বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনার থাবা সংগীতে

করোনার থাবা সংগীতে

বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের সংগীতাঙ্গনে ভালো অবস্থা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ এর থাবায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সংগীতাঙ্গন। বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিল্পীরা। আবার অনেকে হচ্ছেন আক্রান্ত। সে সব নিয়ে প্রতিবেদন সাজিয়েছেন- আলাউদ্দিন মাজিদ ও পান্থ আফজাল।

 

ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশ-বিদেশের কনসার্ট ও শো বাতিল হচ্ছে। ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিল্পীরা। নতুন বছরে অডিও কোম্পানি এবং শিল্পীদের অনেক পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোনোর প্রত্যাশা থাকলেও সবই ভেস্তে গেছে। গানের কাজ অনেকটাই বন্ধ। আগের রেকর্ডকৃত কিছু গান প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রফেশনাল স্টুডিওর কাজও বন্ধ রয়েছে। চলচ্চিত্রের গানের কাজও বন্ধ রয়েছে। সবমিলিয়ে করোনার এই পরিস্থিতিতে  গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালকরা তাঁদের অনিশ্চয়তার কথা জানাচ্ছেন-

 

ফেরদৌস ওয়াহিদ করোনার ভয়াল থাবায় সংগীত সৃষ্টি বন্ধই হয়ে গেছে। সংগীত জগৎ আজ বিপর্যস্ত। কেউ পেশায় কেউবা নেশায় সংগীতের সঙ্গে যুক্ত হয়। যাঁরা পেশা হিসেবে সংগীতকে নিয়েছেন তাঁরা এই করোনার থাবায় একেবারেই বিপর্যস্ত। কারণ করোনাকালে মানুষ বেঁচে থাকার যুদ্ধে লিপ্ত। মানুষ এখন কীভাবে বাঁচবে আর চলবে সেই চিন্তায় অস্থির। এমন দুর্যোগে মনে বিনোদন আসার কথা নয়। তাই গান কীভাবে শুনবে তারা। এ কারণে সংগীত নিয়ে ক্রিয়েটিভ কাজ মানে সংগীত সৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে একদিকে করোনা, অন্যদিকে পেশা স্থবির হয়ে পড়ায় সংগীত জগতের মানুষ সবচেয়ে বেশি নাকাল অবস্থায় পড়েছেন। এই দুঃসময়ে সংগীতাঙ্গনের মানুষদের সাপোর্ট দেওয়ার কেউ নেই। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা যদি চান তাহলে এই পেশায় জড়িতরা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবে। সরকারের এক্ষেত্রে করার কিছু নেই। কারণ গতবারের করোনার ভয়াবহতায় সরকার সর্বস্তরের অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেছে। বার বার তো সহযোগিতা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারের কাছে কিছু চাওয়া আর অবান্তর চিন্তা করা একই কথা। এখন শুধু এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে হয়তো সংগীতাঙ্গন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

 

সামিনা চৌধুরী 

মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এ সময়ে সত্যিই দুঃখজনক! সব কিছুই থমকে আছে। শিল্পীদের কাজ কমে গেছে। জীবন রক্ষাই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অনেক শিল্পী ও মিউজিশিয়ান খারাপ অবস্থায় দিনযাপন করছেন। যদিও আগের অবস্থা এ সময়ের থেকে বেশি খারাপ ছিল। এই সময়ে অনেক কিছুই কিন্তু সরকার অ্যালাউ করছে। শিল্পীদের সচেতনতা মেনে কাজ করতে অনুমতি দিচ্ছে। আসলে শিল্পীরা তো স্টেজ শো, অডিও-ভিডিও গানের কাজের ওপর নির্ভরশীল। সব আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে যেটুকু ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তাও আবার থমকে যাচ্ছে করোনার থাবায়।

 

কুমার বিশ্বজিৎ  করোনার ভয়াল থাবায় মানুষের মনে আনন্দ না থাকায় সংগীত আর মানুষের মনকে নাড়া দিচ্ছে না। তাই সংগীত জগতের মানুষ আজ সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। ২০২০ সালে এই মহামারি শুরু হলে মধ্যে কিছুটা কাটিয়ে উঠেছিল। তখন সংগীতের মানুষ আবার নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে আবার করোনার নতুন ছোবল সব যেন এলোমেলো করে দিল। এতে সংগীতাঙ্গন অনেক পিছিয়ে পড়ল। এ অবস্থায় সংগীত জগতের অসহায় মানুষদের বাঁচাতে সরকারের কাছে আমাদের ভাইটাল দাবি হলো- চিকিৎসা, অনুদান আর ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা। এসব দাবি যদি সরকার পূরণ করে দেয় তাহলে হয়তো সংগীত জগতের বিপর্যস্ত মানুষরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। চলচ্চিত্র, নাটকসহ বিনোদনের অন্য সেক্টরগুলো সব সময়ই সরকারের নানা সহযোগিতা পেয়ে আসছে। কিন্তু অবহেলিত রয়ে গেছে সংগীতাঙ্গন। করোনার কারণে সংগীতের সঙ্গে যুক্ত সিনিয়ররা আগে থেকেই অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। নতুন যাঁরা কার্যক্রম শুরু করেছিলেন তাঁরা করোনার বারবার ছোবলে খুবই হতাশ অবস্থায় পড়েছেন। সবমিলিয়ে এই অঙ্গন আর অঙ্গনের মানুষরা আজ খুবই অসহায় আর বিপর্যস্ত।

 

আঁখি আলমগীর

আমি আশাবাদী মানুষ। আমি মনে করি, কি নাই, কি হবে- এসব ভেবে সময়ক্ষেপণ করা ঠিক নয়। ৯৫ শতাংশ মানুষ মেন্টালি অসুস্থ। তাই ধৈর্য ধরতে হবে আমাদের। তাহলেই অন্ধকার সরিয়ে আমরা আলোর দিকে এগিয়ে যেতে পারব। সামনে সুদিন রয়েছে, খারাপ সময়টা আমরা পার করে গেছি। আমার ধারণা, ২-৩ বছর পর এই করোনাকে আমাদের কাছে খুবই সিম্পল রোগ হিসেবেই মনে হবে। এমনিতেই আমরা প্রকৃতিগতভাবে ফাইটার। ফাইট করে করোনা মোকাবিলা করার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। ভালো খবরের জন্য সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে আছি।

 

বাপ্পা মজুমদার

আবারও করোনায় সংগীতাঙ্গন থমকে গেছে। উত্তরণের উপায় কি- এটা একটা কঠিন প্রশ্ন! বলা যায় জাতীয় প্রশ্ন। আসলে সব সেক্টরেই একই দুরবস্থা। মিউজিশিয়ানদের অবস্থা খুবই খারাপ। কি হবে বলা যাচ্ছে না। শিল্পীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। সতর্কতা অবলম্বন যেভাবে করার কথা বলা হচ্ছে সেভাবে করাও যাচ্ছে না। তবে সতর্কতা যেমন খুবই জরুরি, শিল্পীদের বাঁচাও তেমনই জরুরি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দরকার, তা শিল্পীরা আদৌ কি পাচ্ছেন?

 

ধ্রুব গুহ 

দেশের অন্যতম অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ও সংগীতশিল্পী ধ্রুব গুহ বলেন, এই সময়ে করোনা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ওপর সরাসরি আক্রমণ করেছে বলা যায়। শিল্পী, মিউজিশিয়ানদের সব শো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অডিও লেবেল কোম্পানি, গীতিকার, সুরকার, শিল্পীরা সবাই মারাত্মক ক্ষতির মুখে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! আগের ধাক্কা সামলে নিয়ে কিছুটা হলেও এবার সংগীতাঙ্গনে প্রাণ ফিরে আসছিল। তাও থমকে গেল। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরি। এক্ষেত্রে শিল্পীদের যত সংগঠন রয়েছে সবাই একত্রিত হয়ে আগামী ৬ মাসের জন্য পরিকল্পনা, সেমিনার করতে হবে। যেন সামনের ৫-৬ বছর সংগীতাঙ্গন একটি ভালো জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। সরকারি প্রণোদনা নয়, সংগীতসংশ্লিষ্ট সবারই পরিশ্রমের সম্মানী নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

 

হাসান

অনেক শিল্পী, মিউজিশিয়ান ও সংগীতসংশ্লিষ্টের অবস্থা এখন ভালো নেই। কারণ কাজ নেই কারও। এমন অবস্থায় সরকারি সহায়তা সংগীতাঙ্গনের জন্য খুবই দরকার। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সরকার অন্যান্য সেক্টরের জন্য যেমন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, নিশ্চয়ই সংগীতাঙ্গনের জন্যও করবে।

এই খারাপ পরিস্থিতি সব সময় থাকবে না। তবে এই কঠিন সময়ে সহযোগিতা খুব দরকার।

 

এস কে শাহেদ আলী পাপ্পু 

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভির প্রতিষ্ঠাতা এস কে শাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, কি আর বলব বলেন, খুবই খারাপ পরিস্থিতি। শুটিং করা যাচ্ছে না, গান করা যাচ্ছে না। ইউটিউব চ্যানেলের ভিউ-রিচ খুবই কম। অ্যাপ দাঁড়াচ্ছে না। শিল্পী, মিউজিশিয়ান, অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো নয়। ফের করোনার ধাক্কায় সবকিছু থমকে আছে।

 

ইমরান

করোনা পরিস্থিতির কারণে সব বন্ধ হয়ে আছে। এই সময়টা ধৈর্য ধরে পার করতে হবে। আমি মনে করি আল্লাহর রহমতে এই অবস্থা থাকবে না। তবে এই পরিস্থিতিতে যেন আমরা গানের মানুষরাই একে অপরের খোঁজ নেই, একে অপরের পাশে যেন দাঁড়াই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর