শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সাংবাদিকতা নিয়ে বলিউড চলচ্চিত্র

সাংবাদিকতা নিয়ে বলিউড চলচ্চিত্র

সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্রের গল্প অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। সাংবাদিকতাকে ঘিরেও আবর্তিত হয় বিশ্বের নানা দেশের চলচ্চিত্রের গল্প। কখনো তা হয় গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে, কিংবা কখনো মূল ঘটনার সহায়ক গল্প হিসেবে।  এমন কিছু বলিউড চলচ্চিত্রের গল্প তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

দিল সে

তামিল ইন্ডাস্ট্রির বিখ্যাত পরিচালক মনি রত্নম পরিচালিত এবং প্রযোজিত চলচ্চিত্র ‘দিল সে’ নব্বইয়ের দশকের অন্যতম সাড়া-জাগানো একটি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি রোমান্টিক-থ্রিলার ঘরানার। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান ও মনীষা কৈরালা। চলচ্চিত্রটির কাহিনি আবর্তিত হয় ভারতের রাজনৈতিক জটিলতা, সরকারি নানা আগ্রাসনের প্রভাবে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী দল ও এর কার্যক্রম। সন্ত্রাসবাদী দলের সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া এক সাংবাদিক এবং তার সঙ্গেই সেই দলের এক নারী সদস্যের ভালোবাসার গল্প নিয়ে। একজন সংবাদকর্মীর ঝুঁকির মুখে তথ্য সংগ্রহ, নানা সীমাবদ্ধতা, বিশেষ ক্ষেত্রে আবেগ ও অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার ফলাফল এবং স্বাধীনতাকামী কিন্তু সন্ত্রাসবাদী চরিত্রের নানা ঘটনার মিশেলে এগিয়েছে ‘দিল সে’ সিনেমার গল্প।

 

ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি

২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া আজিজ মির্জা পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি কমেডি-ড্রামা ঘরানার। মূল চরিত্রে ছিলেন শাহরুখ খান, জুহি চাওলা এবং পরেশ রাওয়াল। শাহরুখ খান এবং জুহি চাওলা দুজনই এতে অজয় বখশি ও রিয়া ব্যানার্জি নামক দুই সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেন। শুধু প্রচার-প্রসারের লোভে সাংবাদিক অজয়ের একটি ভুল এবং সেই ভুলের সূত্র ধরে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো গল্প নিয়ে এগোয় চলচ্চিত্রটির কাহিনি। রাষ্ট্র ব্যবস্থার নানা সমস্যা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার, গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগ ও মুখ বন্ধ করে রাখা এবং যত বড় সমস্যাই হোক না কেন, পর্যাপ্ত অনুসন্ধান ও সদিচ্ছার মাধ্যমে প্রতিবাদ ও সমস্যা নির্মূলে গণমাধ্যম কতটা কার্যকরী ফল রাখতে পারে, চলচ্চিত্রটি তা দেখিয়ে দিয়েছে।

 

পেজ থ্রি

মধুর ভান্ডারকর পরিচালিত চলচ্চিত্রটি ২০০৫ সালে মুক্তি পায়। বিনোদন জগতের নানা দেখা-অদেখা দিক, বিনোদন জগৎকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নানা মহলের রাজনীতি, বিনোদন সাংবাদিকতা নিয়ে এই চলচ্চিত্রের গল্প। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এক নারী সাংবাদিকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে নানা ঘটনা। কঙ্কনা সেন শর্মার সহজাত অভিনয়গুণে এর চিত্রায়ণ ও দৃশ্যায়ন প্রাঞ্জলতা পেয়েছে।

 

কাবুল এক্সপ্রেস

নিউইয়র্ক, এক থা টাইগার কিংবা বজরঙ্গি ভাইজানের মতো অধিক পরিচিত চলচ্চিত্রগুলোর পরিচালক কবির খানের পরিচালনা করা প্রথম চলচ্চিত্র ‘কাবুল এক্সপ্রেস’-এর কথা হয়তো অনেকে জানেন না। চলচ্চিত্রটির গল্প নাইন/ইলেভেন পরবর্তী আফগানিস্তানের মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে। এই চলচ্চিত্রের আগে আফগানিস্তান নিয়ে কবির খান বেশ কিছু ডকুমেন্টারিও বানিয়েছিলেন। চলচ্চিত্রটি ডকুমেন্টারি না হলেও ডকুমেন্ট ঘেঁষা ধরনের বলা যায়, প্রত্যক্ষদর্শী ও তথ্য সংগ্রহকারীর চোখে আফগানিস্তান যেমন, সেভাবেই এর চিত্রায়ণ করা হয়েছে। জন আব্রাহাম, লিন্ডা আর্সেনিও এবং আরশাদ ওয়ারসি এতে সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

পিপলি লাইভ

আনুশা রিজভির পরিচালনায় প্রান্তিক কৃষকদের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে। গ্রামের এক সাধারণ কৃষকের দুর্দশাময় জীবন, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত ইত্যাদি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমের প্রভাব নিয়েই চলচ্চিত্রটির কাহিনি এগিয়েছে। আনুশা রিজভী ব্যক্তিগত জীবনে সাংবাদিক ছিলেন। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা খুব ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি কাহিনিতে। সমাজের নানা ঘটনাকে রাজনীতিবিদরা এবং কিছু গণমাধ্যম যেভাবে নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করে-রিজভি সেটির বিদ্রƒপাত্মক এবং কিছুটা হাস্যরসাত্মকভাবে চিত্রায়ণ করেছেন।

ভারতের কিছু প্রদেশে কৃষকদের গণ-আত্মহত্যার সত্য কাহিনির ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি। ওমাকার দাস মানিকপুরি, রাঘুবির যাদব, মালাইকা শেনয়, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী এতে অভিনয় করেন।

 

রান

রাম গোপাল ভার্মা পরিচালিত ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি রাজনৈতিক থ্রিলার ঘরানার। অমিতাভ বচ্চন, রিতেশ দেশমুখ, মহেশ রাওয়াল প্রমুখ অভিনয় করেছেন প্রধান চরিত্রগুলোতে।

 

নো ওয়ান কিলড জেসিকা

রাজকুমার গুপ্ত পরিচালিত থ্রিলার ঘরানার চলচ্চিত্রটি ২০১১ সালে মুক্তি পায়। দিল্লিতে জেসিকা লাল নামক এক মডেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী হত্যার ঘটনাকে ঘিরে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি। হরিয়ানা রাজ্যের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা বিনোদ শর্মার ছেলে মানু শর্মা রেস্টুরেন্টের ভেতরে গুলি করে হত্যা করে জেসিকা লালকে। বিদ্যা বালান এতে জেসিকার বড় বোন সাবরিনার চরিত্রে অভিনয় করেন। রানী মুখার্জি অভিনয় করেন এক সাংবাদিকের চরিত্রে, যার সাহায্যেই সাবরিনা শেষ পর্যন্ত তার বোন হত্যার বিচার পান।

রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে কোনো অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে এবং আপাতদৃষ্টিতে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই এমন মনে হলেও সঠিক অনুসন্ধান, অপরাধের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সোচ্চার হওয়া, জনমত গড়ে তুলতে প্রচারণা চালানো ইত্যাদির মাধ্যমে ন্যায্য বিচার পাওয়া সম্ভব- এ কথাগুলোই যেন বলতে চেয়েছে চলচ্চিত্রটি।

সর্বশেষ খবর