সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ইত্যাদি তেত্রিশ বছর পরেও নতুন

শোবিজ প্রতিবেদক

ইত্যাদি তেত্রিশ বছর পরেও নতুন

আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে নিয়মিত ইত্যাদি ৩৩ বছর বয়সেও সেই একই আমেজে দর্শকদের টিভির সামনে বসিয়ে রেখেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস ছিল আমাদের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির মাস। আর এই বিজয়ের মাসে প্রচারিত ৩৩ বছর বয়সের শেষ ইত্যাদি ছিল চমক লাগানো নিত্যনতুন বিষয়-বৈচিত্র্যে ভরা। বিজয়ের এই ৫০ বছরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোথাও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মুক্তিযুদ্ধের সদর দফতর হিসেবে পরিচিত তেলিয়াপাড়ার চা বাগানের বাংলোকে দেখা না গেলেও দেখা গ্যাছে ইত্যাদিতে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তেলিয়াপাড়ার ম্যানেজার বাংলোটি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। এখান থেকেই পুরো দেশটাকে প্রথম চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বাংলোর সামনে বিজয়ের মাসে ইত্যাদি ধারণ করে হানিফ সংকেত আবারও প্রমাণ করলেন, তাঁর চিন্তা-চেতনা, ভাবনা সবার চেয়ে আলাদা এবং অনন্য। অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জের কীর্তিমান ব্যক্তিদের পরিচিতি যেমন তুলে ধরা হয়, তেমনি তুলে ধরা হয় দর্শনীয় স্থানগুলোও। এবারের অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বিস্ময় বালক সাদের অসাধারণ প্রতিভা দেখে দর্শকরা অভিভূত হয়েছেন। ক্লাস ওয়ানের ছাত্র, করোনার কারণে যার কখনো স্কুলে যাওয়া হয়নি। বাবার দেওয়া স্মার্টফোন ব্যবহার করে সাদ অর্জন করেছে নানা বিষয়ে পারদর্শিতা। আয়ত্ত করেছে শুদ্ধভাবে ইংরেজি বলা এবং পৃথিবীর নানা বিষয়ে জ্ঞান। ইত্যাদির দর্শক হিসেবে সাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, ‘ইত্যাদি অনুপ্রেরণা জোগায়, ইত্যাদি গঠনমূলক এবং মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে’। অনুষ্ঠানের আর একটি আকর্ষণীয় পর্ব ছিল কক্সবাজারের ফরিদুল আলমের ‘আলাদীনের চেরাগ’, যিনি নিজ উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে বিভিন্ন অপরাধজনিত কর্মকান্ড দেখেন, কখনোবা ফুটেজ ফেসবুকে আপলোড করে অপরাধী শনাক্ত করে মানুষকে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া ইত্যাদির দেওয়া অর্থে নতুন উদ্যমে বেদে বহরে ভাসমান স্কুলটির শুরু এবং পাখিপ্রেমিক মৃত্যুঞ্জয়ের পাখি প্রেম নিয়ে ফলোআপ প্রতিবেদন মনে করিয়ে দেয় ইত্যাদিতে তুলে ধরা বিষয়গুলোর প্রতি ইত্যাদি সবসময় দৃষ্টি রাখে। হবিগঞ্জকে নিয়ে স্থানীয় শতাধিক শিল্পীর নাচটি ছিল অত্যন্ত উপভোগ্য। হবিগঞ্জের থিম সং হিসেবেও গানটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ভালো লেগেছে বিজয়ের মাসে শিল্পী সামিনা চৌধুরী ও ফাহমিদা নবীর গাওয়া ‘আমি সূর্যের মালা গাঁথি’ গানটি। এবারের ইত্যাদির প্রতিটি নাট্যাংশ ছিল সমসাময়িক, সরস, তির্যক ও শিক্ষণীয়। ভালো লেগেছে চিঠিপত্রের মাধ্যমেও অর্থ সাহায্যের বিষয়টি। এবারের ইত্যাদিতে সব চেয়ে হৃদয়ছোঁয়া পর্ব ছিল শেষের প্রতিবেদনটি। যেখানে দুজন মানুষের কথা বলা হয়েছে। একজন সুজন কুমার বিশ্বাস, যিনি চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও জীবনের অনুসন্ধান করে সফল হয়েছেন। অন্যজন কুতুবউদ্দিন আহমেদ, যিনি সামাজিক চেতনার দায়বোধ থেকে বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। চিকিৎসক সুজন কুমার বিশ্বাসের বাবা ক্ষৌরকর্ম করতেন, মা গোবর বা ঘুঁটে কুড়াতেন। তা দিয়েই সংসার চালাতেন তাঁর বাবা। বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন তাঁর মা। সমাজসেবক কুতুবউদ্দিনের সহায়তায় মেধাবী সুজন নটর ডেম কলেজে পড়েছেন, ডাক্তারি পাস করেছেন, চিকিৎসক হয়েছেন এবং দুবছর ইন্টার্নি শেষে নিজ যোগ্যতায় ৩৯ বিসিএসে মনোনয়ন পেয়ে একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। কিন্তু সুজন ভোলেননি তাঁর অতীত। অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের এক প্রশ্নের উত্তরে সুজন বলেছেন, শিকড়কে ভুলে গেলে কি করে হবে। যিনি শিকড় ভুলে যান, তিনি আদর্শ মানুষ হতে পারেন না। আর তাই তো ইত্যাদির মতো বড় পরিসরের অনুষ্ঠানে এসেও সুজন গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন তাঁর শিকড়ের কথা, তাঁর নরসুন্দর পিতা আর ঘুঁটেকুড়ানি মায়ের কথা। এমনই শিক্ষামূলক, অনুকরণীয়, হৃদয়স্পর্শী অনেক বিষয়ে পরিপূর্ণ ছিল এবারের ইত্যাদি।

 

সর্বশেষ খবর