শনিবার, ৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

অকাল প্রয়াত যত কণ্ঠশিল্পী

অকাল প্রয়াত  যত কণ্ঠশিল্পী

অকালে ঝরে গেছেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।  সম্প্রতি সে পথেই হাঁটলেন ভারতের প্রখ্যাত গায়ক কে কে। বিশ্বের যেসব কণ্ঠশিল্পী অকাল প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

এলভিস প্রিসলি

এলভিস প্রেসলি। জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৩৫, প্রিসলি ছিলেন মার্কিন রক সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়ক এবং সবচেয়ে বহুল বিক্রীত অ্যালবামের সংগীতশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে বিবেচিত, তাঁকে ‘কিং অব রক অ্যান্ড রোল’ বা ‘দ্য কিং’ নামে অভিহিত করা হতো। তিনি জীবনের শেষদিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। অনেকেই মাদকদ্রব্যই তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান। 

জুয়েল

বাংলাদেশে ৮০-এর দশকের শুরুতে কয়েকজন তারুণ্যদীপ্ত কণ্ঠশিল্পীর আবির্ভাব ঘটে, যাঁদের গানে সে সময়ের তরুণ-তরুণীরা উদ্বেলিত হয়-বিমোহিত হয়। যাঁদের গানে ৮০-এর দশকে অডিও ক্যাসেটের বাজার রমরমা ব্যবসায় পরিপূর্ণ হয়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কণ্ঠশিল্পী ছিলেন জুয়েল। মিষ্টিমধুর-শ্রুতিময় কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন জুয়েল। তাঁর কণ্ঠজাদুতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ছুঁয়েছিলেন জনপ্রিয়তার উচ্চাসন। প্রতিভাবান, মেধাবী, ক্ষণজন্মা এই কণ্ঠশিল্পী বেশি সময় পাননি, তাঁর প্রতিভা স্ফুরণের। তিনি ১৯৮৬ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ২২ বছর। জুয়েল ১৯৬৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

হ্যাপি আখন্দ

হ্যাপি আখন্দ। জন্ম ১২ অক্টোবর ১৯৬৩। তাঁকে বাংলাদেশি সংগীতের বরপুত্র বলা হতো। তিনি আর ডি বর্মণ, আব্বাসউদ্দীন, মান্না দে, সমর দাশের মতো সংগীতজ্ঞের প্রশংসা আর স্নেহ অর্জন করেছিলেন নিজ যোগ্যতায়। মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর হাতে গিটারের তাল ধরা দেয়। শুরুর দিকে হ্যাপি আখন্দ ভাই লাকী আখন্দের সঙ্গে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিতেন তবলা বাজানোর জন্য। একসময় হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি অকালে মারা যান।

ইশতিয়াক

১৯৬০ সালে জন্ম এই গুণী শিল্পীর। ছোটবেলা থেকেই গানটাকে বড্ড বেশি ভালো বেসেছিলেন তিনি। তাই সুর ও সংগীতায়োজনের প্রচেষ্টা ছিল ছোটবেলা থেকেই। ১৯৭৪ সালের দিকে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই প্রথম ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন তিনি। আর ব্যান্ডের নাম রাখলেন ‘সন্ন্যাসী’। বিভিন্ন মঞ্চে, অনুষ্ঠানে গান করতে থাকে সন্ন্যাসী। ধীরে ধীরে গিটারিস্ট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন শেখ ইশতিয়াক। অসম্ভব প্রতিভাধর এই শিল্পীর সংগীত জীবন খুব একটা দীর্ঘ হয়নি। ১৯৯৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৯ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁর এই স্বল্প সংগীত জীবনে আমাদের উপহার দিয়েছেন অসাধারণ সব গান। তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে নীলাঞ্জনা, একদিন ঘুম ভেঙে দেখি, নন্দিতা তোমার কথা আমি, জোছনা রাতে মনটা আমার, ভেবেছি ভুলে যাব ইত্যাদি। বাংলা গানের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন এই শিল্পী।

খালিদ হাসান মিলু

খালিদ হাসান মিলুর জন্ম ৬ এপ্রিল, ১৯৬০ সালে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার আদর্শপাড়া গ্রামে। মিলুর সংগীত জীবন শুরু হয় ১৯৮০ সালের প্রথমার্ধে। তাঁর প্রকাশিত একক অ্যালবামের সংখ্যা ১২টি, মিক্সড-ডুয়েট অ্যালবামের সংখ্যা প্রায় ১২০টি। তিনি প্রায় ২৫০টি চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি সর্বমোট ১ হাজার ৫০০-এর মতো গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। মিলু ২০০৫ সালের ২৯ মার্চ মাত্র ৪৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছিলেন তিনি।

মাইকেল জ্যাকসন

মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন, জন্ম ২৯ আগস্ট, ১৯৫৮। তিনি ছিলেন মার্কিন সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, গান লেখক, অভিনেতা, সমাজসেবক এবং ব্যবসায়ী। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বহুল বিক্রীত অ্যালবামের সংগীতশিল্পীদের তিনি অন্যতম। মাইকেল মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। মাইকেলের গাওয়া পাঁচটি সংগীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে- অব দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টোরি (১৯৯৫)। তাঁকে পপসংগীতের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, অথবা সংক্ষেপে তাঁকে এম জে নামে অভিহিত করা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ জুন মাত্র ৫১ বছর বয়সে মাইকেল জ্যাকসন মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন পড়ে যায়।

নাজিয়া হাসান

নাজিয়া হাসান, জন্ম এপ্রিল ১৯৬৫ সালে। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি পপশিল্পী। সফল সংগীত জীবনের মাধ্যমে নাজিয়া উপমহাদেশের কিংবদন্তি একজন শিল্পী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলিব্রেটিদের একজন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন এবং প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। নাজিয়া মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করে সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রাইড অব পারফরম্যান্স বিজয়ী। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ও তাঁর ভাই জোহেব হাসান ডিস্কো দিওয়ানে নামক পপ অ্যালবাম প্রকাশ করে আলোড়ন ফেলে দেন। এটি ছিল সে সময়ের এশিয়ার বেস্ট সেলিং পপ অ্যালবাম। যৌবনেই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ২০০০ সালে ১৩ আগস্ট মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

জিম মরিসন

জেমস ডগলাস মরিসন, জন্ম ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৩ সাল। তিনি ছিলেন আমেরিকান সংগীতশিল্পী, গীতিকার, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং কবি। তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন আমেরিকান রক ব্যান্ড দি ডোরসের প্রধান গায়ক ও গীতিকার হিসেবে। তাঁকে রক সংগীতের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বেশ কিছু কবিতার বই রচনা করেন এবং একটি তথ্যচিত্র, একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তিনটি মিউজিক ভিডিওর নির্মাতা। মরিসন মাত্র ২৭ বছর বয়সে প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।

কে কে

কে কের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দিল্লিতে। ১৯৯৯ সালে ‘পাল’ অ্যালবাম দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। তাঁর প্রথম অ্যালবামের ‘হাম রাহে ইয়া না রাহে কাল’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। ওই বছরই হাম দিল দে চুকে সানাম সিনেমার ‘তাড়াপ তাড়াপ’ গানটি তাঁকে রাতারাতি খ্যাতি এনে দেয়। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। জারা সা দিলমে, তুহি মেরি সাব হে, ক্যায়া মুঝে পেয়ার হে, আলবিদা, পিয়া আয়ে নার মতো একের পর এক সব গান দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন বলিউডকে। কে কের বলিউডের গানগুলো ভারত ছাপিয়ে উপমহাদেশজুড়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তবে হিন্দি ছাড়াও বাংলা, তামিল, কন্নড়, মালয়ালাম, মারাঠি, অসমিয়া ভাষায়ও জনপ্রিয় অনেক গান উপহার দিয়েছিলেন তিনি। ৩১ মে গাইতে গাইতেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বলিউডের বিখ্যাত গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ, ‘কে কে’। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।

সর্বশেষ খবর