বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সিনেমা হল সংকটে ঢাকাই ছবি

সিনেমা হল সংকটে ঢাকাই ছবি

দেশে এখন হাতে গোনা সিনেমা হল। এই স্বল্পসংখ্যক হলে বিগ বাজেটের ছবি মুক্তি দিয়ে মুনাফা দূরে থাক মূল টাকার সামান্য অংশও ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। সিনেমা হলের অভাবে এই ঈদে একাধিক ছবি মুক্তি দিতে গিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে হাহাকার বাড়ছে। এ সংকট ও সমাধানের বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র সংগঠনের নেতাদের বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

প্রয়োজনে ছবি আমদানি : কাজী হায়াৎ

 

-------- প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা

সিনেমা হল বাঁচাতে ছবি প্রয়োজন। আর সিনেমা হলে দর্শক ফেরাতে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি দরকার। দেশে যখন প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয় তার আগেও কিন্তু এখানে সিনেমার ব্যবসা ছিল। বিদেশি ছবি বিশেষ করে কলকাতা, বুম্বাই, লাহোরের ছবি এখানে প্রদর্শিত হতো। এখন যেহেতু ছবির পরিমাণ কম, তাই বিদেশি ছবি আমদানি করা যেতেই পারে। সরকার সিনেমা নির্মাণে অনুদান দিচ্ছে। এই অনুদানের টাকা বরাবরই পেয়ে আসছে আর্টফিল্ম টাইপের ছবিগুলো। এই অনুদানের অর্থের একটি অংশ যদি বাণিজ্যিক বা মূলধারার ছবি নির্মাণে দেওয়া হতো তাহলে নির্মাতারা বেশি পরিমাণে মানসম্মত ছবি নির্মাণে উৎসাহিত হতো এবং প্রদর্শকদের তখন আর বিদেশি ছবি আমদানির চিন্তা করতে হতো না এবং সিনেমা হল বেঁচে যেত। সরকার সিনেমা হলের উন্নয়নে যে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে ঠিক একইভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্যও ঋণ দেওয়া জরুরি। তা না হলে সিনেমা হল বাঁচাতে প্রয়োজনে সিনেমা আমদানি করতে দিতে হবে।

 

পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবির অভাব : কাজী শোয়েব রশীদ

-----সভাপতি, প্রদর্শক সমিতি

শুধু ঈদের সময় পর্যাপ্ত, মানসম্মত ও সময় উপযোগী ছবি পাওয়া যায়। বাকি সারা বছর এর চরম অভাব থাকে। ফলে এই অভাবের কারণে দর্শক সিনেমা হলে আসে না। তাই লোকসান গুনতে গুনতে নাকাল হয়ে সিনেমা হল মালিককে সিনেমা হল বন্ধ করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।  এর সমাধান অত্যন্ত সহজ বলে আমি মনে করি। সিনেমা হল মালিকদের যদি প্রযোজকরা সারা বছর ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় উপযোগী ও মানসম্মত ছবি দিতে পারে তাহলে এক্ষেত্রে সংকট বলে আর কিছুই থাকে না। তখন শপিং মল মালিকরাও উৎসাহিত হয়ে শপিং মলে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করবে। আরেকটি বিষয় হলো সিনেমা হল যেন মূল মালিকদের হাতে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মৌসুমি হল মালিকদের হাতে সিনেমা হল চলে যাচ্ছে বলে এক্ষেত্রে বাড়তি সংকট যোগ হচ্ছে।

 

প্রদর্শক-প্রযোজককে আলোচনায় বসতে হবে : খোরশেদ আলম খসরু

------ সাবেক সভাপতি, প্রযোজক পরিবেশক সমিতি

করোনাকাল শুরুর আগে দেশে যতসংখ্যক সিনেমা হল ছিল গত দুই বছরে করোনার কারণে সিনেমা হল বন্ধ থাকায় লোকসান গুনে মালিকরা সিংহভাগ সিনেমা হলই বন্ধ করে দিয়েছে। এখন অর্ধশতের মতো সিনেমা হল চালু আছে। ঈদে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে আরও হয়তো ২০ থেকে ৩০টি হল খুলতে পারে। তারপরও এই অল্পসংখ্যক সিনেমা হল দিয়ে কি হবে। এবারের ঈদে তিনটি ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে, কিন্তু একটি ছবির ক্ষেত্রে ৩০টি সিনেমা হলও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এ সময় ঈদে একটি ছবি প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ সিনেমা হল পেত। বর্তমানে স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে বিগ বাজেটের একটি ছবি মুক্তি দিতে গিয়ে নির্মাতাকে আর্থিক লোকসানের কারণে পথে বসতে হচ্ছে। এর সমাধান হলো প্রযোজক আর প্রদর্শকদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করে দুপক্ষকেই এ সংকট উত্তরণে সচেষ্ট হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

 

এক বছরের পরিকল্পনা নিচ্ছি : সোহানুর রহমান সোহান

-------- সভাপতি, পরিচালক সমিতি

২০ থেকে ৩০ লাখ টাকায় যদি ছবি বানানো হয় তাতে কী মান থাকে? এসব মানহীন ছবি দর্শক কেন দেখবে? মানসম্মত পর্যাপ্ত ছবি ও দর্শকের অভাবে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে এই সংকট তৈরি হয়েছে। সরকার সিনেমা হলের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু ছবির সংকটের কারণে সিনেমা হল মালিকরা এই ঋণ নিতে আগ্রহী নন। কারণ ছবি না থাকলে সিনেমা হলের ব্যবসা চলবে না এবং আয়ের অভাবে  ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সিনেমা হল বাজেয়াপ্ত হবে।

তাই এই সমস্যার সমাধানের জন্য আগের প্রথিতযশা নির্মাতাদের মতো ছবি নির্মাণ করতে হবে, যাতে তা দেখতে সিনেমা হলে দর্শক আসতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে ছবির অভাব পূরণ এবং মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি নির্মাণের জন্য আগামী এক বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। একই বিদেশি ছবি আমদানির পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সর্বশেষ খবর