শিরোনাম
সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

খরার মাঝেও আশার আলোয় যেসব ছবি

মানসম্মত ছবির অভাবে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর রংপুর শহরের সিনেমা হল ‘শাপলা টকিজ’ শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২ ছবিটি দিয়েই খুলেছে

আলাউদ্দীন মাজিদ

খরার মাঝেও আশার আলোয় যেসব ছবি

চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন নানা প্রতিকূলতা চলছে। এর সঙ্গে ২০২০ সাল থেকে যুক্ত হলো বৈশ্বিক মহামারি করোনা। এতে চরম খরার কবলে পড়ল চলচ্চিত্র দুনিয়া।  মুক্তি আটকে গেল প্রায় অর্ধশত ছবির। ছবির নির্মাণ কাজও স্থবির হয়ে পড়ল। এ অবস্থা গত প্রায় দুই বছর ধরে। এমন অবস্থায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক আর প্রযোজকদের মাথায় হাত, পিঠ ঠেকল দেয়ালে। খরা যখন চরমে তখনই গত বছরের ডিসেম্বর থেকে একটু একটু করে আবার আশার আলো জ্বলতে শুরু করেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ১১ ফেব্রুয়ারি  মুক্তি পেয়েছে বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের চলচ্চিত্র শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২। দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত বাপ্পী চৌধুরী ও অপু বিশ্বাস জুটির এ চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর থেকেই হাসি ফুটেছে হল মালিকদের মুখে। অন্যদিকে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবিটি দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও দারুণ সাড়া  ফেলেছে। বাংলাদেশসহ পাশ্চাত্যে এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের ৪টি দেশে মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই সবগুলো দেশের দর্শক মহলে সিনেমাটি বেশ সমাদৃত হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-টু’ ছবিটি দর্শকপ্রিয়তা ধরে রেখে বর্তমানে টানা তিন সপ্তাহ ধরে প্রদর্শিত হচ্ছে। বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের পরিচালক ও আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর দর্শক আসতে শুরু করেছেন সিনেমা হলগুলোতে। দর্শকরা সিনেমা দেখে প্রশংসা করছেন। প্রতিটি শোতেই বাড়ছে দর্শক। আসলে মানসম্মত ছবি নির্মাণ হলে সেই ছবিটি যে দর্শক নজর কাড়ে তা আবারও প্রমাণ করল ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-টু’। এদিকে চলচ্চিত্র দুনিয়ার জন্য আরও একটি সুখবর হলো মানসম্মত ছবির অভাবে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর রংপুর শহরের সিনেমা হল ‘শাপলা টকিজ’ এই ছবিটি দিয়েই খুলেছে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ দিয়ে হলটি আবার চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বুকিং এজেন্ট কামাল হোসেন। মোট ২৫টি হলে চলছে এ সিনেমা।

অন্যদিকে, পুলিশ অ্যাকশন থ্রিলার ‘মিশন এক্সট্রিম’ বিদেশের মাটিতে দারুণ সাড়া ফেলেছে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশসহ পাশ্চাত্যে এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের ৪টি দেশে মুক্তি পায় বহুল আলোচিত এই সিনেমা। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই সবগুলো দেশের দর্শক মহলে সিনেমাটি বেশ সমাদৃত হয়। ফলে সিনেমা হলগুলোতে প্রথম সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেমাটি চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং বাড়ানো হয় শো সংখ্যা।

সিনেমাটি সব থেকে এগিয়ে ছিল নিউইয়র্কে। এ ছাড়া জ্যামাইকা মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সিনেমাটি দ্বিতীয় সপ্তাহেও প্রদর্শন করে। তাছাড়া নিউইয়র্কে রিগাল এস্টোরিয়া ও রিগাল  কোর্ট, সানফ্রানসিসকোসহ বেশ কয়েকটি শহরেও সিনেমাটি সাফল্যের সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিবিউটর রাজ হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, এই প্রেক্ষাগৃহে  কোনো সিনেমা দ্বিতীয় সপ্তাহে চলা মানে  সেটাকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘সুপার হিট’ ধরে নেয়।  কেননা, বিশ্বের সব বড় বড় সিনেমা এখানে  প্রেস্টিজিয়াস  প্রেক্ষাগৃহ হিসেবে মুক্তি  দেওয়া হয়।  সেখানে আমরা ডিজনির দুটি সিনেমা, ইন্ডিয়ান অন্তিমসহ ডজনখানেক সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে চালাতে পেরেছি।

ফ্রান্সের পরিবেশক রাব্বানী খান জানান, প্যারিসের গোমোঁ মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমাটি ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রথম সপ্তাহের জন্য ৭টি  শো বরাদ্দ দিলেও দর্শক সাড়ায় এগিয়ে থাকায় পরবর্তী সপ্তাহের জন্য ৩১টি শো বরাদ্দ  দেয়, যেখানে কমে যায় ইন্ডিয়ান সিনেমা ‘অন্তিম’র শো। এ সাফল্যে আমরা খুবই এক্সাইটেড। সত্যি কথা বলতে এখানে দর্শকদের মাঝে সিনেমাটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিবেশক তানিম আল মিনারুল মান্নান জানান, সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা উৎসবের আমেজ নিয়ে সিনেমাটি দেখেছে। সিডনির পাশাপাশি রাজধানী ক্যানবেরায় সিনেমাটি চলেছে। সব জায়গায় প্রতিটি শো ৭০-৮০ শতাংশ দর্শক ছিল যা এই করোনা পরিস্থিতিতেও হাউসফুল হিসেবে ধরা যায়।

‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমাটি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর কিছু শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়। কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার সানী সানোয়ার। সিনেমাটির সহযোগী প্রযোজনা করেছে মাইম মাল্টিমিডিয়া ও ঢাকা ডিটেকটিভ ক্লাব। পরিচালনা করেছেন পরিচালক সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ। কপ ক্রিয়েশনের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন ‘মাসলম্যান’খ্যাত অভিনেতা আরিফিন শুভ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন- তাসকিন রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ। উল্লেখ্য, ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমাটি বিশ্বের জনপ্রিয় মুভি  রেটিং ওয়েবসাইট ‘আইএমডিবি’তে ৮/১০ রেটিং পেয়েছে।   

পর পর দুটি ছবির এমন সাফল্যে এখন প্রস্তুত থাকা ছবি মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট যেসব নির্মাতা তাদের ছবি মুক্তি দিতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সেসব ছবির মধ্যে রয়েছে দীপংকর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’, অনন্ত জলিলের ‘দিন : দ্য ডে’, সোহানী হোসেন প্রযোজিত ও সুমন ওয়াজেদ পরিচালিত শাকিব খান ও দর্শনা অভিনীত ‘অন্তরাত্মা’,  মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ প্রভৃতি। এ ছাড়াও জানা গেছে, চলতি বছর মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’, ‘বর্ডার’, ‘আনন্দ অশ্রু, ‘মানুষের বাগান’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘কমান্ডো’, ‘ওপারে চন্দ্রাবতী’, ‘সাইকো’, ‘সাহসী যোদ্ধা’, ‘তালাশ’, ‘৫৭০’, ‘পাপ-পুণ্য’, ‘হাওয়া’, ‘ক্যাসিনো’, ‘দামাল’, ‘আদম’, ‘জ্যাম’, ‘গাঙচিল’, ‘বীরত্ব’, ‘ঢাকা ২০৪০’, ‘গিরগিটি’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে করোনা মহামারি চলচ্চিত্রের ক্ষতিকে তীব্র করে তুলেছে। আশা করব এবার করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে আবার চলচ্চিত্র প্রদর্শন আর নির্মাণে চলচ্চিত্রপাড়া সরব হয়ে উঠবে।

সর্বশেষ খবর