মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

কণ্ঠশিল্পী থেকে অভিনয় শিল্পী তারা

কণ্ঠশিল্পী থেকে অভিনয় শিল্পী তারা

কণ্ঠশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কিংবা শখের বশেই হোক, ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি সখ্য ছিল তাঁদের। গাইতে গাইতে একসময় ঘটনাচক্রে অভিনয় জগতে চলে আসেন তাঁরা। এমন কয়েকজন বাংলাদেশি অভিনয় শিল্পীর কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

রুনা লায়লা

রুনা লায়লাকে বলা হয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী। বিশ্বের ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি। বাংলাদেশের মতো ভারত আর পাকিস্তানেও বেশ জনপ্রিয় রুনা লায়লা। তাঁর শিল্পী ইমেজকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৫ সালে চাষী নজরুল ইসলাম তাঁকে নিয়ে নির্মাণ করেন একটি রোমান্টিক থ্রিলার মুভি ‘শিল্পী’। ১৯৯২ সালের আমেরিকান মুভি The Bodyguard এর আদলে নির্মিত হয় এটি। রুনা লায়লার জীবনকাহিনি নিয়েই ছবিটি নির্মিত হয়। এরপর অবশ্য তাঁকে আর কোনো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।  

 

জাফর ইকবাল

ঢালিউডের অন্যতম স্টাইলিশ হিরো জাফর ইকবালকে অনেকেই শুধু অভিনেতা হিসেবে জানেন। কিন্তু তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি একজন সংগীতশিল্পী ও ভালো গিটারবাদক। খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী আনোয়ার পারভেজ ও শাহনাজ রহমতুল্লাহর ছোট ভাই হিসেবে তিনি ছোটবেলা থেকেই সংগীতের অনুকূল পরিবেশে বড় হয়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৬৬ সালে Rambling Stones নামের একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। তখন তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কনসার্ট করতেন। এরই মধ্যে এক দিন খান আতাউর রহমানের নজর কাড়েন তিনি। ১৯৬৯ সালে খান আতার ‘আপন পর’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে ঢালিউডে অভিষেক হয় তাঁর। অভিনেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। ১৯৯১ সালের ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪০ বছর বয়সে কিডনি জটিলতায় এই চিরসবুজ চিত্রনায়ক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  

 

আঁখি আলমগীর

ছোটবেলা থেকেই মা গীতিকবি খোশনূর আলম ও বাবা অভিনেতা আলমগীরের উৎসাহে গান শেখেন ও করেন আঁখি আলমগীর। ১৯৮৪ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রে কিশোরী জরি চরিত্রে অভিনয় করেন শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এরপর আর কোনো ছবিতে অভিনয় না করে গানেই মনোযোগী হন তিনি। আঁখি প্রথম চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন বিদ্রোহী বধূ (১৯৯৪) চলচ্চিত্রে। বর্তমান পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্র, স্টেজ, রেডিও ও টিভিতে নিয়মিত গান করে যাচ্ছেন।

 

তাহসান খান

নাট্যজগতে জনপ্রিয় মুখ তাহসান রহমান খান প্রথমে কিন্তু কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে ‘ব্ল্যাক’ ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংগীতের দুনিয়ায় জড়িয়ে পড়েন তাহসান। পরবর্তীতে ব্যান্ড ত্যাগ করে নিজস্ব ধারায় গান গাইতে শুরু করেন। একসময় গানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধারাবাহিক ও একক নাটক-টেলিফিল্ম এবং উপস্থাপনায়ও তাঁর পারফরম্যান্স দর্শকদের মনোমুগ্ধ করে। ২০১৯ সালে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘যদি একদিন’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর ঢালিউডে চিত্রনায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে। এরপর আর কোনো ছবিতে এখন পর্যন্ত অভিনয় করেননি তিনি।

 

নুসরাত ইমরোজ তিশা

গান দিয়েই জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিশার পথচলা শুরু হয়েছিল। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই সংগীতচর্চা শুরু তিশার। সুন্দর গান গেয়ে ১৯৯৫ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। সেই সময় ‘তিশা এঞ্জেল ফোর’ নামে একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে মডেলিং ও নাটকে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় গান থেকে কিছুটা দূরে সরে আসেন। ২০০৯ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার’ সিনেমার মধ্য দিয়ে তাঁর ঢালিউডে অভিষেক হয়। এরপর আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন তিশা। 

 

এস ডি রুবেল

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেলের ‘আমার একটা সাথী ছিল দেশের বাড়িতে’, ‘লাল বেনারসি’, ‘অনেক বেদনা ভরা আমার এ জীবন’-এর মতো জনপ্রিয় বিরহের গানের এই শিল্পী সমসাময়িক গায়কদের মধ্যে দেখতে বেশ সুদর্শন। তাই অনেক পরিচালকই তাঁকে নায়ক হিসেবে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব দিতেন। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’ সিনেমায় শাবনূরের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। বর্তমানে স্বপন চৌধুরী পরিচালিত আপকামিং ‘বৃদ্ধাশ্রম’ সিনেমায় তাঁকে আবার দেখা যাবে চিত্রনায়িকা ববির বিপরীতে। 

 

মেহের আফরোজ শাওন

শাওন ছোটবেলা থেকেই নাচের সঙ্গে গানের চর্চা করতেন। ‘এসো গান শিখি’ টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর প্রথম টেলিভিশনে আসা। তিনি ১৯৮৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে তুরস্কে গিয়ে রেডিওতে গান করেন। ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর ঢালিউডে অভিষেক ঘটে। পরবর্তীতে তিনি বেশ কিছু সিনেমা করেন যেমন দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া ও আমার আছে জল সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েকটিতে প্লেব্যাকও করেন। ২০১৬ সালে তিনি ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নামের একটি সিনেমাও পরিচালনা করেছিলেন।

 

রাশেদ উদ্দীন তপু

জনপ্রিয় গায়ক তপুর ‘এক পায়ে নূপুর তোমার’, ‘মেয়ে, তুমি এখনো আমায় বন্ধু ভাব কি’, ‘একটা গোপন কথা ছিল বলবার বন্ধু’- এমনই বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী তপু। খুব অল্প সময়েই তরুণ-তরুণীদের পছন্দের তালিকায় চলে আসেন তিনি। যার ধারাবাহিকতায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁকে কাস্ট করেন ‘থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার’ সিনেমায় নায়িকা তিশার বিপরীতে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটিই তপুর একমাত্র সিনেমা। তপু সমালোচকদের পছন্দে সেরা অভিনেতা হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।

 

মমতাজ

বাংলাদেশের সুরসম্রাজ্ঞীখ্যাত মমতাজ বেগম আরেকজন কিংবদন্তি গায়িকা। ৭০০+ একক অ্যালবামে কণ্ঠ দেওয়া এই জনপ্রিয় শিল্পী পালা গান থেকে শুরু করে প্লেব্যাক পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০৫ সালে তাঁর যখন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, তখন পরিচালক উত্তম আকাশ তাঁকে নিয়েই তাঁর বায়োপিক সিনেমা ‘মমতাজ’ নির্মাণ করেছিলেন। এই ছবিটিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি ও হেলাল খান। 

 

ইরিন জামান

ছোটবেলায় মায়ের কাছে সংগীতের ব্যাপারে হাতেখড়ি নেন ইরিন জামান। সিনেমায় আসার আগে ‘মধুরাত’ নামে তাঁর একটি একক গানের অ্যালবামও প্রকাশ হয়েছিল। বড় বোন মৌসুমীর মতো তাঁরও  ঢালিউডে নায়িকা হিসেবে ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছিল ইরিন জামানের প্রথম সিনেমা। সেই সিনেমাটি চিত্রনায়ক শাকিব খানেরও প্রথম সিনেমা ছিল। এরপর অনিয়মিতভাবে সোনার ময়না পাখি, উল্টা পাল্টা ৬৯ প্রভৃতি সিনেমায় কাজ করলেও ইরিন শেষ পর্যন্ত ফিরে গেছেন গানের জগতে।

 

আগুন

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমানের পুত্র আগুনের সংগীত জীবন শুরু হয় ‘সাডেন’ ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে। ১৯৯২ সালে সালমান শাহর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় প্লেব্যাকের মাধ্যমে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এরপরই দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন আগুন। ১৯৯৭ সালে বাবা খান আতাউর রহমানের ‘এখনো অনেক রাত’ সিনেমায় সহনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে তাঁর ঢালিউডে প্রথম অভিষেক হয়। এরপর তিনি নিয়মিত প্লেব্যাকের পাশাপাশি ঘেটুপুত্র কমলা, ’৭১-এর মা জননী ও অমি ও আইসক্রিমওয়ালা, মায়াবতী সিনেমায় অভিনয় করেন।

সর্বশেষ খবর