋণ। তবে ঋণ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্সের আসনসংখ্যা কমপক্ষে ১০০ হতে হবে।

বিভাগীয় শহরের জন্য এই ঋণের সুদের হার ৫ ও এর বাইরের এলাকার জন্য সাড়ে ৪ শতাংশ। আর এই ঋণ শোধ করা যাবে ৮ বছর পর্যন্ত।

সিনেমা হল মালিকদের ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে এই পুনঃঅর্থায়নের অর্থ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে বিতরণ করা ৫০০ কোটি টাকা ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। জানা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মূলত এই ঋণ প্রদান করবে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন নিতে পারবে। আর সময়মতো ঋণ শোধ না করলে ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে অর্থ কেটে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বিচারবিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে এই ঋণ দিতে হবে।

এদিকে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা ২৫টি সিনেমা হলের মধ্যে বেশির ভাগই উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের। এমন তথ্য জানিয়ে প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, সিনেমা হল উন্নয়নে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সিনেমা হল মালিকদের আগ্রহ কম দেখা গেছে। এসব স্থানের হল মালিকদের মধ্যে সিনেমা হল বন্ধ করে অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের আগ্রহ বেশি। তবে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে আগ্রহ কিছুটা বেশি দেখা গেছে। অপরদিকে পাবনা, বগুড়া, রংপুর এবং বৃহত্তর দিনাজপুরের সিনেমা হল মালিকদের মধ্যে সরকারি ঋণে সিনেমা হল উন্নয়নে তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

সর্বশেষ খবর