শুক্রবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
মঞ্চে করোনার থাবা

আশাবাদী সংস্কৃতিজনরা

মোস্তফা মতিহার

আশাবাদী সংস্কৃতিজনরা

করোনার চোখ রাঙানিতে দুই বছর যাবৎ ঝিমিয়ে চলছে মঞ্চাঙ্গন। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রাণের সঞ্চার ঘটলেও তৃতীয় ঢেউ এসে শিল্পের আঙিনায় হানা দিয়েছে নতুন করে। যার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক নাটকের দল নাটক মঞ্চায়ন স্থগিত করেছে, নাচের সংগঠন নির্ধারিত অনুষ্ঠান বাতিল করেছে, সুরের মূর্ছনায়ও পড়েছে বাধা। তবে, ব্যতিক্রম চিত্রও লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো তৃতীয় ঢেউ অতটা শক্তিশালী নয় বলে অনেকেই এখনো মঞ্চের আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন এবং মঞ্চকে আলোকিত রাখার চেষ্টা করছেন। আশাবাদী হয়ে অনেকেই মঞ্চের আলো জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। ২৭ জানুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনের বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি উৎসব এবং গতকাল বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া তিন দিনের জাতীয় নৃত্য উৎসবের মধ্য দিয়ে করোনার শাসন উপেক্ষা করেও আলোকিত থাকছে মঞ্চ। পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে না যায় আর জনজীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর লকডাউনের মতো কোনো সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে সাংস্কৃতিক কর্ম অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন সংস্কৃতিজন। আশা প্রকাশ করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গন যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তৃতীয় ঢেউ বা ওমিক্রনে ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরুর আগেই ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশের মঞ্চগুলো। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবারও মঞ্চের আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটকের মধ্য দিয়ে ফের সরব হয় সাংস্কৃতিক অঙ্গন। কিন্তু নতুন করে ওমিক্রনের প্রভাব তথা করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে আবার নিভুনিভু করে জ্বলছে মঞ্চের আলো। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মঞ্চকে সচল রাখার চেষ্টা করছেন সংস্কৃতির যোদ্ধারা।

 

মামুনুর রশীদ

নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ বলেন, এই বিধিনিষেধের মধ্যেও মানুষ নাটক দেখতে আসছে। কর্মব্যস্ত দিন হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বুধবার শিল্পকলা একাডেমিতে আমাদের আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকটিতে দর্শকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। দুই-একটা দল তাদের শো ক্যানসেল করলেও অনেকেই নিয়মিত শো করছেন, আর ধর্ষকদের কাছ থেকেও সবাই মোটামুটি সাড়া পাচ্ছেন। করোনা আমাদের যতটা ক্ষতি করেছে তা তো করেই ফেলেছে। এখন আর কিইবা ক্ষতি হবে। তবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে হয়তো মঞ্চের আলো আবারও নিভে যাবে। ওমিক্রনটা বেশি ছড়ালেও এটা আগের দ্ুিট ঢেউয়ের মতো অতটা শক্তিশালী নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই তৃতীয় ঢেউও একসময় থেমে যাবে বলে আমি আশাবাদী।

 

আতাউর রহমান

করোনা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই করোনা কখনোই যাবে না, স্বাভাবিক হয়ে এটি থেকেই যাবে। ডায়রিয়া, যক্ষ্মা যেভাবে থেকে গেছে এটাও সেভাবেই থেকে যাবে। একসময় বলা হতো যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা। কিন্তু সে পরিস্থিতি এখন আর নেই। যক্ষ্মা এখন নিরাময়যোগ্য রোগ। একসময় তো ডায়রিয়াটা অনেক বড় মহামারি ছিল। কিন্তু ডায়রিয়াও এখন জটিল ও মারত্মক কিছু নয়। শক্তিটা কমে গেলেও ডায়রিয়া ও যক্ষ্মাসহ সব মহামারিই থেকে গেছে। করোনা একসময় স্বাভাবিক রোগে পরিণত হবে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে করোনার চেয়ে অন্য রোগে মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে। আর এখন ওমিক্রন নামের যে ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে তা আগের দুটি ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে অনেক দুর্বল। সাংস্কৃতিক অঙ্গন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়েছেই, আরও হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সব অঙ্গনেই স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে বলে আমি আশাবাদী।

 

অনন্ত হীরা

করোনা শুধু মঞ্চেরই নয়, সব সেক্টরেরই ক্ষতি করেছে। করোনার কারণে সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। গত দ্ইুটা ঢেউ মঞ্চে যেভাবে আঘাত হেনেছে এবার সেরকম আঘাত হানতে পারবে না বলে আশা রাখছি। ক্ষতি যতটুকু হওয়ার ততটুকু তো হয়েছেই। তবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা এই অবস্থা থেকে অতি শিগগিরই উত্তরণ ঘটাতে পারব। এখনো মঞ্চে আলো জ্বলছে, তবে যেভাবে জ্বলে ওঠার কথা আমরা সেভাবে আলো জ্বালাতে পারছি না।

 

খন্দকার শাহ আলম

বাংলাদেশ থিয়েটারের অধিকর্তা খন্দকার শাহ আলম বলেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও আমরা মঞ্চকে সচল রেখেছি। আর নাট্যানুরাগীদের কাছ থেকেও সাড়া পাচ্ছি। এই ঘোর কেটে যাবে এবং আলোর পথে আমরা নতুন করে এগিয়ে যাব বলেই আমার বিশ্বাস।

 

মোমেনা চৌধুরী

প্রথম ঢেউয়ের দীর্ঘ লকডাউন শেষে মোমেনা চৌধুরীর একক নাটক ‘লাল জমিন’-এর মধ্য দিয়েই নাট্যাঙ্গনে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। নাটক সরণিখ্যাত বেইলি রোডের মহিলা সমিতির মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চায়নের পর নাট্যাঙ্গন ফের সরব হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, করোনা এখন সারা বিশ্বেরই সমস্যা। কিন্তু এটি এখন বিশ্ব পলিটিক্সে রূপ নিয়েছে। আগে প্রতিটি ঘরেই জ্বর হতো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। এই করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমি নিয়মিত শো করছি। আল্লাহ সহায় থাকলে কিছুই হবে না। খুব শিগগিরই দেশের  বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘লাল জমিন’-এর  শো করব। এই পরিস্থিতি থেকে কাটিয়ে উঠতে হলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর