সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ই ন্টা র ভি উ

দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তামিল ছবিই হতে পারে উদাহরণ

শা কি ব খা ন

দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তামিল ছবিই হতে পারে উদাহরণ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এ সময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক-নায়কোত্তম শাকিব খানের দর্শক ক্রেজ এখনো তুঙ্গে। কমপক্ষে প্রায় দুই দশক ধরে সাধারণ সময় তো বটেই উৎসবের ঈদেও দর্শক ও সিনেমা হল মালিকদের আকাশছোঁয়া আগ্রহে মুক্তি পায় এই শীর্ষনায়ক অভিনীত একাধিক ছবি। আসন্ন ঈদেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মুক্তি পাচ্ছে কিং খানের ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’।  ঈদের ছবি ও চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুঠোফোনে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

দেশীয় চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনেও একসঙ্গে আপনার একাধিক ছবি মুক্তি পায়, অনুভূতি কেমন?

সবই আমার প্রতি সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপা, আর দর্শক প্রদর্শকদের অবারিত ভালোবাসা। আমি সবসময় আমার দেশ ও দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি বলেই আজ আমার এই  প্রাপ্তি। আসলে দর্শকই আমার সব। তারা আমার পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করছে বলেই আজ আমি নায়ক শাকিব খান। আমার প্রিয় দর্শক প্রদর্শকদের প্রতি রইল আসন্ন ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। সবার প্রতি আমার প্রত্যাশা ও অনুরোধ আপনারা সিনেমা হলে গিয়ে ঈদের ছবিগুলো দেখুন ও দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনুন।

 

আমাদের চলচ্চিত্রের এই দুর্দিন কাটবে কীভাবে?

দেখুন, বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বের ছোট ছোট দেশের চলচ্চিত্রশিল্প দেশের মানুষের ভালোবাসা ও মানসম্মত নির্মাণে অনেক বড় জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের চলচ্চিত্র এর বিপরীত পথে হাঁটছে। এর জন্য বর্তমানে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত কিছু দুর্নীতিবাজ ও এই শিল্পটিকে ধ্বংসের নীল নকশায় যুক্ত মানুষ দায়ী। এরা ১০/১২ লাখ টাকায় ছবি নির্মাণের অলৌকিক স্বপ্ন দেখিয়ে আর ভুলভাল সিনেমা বানিয়ে বলছে চলছে না। আসলে এরা নিজের স্বার্থ হাসিল ও চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংসের নীল নকশা বাস্তবায়নে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচানো সরকারেরই দায়িত্ব। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব, এদের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচান। এসব দুষ্কৃতকারীকে প্রতিহত করতে প্রকৃত চলচ্চিত্রকারদের এখনই সচেতন হতে হবে।

 

চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কোনো আশার আলো কী দেখছেন?

আমি নিরাশ নই, অনেকেই ভালো কাজ করছেন,  দেশের চলচ্চিত্রকে যারা সত্যিই ভালোবাসেন তারা এর উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখনো ছবির টিজার, পোস্টার এবং গান প্রকাশ হলে দর্শক তাতে সীমাহীন আগ্রহ দেখায়। মনে রাখতে হবে মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম একটি হলো বিনোদন। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই বিনোদন পেতে সবশ্রেণির মানুষের চাহিদা রয়েছে। আমরা যদি হলিউডের দিকে তাকাই তাহলে দেখি করোনাকালেও স্পাইডার ম্যান, নো টাইম টু ডাই এবং বর্তমানে ভারতের তামিল ছবি পুষ্পা, আর আর আর, কেজিএফ টু সহ বিশ্বের অনেক দেশের ছবি অপ্রত্যাশিত ব্যবসা করছে।  কোরিয়ান ছবি অস্কারে সম্মানিত হচ্ছে। আজ থেকে এক যুগ আগেও তামিল ছবি দেখতে কেউ আগ্রহ দেখাত না। বলতে গেলে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষ নাক সিটকাতো। কিন্তু তামিল রাজ্যের মানুষ নিজেদের ছবির প্রতি অবারিত ভালোবাসা ধরে রেখেছিল বলেই নির্মাতারও উৎসাহ ও সাহস পেয়ে আরও উন্নত ছবি নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। এর ফলাফল আজ বিশ্বের কাছে এক নম্বর জনপ্রিয় ছবি হিসেবে তামিল ছবি জায়গা করে নিয়েছে। খোদ ভারত জুড়েই এখন হিন্দি আর অন্য ভাষার ছবির চেয়ে তামিল ছবি দেখতেই সবাই আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাহলে আমাদের দেশ কেন তা পারবে না। তাই বলব দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে তামিল ছবি উদাহরণ হতে পারে। চলচ্চিত্র হচ্ছে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আমেরিকায় দেখছি এই উন্নত জাতির দেশটিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মানুষ পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে ছুটে যায়, ‘বিনোদন ও শিক্ষা অর্জনে ছবি দেখতে হবে’ এই বোধ যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের মানুষের মধ্যে কাজ করে বলেই তাদের চলচ্চিত্র আজ সফলতার মুখ দেখছে। আমাদের দেশের মানুষেরও বুঝতে হবে এটি আমাদের চলচ্চিত্র। ভালোবাসতে হবে নিজেদের চলচ্চিত্রকে। তাহলেই আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্ব জয় করবে। যারা এখনো মানসম্মত ছবি নির্মাণ করছে তাদের ছবি সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে হবে, তাহলে এসব নির্মাতা আরও ভালো ছবি নির্মাণে বহুগুণে উৎসাহিত হবে। পাশাপাশি সরকারকেও চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতা করার সঙ্গে সঙ্গে এই শিল্পের নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সজাগ হতে হবে। মনে রাখতে হবে একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্রের উন্নয়ন কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়।

 

ঈদে মুক্তি প্রতীক্ষিত আপনার ছবি দুটি নিয়ে দর্শকদের কী বলবেন?

প্রিয় দর্শকদের বলব অসাধারণ গল্প ও নির্মাণের ছবি হলো গলুই এবং বিদ্রোহী। ‘গলুই’ পিরিওডিক্যাল রোমান্টিক ছবি। এতে বিনোদনের পাশাপাশি দেশের কৃষ্টি কালচার ও ঐতিহ্যের চিত্র সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দেশের স্বকীয়তা ফুটিয়ে ওঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ‘বিদ্রোহী’ হলো অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড ছবি। এটিতেও বিনোদনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। করোনা পরবর্তীকালে এ দুটিই হচ্ছে সিনেমা হলে মুক্তি  পেতে যাওয়া আমার নতুন ছবি। আমার বিশ্বাস দর্শকের ভালোবাসায় এই সুন্দর, মার্জিত ও পরিচ্ছন্ন গল্পের ছবি দুটো সফল হবে এবং এই সফলতার মাধ্যমে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

সর্বশেষ খবর