সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
বি শে ষ সা ক্ষা ৎ কা র

ঈদের ছবির সাফল্যের খবরে আনন্দ পাচ্ছি

শা বা না

ঈদের ছবির সাফল্যের খবরে আনন্দ পাচ্ছি

‘বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, আর বাংলা চলচ্চিত্র আমাদের প্রাণের জীবন ছবি। দেশের চলচ্চিত্রের দীর্ঘ খরার পর শুনলাম এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো দর্শক সাড়া পেয়েছে। শুনে মনে আনন্দ হলো, খুব ভালো লাগল। আমি চাই মেধাবী ও সমৃদ্ধ কাজের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রের হারানো সুদিন আবারও ফিরে আসুক।’  কথাগুলো বললেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের বিউটি কুইন খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এ জনপ্রিয় অভিনেত্রীর কথা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

২০২০ সালে সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন, আবার আসার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

নিজের দেশ সবসময়ই সবার কাছে মায়ের মতো। আমি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রবাস জীবনযাপন করছি সত্যি, কিন্তু মনটা স্বাভাবিকভাবেই দেশে পড়ে থাকে। নিজের চলচ্চিত্র আঙিনা, মাটি ও দেশের প্রিয় মানুষের কথা সবসময় মনে পড়ে। বারবার দেশে আসার জন্য মনটা উদগ্রীব হয়ে থাকে। ২০২০ সালে সর্বশেষ দেশে গিয়ে আবার আমেরিকা ফিরে আসার পর কথা ছিল ওই বছরই আবার আসব। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় এখন পর্যন্ত আসা সম্ভব হয়নি। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে এলে শিগগিরই আসব।

 

সময় কীভাবে কাটছে?

ঘরের নানা কাজ নিয়ে বেশির ভাগ সময় কেটে যায়। আমি নিজের হাতে ঘরের কাজ করতে খুব পছন্দ করি। তা ছাড়া ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি ও স্বামী ওয়াহিদ সাদেকের সঙ্গে গল্প করি, নামাজ রোজা তো আছেই, টিভি দেখি পত্রিকা পড়ি। সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখি। বিশেষ করে দেশ আর আমার দেশের চলচ্চিত্রের খবর রাখার চেষ্টা করি। দেশের অনেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। দেশের খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি। এভাবেই এখানে আমার ব্যস্ত আর সুন্দর সময়গুলো কেটে যাচ্ছে। বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি বলেই সময়-সুযোগ পেলে মাতৃভূমি মায়ের কোলে ছুটে আসি।

 

ঈদ কেমন কাটালেন?

হ্যাঁ,  পরিবার নিয়ে ভালোই কেটেছে বলতে পারি। তবে দেশে ঈদ করার যে আনন্দ তা বিদেশ বিভূঁইয়ে কখনো পাওয়া যায় না। দেশে ঈদের যে আমেজ মানে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন আর কাছের মানুষকে নিয়ে ঈদ করে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তাতে ঈদকে সত্যিকারের উৎসব মনে হয়। যা দেশ ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। তারপরও বলব সৃষ্টিকর্তা যেখানে যে অবস্থায় রেখেছেন অনেক ভালো রেখেছেন। এ কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

 

আপনি তো দেশীয় চলচ্চিত্রের খবর রাখেন, এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবি নিয়ে কী বলবেন?

অবশ্যই, নিয়মিত চলচ্চিত্রের খবর রাখাকে নিজের দায়িত্ব মনে করি। দীর্ঘ খরার পর এবারের ঈদে শাকিব খানের দুটি ছবি ছাড়াও আরও দু-একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে এবং ভালো চলছে বলে শুনেছি। দেশীয় চলচ্চিত্রের পজিটিভ কোনো খবর পেলে খুবই আনন্দ লাগে। এমন খবরে দেশের এ প্রধান গণমাধ্যমটির আবার সুদিন ফেরার স্বপ্ন দেখি। আসলে আমি সব বিষয়ে একজন আশাবাদী মানুষ। আমার বিশ্বাস মেধাবী, দক্ষ ও সমৃদ্ধ কাজের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন অবশ্যই একদিন ফিরে আসবে।

 

দেশীয় চলচ্চিত্রের দুর্দিন দূরীকরণে ফের অভিনয় বা নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

না, অভিনয়ের সময় আর নেই। এখন আমি সংসার, পরিবার আর ধর্মকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই। হ্যাঁ তবে নির্মাণের ইচ্ছা আছে। এ ইচ্ছা অবশ্য আজকের নয়, ২০১০ সালের পর থেকে একাধিকবার নির্মাণে ফেরার উদ্যোগ নিয়েও দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের চলমান নানা প্রতিকূলতার কারণে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে এবার চিন্তা করছি দেশে ফিরলে আবার নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেব।

 

বর্তমান সময়ে শিল্পীদের মধ্যে বিরোধ নিয়ে কী বলবেন?

দেখুন, আমরা যারা ওই সময়ের শিল্পী ছিলাম তাদের কাছে কাজটাই ছিল মুখ্য। বলতে গেলে প্রার্থনার মতো। আমাদের মধ্যে কখনো কোনো বিভেদ ছিল না। মিলেমিশে সবাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেরা কাজ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কবরী, ববিতার সঙ্গেও অভিনয় করেছি।  ‘কাউকে পেছনে ফেলতে হবে এটা ভেবে কাজ করতাম না। চরিত্রটা কীভাবে সবার চেয়ে ভালো করব, সেই মনোভাব ছিল। আমার বিপরীতে বা পাশে কে, সেটা মাথায় থাকত না। চিন্তা করতাম আমার চরিত্রটা সবচেয়ে ভালো কীভাবে করব। আমাকে একজন গ্রামের মেয়ের চরিত্র করতে হবে কিংবা বড়লোকের মেয়ের চরিত্র করতে হবে- তখন আমি খেয়াল করতাম সে কীভাবে হাঁটে, কীভাবে চলে, কীভাবে বসে। সবচেয়ে বড় কথা, আমি ভাবতাম আমার চরিত্রটাই সবচেয়ে ভালো হতে হবে।  আসলে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি হচ্ছে সৃষ্টিশীল কাজের অঙ্গন।  এ অঙ্গনে বিরোধ তৈরি করে এখানকার পরিবেশটা কলুষিত করা মানে এ চলচ্চিত্র আর শিল্প সংস্কৃতির ধ্বংস ডেকে আনা।  যা দেশপ্রেমিক মানুষের কখনই কাম্য হতে পারে না।

সর্বশেষ খবর