সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রিয় কবরী আপা আপনি চিরশান্তিতে থাকুন

একটা অনুরোধ আছে : ববিতা

একটা অনুরোধ আছে : ববিতা

আমি উনার ভক্ত ছিলাম। তার সঙ্গে মস্কো ফিল্ম  ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম। এত এত দশকে অজস্র আড্ডায়  সময় পার করলেও তার সঙ্গে কাজ করেছি মাত্র দুটিতে।

কবরী আপা অভিনীত ‘সুতরাং’ ছবি দিয়েই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছিল। সেই ১৪ বছর বয়সে ছবিটিতে কী অসাধারণ অভিনয় ছিল তার যা ভাবাও যায় না। কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা অতুলনীয়। চলচ্চিত্রে তার ডেডিকেশন কখনো কেউ ভুলতে পারবে না। এদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্ত কাল। তার চলে যাওয়ার প্রথম বার্ষিকীতে এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রইল। গত বছরের এমন একটি মাসে টানা ১২ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে  গেছেন প্রিয় কবরী আপা। চলে  গেছেন পরপারে। তিনি যখন হাসপাতালে প্রতিক্ষণ তার আপডেটের জন্য টিভির দিকে চেয়ে থাকতাম। ভাবতাম তার মতো একজন দৃঢ় মনোবলের মানুষ অবশ্যই অসুস্থতাকে জয় করে ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে। সেই প্রতিক্ষার একসময় অবসান হলো সত্যি কিন্তু আপা আর ফিরে আসলেন না। শুধু আমাদের চলচ্চিত্র জগৎ নয়, দেশের জন্যই বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। কারণ তিনি এদেশের চলচ্চিত্র আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান ও দান কখনই কেউ পূরণ করতে পারবে না। প্রখ্যাত অভিনেত্রীর প্রথম প্রয়াণ দিবসে গতকাল এভাবেই তার স্মৃতির অ্যালবামে দুঃখের নীল  তুলির আঁচড় দিয়ে বিষাদের চিত্র আঁকলেন তারই সহকর্মী আরেক নন্দিত অভিনেত্রী ববিতা। এক বছর পেছনে ফিরে ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিলের শোকের অন্ধকারে ফিরে গিয়ে ববিতা তার স্মৃতিচারণায় দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন-‘সেই রাতে (১৭ এপ্রিল, ২০২১) আমার বিশ্বাস ভেঙে গেল। তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য রাত ১টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছি, ঠিক তখনই একটা এসএমএস এলো- কবরী আপা নেই। আমি ভাবলাম, এটা নায়ক ফারুক ভাইয়ের মতোই হয়তো কোনো গুজব। বিশ্বাস করিনি। কিন্তু মনটা খচখচ করায় টিভিটা ছাড়লাম। তখন  দেখলাম, অবিশ্বাস্য সংবাদটি- কবরী আর  নেই! কবরী আপার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক বছরের। কয়েক দশক আমরা একই জায়গায় (বিএফডিসি) কাজ করেছি। ১৯৬৯ সালে জহির ভাইয়ের (জহির রায়হান) ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির শুটিং করতে এফডিসিতে যাই, তখনই কবরী আপা রাজ্জাক ভাইকে শুটিং করতে দেখি। তাদের ‘ময়নামতি’ নামের ছবি আমি নিজে হলে গিয়ে দেখেছি। আমি উনার ভক্ত ছিলাম। তার সঙ্গে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম। এত এত দশকে অজস্র আড্ডায় সময় পার করলেও তার সঙ্গে কাজ করেছি মাত্র দুটি ছবিতে। এর মধ্যে ‘সোনার হরিণ’ সিনেমায় প্রথম কাজ করি (পরিচালক সিরাজুল ইসলাম)। এতে অনেক তারকাই ছিলেন (কবরী, শাবানা, ববিতা, রাজ্জাক, বুলবুল আহমেদ, সুচরিতা)। তবে আমাদের শুটিং হয়েছিল আলাদা। সর্বশেষ কাজ করি ‘রাজা সূর্য খাঁ’ ছবিতে। ২০১০ সালের কথা, তখন কবরী আপা সংসদ সদস্য। ছবির পরিচালক গাজী মাহবুব বললেন, ‘আমি চাচ্ছি, আপনারা দুজন কাজটা করেন।’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা, আমি নিজে কবরী আপাকে ফোন দিচ্ছি।’ আমি  ফোন দিয়ে বললাম, ‘আপা আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।’ তিনি বললেন, ‘কী বলো!’- আপনি এই ছবির জন্য শিডিউল দেন, আমিও দেই। দুজনে একসঙ্গে কাজটা করি।- তুমি বলছ কাজ করতে? ঠিক আছে।- আমি জানি, আপনি অনেক ব্যস্ত। নারায়ণগঞ্জে যেতে হয়, কাজ করতে হয়। তবে আপনার এ কাজটা করতে হবে। এ কাজ করার সময়ই অনেক আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়। আমরা যেন পুরনো দিনগুলোতে ফিরে যাই। কত শত স্মৃতি, আলোচনা। সর্বশেষ রাজ্জাক ভাই যখন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, তখন এফডিসিতে আবার দেখা হয়েছিল কবরী আপার সঙ্গে। এভাবে বিদায় নেবেন প্রিয় কবরী আপা- তা ভাবিনি। প্রিয় আপার শোকের ভার বহন করা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য। আপা আপনি পরপারে চির শান্তিতে থাকুন এই আমার প্রার্থনা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর