শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

নারীপ্রধান যত ঢাকাই চলচ্চিত্র

নারীপ্রধান যত ঢাকাই চলচ্চিত্র

উপমহাদেশে নারীর যাপিত জীবন মানে নারীকেন্দ্রিক ছবি নির্মাণ কম বললে ভুল হবে না। এর মাঝেও এ দেশে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র, যার বেশির ভাগই হয়েছে দর্শকনন্দিত, পেয়েছে প্রশংসা, পুরস্কারও। এমন কিছু ছবির কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

রূপবান (১৯৬৫) : বাংলার নারীর ধৈর্য, ত্যাগ ও সংগ্রামের অনবদ্য গাথা এটি। একজন নারীর আশা-আকাক্সক্ষা ও মর্যাদাবোধের সফল চলচ্চিত্র রূপায়ণ ‘রূপবান’। সালাউদ্দিন পরিচালিত এই ছবিটি ছিল প্রথম লোক কাহিনিনির্ভর ও সুপারহিট চলচ্চিত্র। এই ছবিতে সুজাতা রূপবান চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি খ্যাতি পান।

 

সারেং বউ (১৯৭৮) : শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে ‘সারেং বউ’ পরিচালনা করেন আবদুল্লাহ আল মামুন। এই ছবিতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের এক নারীর জীবনসংগ্রাম স্থান  পেয়েছে। ফারুক-কবরী অভিনীত এই ছবিটিতে আবদুল জব্বারের কণ্ঠে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি এখনো সমান জনপ্রিয়। নবিতন চরিত্রে অভিনয়ে কবরী জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।

 

গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮) : নিজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে আমজাদ হোসেন নির্মাণ করেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। আমাদের সমাজের বাস্তবতায় একজন খেটে খাওয়া গ্রামীণ নারীকে পদে পদে কত সমস্যায় পড়তে হয়, তা দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। কিন্তু দৃঢ়প্রত্যয়ী নারী নিজের মর্যাদাবোধ নিয়ে এগিয়ে চলেন। ববিতা, ফারুক, আনোযার হোসেন, আনোয়ারা অভিনীত ছবিটি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ১২টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ববিতার ক্যারিয়ারে এটি সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

সূর্যদীঘল বাড়ী (১৯৭৯) : আবু ইসহাকের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ যৌথভাবে নির্মাণ করেন মসিউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী। এটি বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ‘পঞ্চাশের আকাল’ নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, সেই দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য, মাতৃত্ব সর্বোপরি এক নারীর জীবনসংগ্রামের দৃশ্য ফুটে উঠেছে এই চলচ্চিত্রে। ছবিটি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ছয়টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে।

 

ভাত দে (১৯৮৪) : আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘ভাত দে’ ছবিতে জরি নামের এক দরিদ্র-গরিব বাউলের মেয়ের জীবনসংগ্রামের চিত্র ফুটে ওঠেছে। আলমগীর, শাবানা, আনোয়ার হোসেন অভিনীত সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কারসহ মোট ৯টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। জরি চরিত্রে অভিনয় করে শাবানা তাঁর সেরা চলচ্চিত্র দিয়ে ঘরে তুলে নেন জাতীয় পুরস্কার। এ ছাড়া বাংলা ছবির মধ্যে ‘ভাত দে’ প্রথম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেয়।

 

নিরন্তর (২০০৬) : হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘জনম জনম’ অবলম্বনে আবু সাইয়ীদের অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র ‘নিরন্তর’। বাবার অন্ধত্বের কারণে তিথিদের পরিবারে আকস্মিক দুর্যোগ নেমে আসে। কোনো চাকরি জোগাড় করতে না পেরে তিথি অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। শাবনূর, লিটু আনাম, ইলিয়াস কাঞ্চন, ডলি জহুর অভিনীত এই ছবিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননাসহ বাংলাদেশের হয়ে অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করে। চিত্রনায়িকা শাবনূরের ক্যারিয়ারে এই ছবিটি অনন্য হয়ে থাকবে।

 

তিন কন্যা (১৯৮৫) : একটি নারীপ্রধান চলচ্চিত্র ‘তিন কন্যা’। ২০ নভেম্বর, ১৯৮৫ সালে ছবিটি মুক্তি পায়। এটি পরিচালনা করেছিলেন শিবলি সাদিক। ছবিটি বাবা হারানো ৩ বোনের কাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। তিন কন্যা ছবিতে প্রধান তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিন বোন সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। আরও অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন।

 

মেয়েরাও মানুষ (১৯৯৭) :  এ ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন মনোয়ার খোকন। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা জসিম ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা, কলকাতার ঋতুপর্ণা ও চাঙ্কিপাঙ্কে। ছবির গল্পটি ছিল সমাজের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারীরাও যে এগিয়ে যেতে পারে, তারাও সাফল্য বয়ে এনে সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে, তারই চিত্র।

 

পালাবি কোথায় (১৯৯৬) : ‘পালাবি কোথায়’ কমেডিধর্মী ছবি। হাস্যরসাত্মক বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে কর্মজীবী নারীর অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এখানে। শাবানা, চম্পা ও সুবর্ণা মুস্তাফা চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক মুগ্ধ করেছিলেন। শহীদুল ইসলাম খোকনের দক্ষ পরিচালনায় ছবিটি দর্শকমন কাড়ে।

 

মোল্লা বাড়ীর বউ (২০০৫) : পুরোপুরি কমেডি ঘরানার ছবি হলেও এটি ছিল ধর্মান্ধতার সমাজে নারীর অসহায়ত্ব ও নারীর লড়াইয়ের চিত্র। এটি পরিচালনা করেছিলেন সালাহ উদ্দিন লাভলু। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমি, শাবনূর, রিয়াজ, এ টি এম শামসুজ্জামান প্রমুখ।

 

মায়ের অধিকার (১৯৯৬) : ব্যবসাসফল ছবি ‘মায়ের অধিকার’ হচ্ছে অন্যতম নারীপ্রধান একটি ছবি। শিবলি সাদিক পরিচালিত এই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। আরও অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ, আলমগীর, সালমান শাহ, হুমায়ুন ফরীদি, নাছির খান প্রমুখ। মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সন্তানের লড়াই ছবির গল্পে প্রাণ ছিল। তৎকালীন সময় ছবিটি রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে।

 

আম্মাজান (১৯৯৯) : কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শবনম। সন্তানের সামনে মায়ের সম্ভ্রমহানি ও তারই প্রতিশোধ নিতে মত্ত থাকা সন্তানের গল্পের ছবি ‘আম্মাজান’। মূলত মা ও নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের ছবি এটি। এখানে আরও অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী, আমিন খান ও ডিপজল।

 

ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯) : শিমলা অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ম্যাডাম ফুলি। ছবিটির পরিচালক ছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন। এই চলচ্চিত্রে অসহায় নারীর জীবনসংগ্রামের চিত্র মর্মস্পর্শীরূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। শিমলা ও ফুলি দুটি চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

 

অগ্নি (২০১৩) : আরেফিন শুভ ও মাহি অভিনীত প্রথম ছবি ‘অগ্নি’। এ ছবির মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো পুরোপুরি অ্যাকশনধর্মী নায়িকা হিসেবে দর্শকের সামনে আসেন মাহি। ছবিটিতে তুলে ধরা হয় এক নারীর লড়াইয়ের গল্প। ব্লকবাস্টার হিট হয় ছবিটি।

 

এ ছাড়াও : বেহুলা, সুন্দরী, খায়রুন সুন্দরী, বিদ্রোহী পদ্মা, শাস্তি, শোভা, মহুয়া সুন্দরী, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, সুন্দরী বধূ, মৌসুমী, চার সতীনের ঘরসহ আরও অনেক ছবি আছে, যা নারীপ্রধান হিসেবে ঢাকাই ছবিকে সমৃদ্ধ করেছে।

সর্বশেষ খবর