বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

নির্বাচনী যত ঘটনায় উত্তাল এফডিসি

২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল [কাঞ্চন-নিপুণ ও মিশা-জায়েদ] এখন মুখোমুখি। নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে এফডিসিতে। প্রতিদিন ঘটছে নানা ঘটনা। এমনই কিছু ঘটনার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

নির্বাচনী যত ঘটনায় উত্তাল এফডিসি

নিষেধাজ্ঞার পরও বহিরাগতদের আনাগোনা এফডিসিতে

নির্বাচনকে ঘিরে এফডিসি লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। এদের বেশির ভাগই বহিরাগত। বহিরাগতদের কারণেই অনেক সময় ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। এর আগে এক নির্বাচনের সময় বহিরাগতদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে শাকিব খানকে। পরে মৌসুমীর সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। অনেকে বলেন, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোর নির্বাচনের সময় নিজেদের শক্তি আর ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য বহিরাগতদের প্রবেশ বেআইনি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এফডিসিতে মানুষের অবাধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করেছি। নিবন্ধিত টিভি চ্যানেল, বাছাইকৃত পত্রিকা ও সরকার কর্তৃক স্বীকৃত ১৪টি অনলাইনের সংবাদকর্মী ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এফডিসিতে গতকাল পর্যন্ত দেখা গেছে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ।

 

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এফডিসিতে বহিরাগতদের আনাগোনা

 

খ্যাপলেন আলমগীর

শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান হয়। সেখানকার আলোচনায় ওঠে আসে ভোটাধিকার হারানো ১৮৪ শিল্পীর প্রসঙ্গ। এই শিল্পীদের সদস্য থেকে সহযোগী সদস্য বানানোর প্রক্রিয়ায় অভিনেতা আলমগীরের স্বাক্ষর ছিল বলে প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চে ওঠে বিষয়টি নিয়ে মিশা-জায়েদকে চ্যালেঞ্জ করে আলমগীর বলেন, ‘সেখানে আমার স্বাক্ষর আছে, আমি জড়িত আছি এটা প্রমাণ করতে পারলে কথা দিলাম, আমি তোমাদের প্যানেলকে ভোট দেব। আর যদি প্রমাণ না দিতে পার তবে আমি তোমাদের নামে আইনি ব্যবস্থা নেব। ফারুক ভাই, সোহেল রানা ভাই, উজ্জ্বল ভাই যদি আমার সঙ্গে নাও আসেন, আমি একাই তোমাদের নামে ফৌজদারি মামলা করব।’

 

আনোয়ারা বললেন ‘আমরা জোকার’

এক প্যানেল অন্য প্যানেলকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে রেখেছে। কথার লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গান। একটি গান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কমতি নেই। অনেক সিনিয়র শিল্পীও গানটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা বলেন, এবারের নির্বাচনে আমি কষ্ট পেয়েছি। ‘নোট দিয়ে ভোট কেনার দিন শেষ’ গান দিয়ে জুনিয়র শিল্পীরা নাচানাচি করেছেন। বিষয়টি আমার কাছে ভালো লাগেনি। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টাকার কথা আসবে কেন? এত বছরের অভিনয় জীবনে এসব দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়, আমরা জোকারে পরিণত হচ্ছি। আমাদের সবার বুঝেশুনে ভোট দেওয়া প্রয়োজন।

 

মৌসুমী বললেন ‘ওরা ভালো’

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-জায়েদের প্যানেলে থেকে এবার কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করছেন মৌসুমী। ২০১৯-২০২১ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে মিশা-জায়েদের প্যানেলের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন মৌসুমী ও তাঁর স্বামী চিত্রনায়ক ওমর সানী। দুই বছরে এমন কী হলো ‘সেই’ মিশা-জায়েদের প্যানেলে নির্বাচন করছেন মৌসুমী? এমন প্রশ্নে মৌসুমী জানিয়েছেন, ‘আমি অনেক শিল্পীর কাছ থেকে শুনেছি মিশা-জায়েদ প্যানেল অনেক ভালো কাজ করেছে। আমি তাঁদের সেই ভালো কাজের সমর্থক হিসেবে এই প্যানেলে দাঁড়িয়েছি। ওরা আসলে ভালো।’

 

জায়েদকে ‘বিয়ের’ পরামর্শ কাঞ্চনের

‘মা মারা যাওয়ার আগে বলেছিলেন বিয়ে করা লাগবে না, তুমি সমিতি নিয়ে থাক। কিন্তু আমি না শুনে শিল্পী সমিতি ও সংগঠন নিয়ে ছিলাম।’ কথাগুলো বলেন জায়েদ খান। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতেই জায়েদ খানকে বিয়ে করার পরামর্শ দিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন।

জায়েদের উদ্দেশে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ছোট ভাই তোমাকে অনুরোধ করছি, শিল্পী সমিতি তো আছেই; তারপরও তুমি বিয়ে কর। তোমার সন্তান হোক, আমরা চাচা হই। তোমার বোধোদয় হোক। তুমি খালাম্মার কথা শোননি, অন্তত আমাদের কথাটি শোনো। তোমার মঙ্গল হোক।’

 

জায়েদের মায়ের আদেশ

চিত্রনায়ক জায়েদ খানের মা বেঁচে থাকতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিয়ে তাঁকে আদেশ দিয়ে গেছেন, তা হলো- ‘তোমার আর বিয়ে-শাদি লাগবে না, তুমি শিল্পী সমিতি নিয়েই থাক।’ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত মিশা-জায়েদ প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাকে স্মরণ করে কাঁদতে কাঁদতে এ কথা বলেন জায়েদ খান নিজেই। গত ২৭ ডিসেম্বর তাঁর মা সাহিদা হক ইন্তেকাল করেন।

 

কান্না নিয়ে রিয়াজ-জায়েদ

ভোটাধিকার হারানো শিল্পীদের নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নায়ক রিয়াজ। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে রিয়াজ বলেন, ভোটাধিকার হারানো এই মানুষগুলোর কান্না থামিয়ে মুখে হাসি ফিরিয়ে দিতে চাই। এই মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকান। তাঁদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। ভোটাধিকার হারানো কমপক্ষে ৫০ জন শিল্পী রিয়াজের সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। বিষয়টিকে ‘মায়াকান্না’ বলে মন্তব্য করেছেন জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘সবকিছু হচ্ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। রিয়াজ ভাইয়ের মতো অভিনেতা মায়াকান্না করছেন। অথচ এই রিয়াজ ভাই ২০১৭ সালে আমাদের সঙ্গে যাচাই-বাছাই কমিটিতে থেকে সহযোগী সদস্য করেছেন তাঁদের। এদিকে প্যানেল পরিচিতি সভায় ডুকরে কাঁদেন জায়েদ। জায়েদ খানের কান্নায় নানা আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এদিকে দুজনের কান্নাই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।

সর্বশেষ খবর