রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

যেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে চলচ্চিত্র

যেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে চলচ্চিত্র

আজ ৩ এপ্রিল ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের এই দিনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই দিনকে স্মরণ করে ২০১২ সালে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করা হয়। দুঃখের বিষয় হলো নানা প্রতিকূলতায় গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প স্থবির হয়ে আছে। কীভাবে ঢাকাই ছবির এই দুরবস্থা কাটিয়ে সুদিন ফেরানো যায় এ বিষয়ে চলচ্চিত্রকার ও চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতামত তুলে ধরেছেন-  আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্রকারদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সুচন্দা

সৃষ্টিশীল মানুষের বিচরণ ভূমি হচ্ছে চলচ্চিত্র জগৎ। চলচ্চিত্রকার ও তাঁদের সৃষ্টি দেখে দেশ-বিদেশের মানুষ দেশীয় কৃষ্টি-কালচার, সমাজ, পরিবার সম্পর্কে জানবে, জ্ঞান আহরণ করবে আর দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা প্রদর্শন করবে। কিন্তু এখন হচ্ছে এর বিপরীত। এ জগৎ হচ্ছে শিক্ষিত মানুষের লীলাভূমি। এখানে কেন দলাদলি, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, কাদা ছোড়াছুড়ির মতো ঘটনা ঘটবে। আমি বলব এখনো সময় আছে দেশের এই প্রধান গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটিকে পুনরায় শ্রদ্ধা ও সৃষ্টির আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চলচ্চিত্রকারদের শিল্পটির উন্নয়নে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে বোধ তৈরি হতে হবে : সোহেল রানা

দীর্ঘদিন আগেই নানা কারণে আমাদের চলচ্চিত্র জগৎ কোমায় চলে গেছে। তাই এ জগৎকে নিয়ে এখন হাহাকার করা ছাড়া আর কিছু নেই। কারণ সবাই ব্যস্ত নিজেদের স্বার্থ হাসিলে। চলচ্চিত্র জগৎকে বাঁচিয়ে তুলতে কারও কোনো মাথাব্যথা দেখি না। বর্তমান সরকার কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই চলচ্চিত্র জগৎকে সমুন্নত রাখতে সহযোগিতার কোনো কমতি রাখছে না। এরপরও যদি আমাদের চলচ্চিত্রের মানুষের মধ্যে বোধ তৈরি না হয় তাহলে তো বলার আর কিছু নেই।

 

শিক্ষিত মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে : ববিতা

নবাব বংশের হাত ধরে এ দেশের চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয়েছে। এরপর শিক্ষিত ও রুচিশীল মানুষ এই শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিল বলে কমপক্ষে আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট ছিল। একসময় এই শিল্পে কিছু অশিক্ষিত ও অসাধু মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটলে দুঃখজনকভাবে শিল্পটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে দর্শক এ দেশের চলচ্চিত্রের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। এ অবস্থা দূর করতে হলে শিক্ষিত, রুচিশীল ও আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রশিক্ষিত মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।

 

মধ্যস্বত্বভোগীদের দূর করতে হবে : অনুপম হায়াৎ

প্রযুক্তিগত, নির্মাণগত, প্রতিভাগত ও ঐক্যের সংকট শিল্পটিকে অস্তিত্ব সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। একসময় এই শিল্পে মধ্যস্বত্বভোগী বলে কোনো পক্ষ ছিল না। হঠাৎ করে এই পক্ষের উদ্ভবের কারণে প্রযোজকদের প্রতি মুহূর্তে তাঁদের হাতে নাকাল হতে হচ্ছে। এমনিতেই চলচ্চিত্রের ব্যবসা মন্দা। এর ওপর যদি এই পক্ষ অযৌক্তিকভাবে প্রযোজকদের কাছ থেকে বিশাল একটি টাকার অঙ্ক হাতিয়ে নেয় তাহলে প্রযোজকদের পথে বসতেই হবে। নিয়ম হচ্ছে পণ্য উৎপাদনকারী সরাসরি তাঁর পণ্য বাজারজাত করবে। এখানে তৃতীয় পক্ষের কী দরকার। চলচ্চিত্রের সব পক্ষ মিলে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

 

চলচ্চিত্র শিল্পের মান অক্ষুণ রাখতে হবে : কাজী হায়াৎ

চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম। চলচ্চিত্র দেশ, সমাজ ও পরিবার বিনির্মাণে প্রচুর ভূমিকা রাখে। চলচ্চিত্র না থাকলে সচেতনতা সৃষ্টির অভাবে দেশ, সমাজ ও পরিবারের অনেক ক্ষতি হবে। আবার বলতে পারি চলচ্চিত্র হচ্ছে আবেগ তৈরির কারখানা। চলচ্চিত্র দেখে দর্শক ভালো কিছু শিখতে পারে। তাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত সবারই এ শিল্পের মান-মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার দিকে দৃষ্টি দেওয়াটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কারণ চলচ্চিত্রের প্রতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি থাকে।

 

ছবির অভাব পূরণ করতে হবে : ইফতেখার নওশাদ

সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে কনটেন্ট দরকার। যা পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। যেসব ছবি নির্মাণ হচ্ছে তাতে মানের অভাব রয়েছে। মাঝে মধ্যে দুই-একটি ভালো ছবি দিয়ে সিনেমা হলের সারা বছরের খরচ তুলে আনা অসম্ভব। বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণে কলকাতার বাংলা ছবি দুই দেশে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হবে। এতে সিনেমা হলে দর্শক ফিরবে এবং তাহলেই সিনেমা হলের পরিবেশ ফেরাতে এবং সংস্কারে অর্থ ব্যয়ে সক্ষম হবে সিনেমা হল মালিকরা।

 

ছবি নির্মাণ বাড়াতে হবে : কাজী শোয়েব রশীদ

স্থানীয়ভাবে ছবি নির্মাণ কমেছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্মত ছবি নির্মাণ বাড়াতে হবে। চলচ্চিত্র বিনিময়ের ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। নতুন নীতিমালার অসঙ্গতির কারণে যৌথ প্রযোজনাও বন্ধ রয়েছে। সিনেমা হল উন্নত করতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বিদেশি ছবি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে দুই দেশে একসঙ্গে মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে চলচ্চিত্র শিল্প।

সর্বশেষ খবর