রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
পপগুরু আজম খানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী

আসি আসি বলে তুমি আর এলে না...

পান্থ আফজাল

আসি আসি বলে তুমি আর এলে না...

যুদ্ধ-পরবর্তী সময় লাকী আখন্দ, হ্যাপী আখন্দ, নিলু, মনসুর এবং সাদেককে নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল ‘উচ্চারণ’। তারপরের বছর বিটিভিতে ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি সরাসরি প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। তবে ১৯৭৪ সালে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ শিরোনামের সাড়া জাগানো গান গেয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক হইচই ফেলে দেন এই কিংবদন্তি পপ কিং। সে সময় ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং পিলু মমতাজের সঙ্গে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গানও করেন এই পপগুরু। তাঁকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। তিনি বাংলা পপসংগীতের পথিকৃৎ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলা সংগীত জগতের এই মহান পপতারকা। আজ এই পপগুরুর ১১তম প্রয়াণ দিবস।

পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। কিন্তু মানুষ জানত আজম খান নামেই। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০ সালে ঢাকার আজিমপুরের ১০ নম্বর কলোনিতে জন্ম তাঁর। বাবার অনুপ্রেরণায় মূলত মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন পপগুরু। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। তাঁর গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণ জোগাত। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশ নেন। তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত ‘অপারেশন তিতাস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধে তিনি তাঁর বাম কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন।

আজম খানকে গানের বাইরে মাঝে মাঝে দেখা গেছে অন্য ভূমিকায়। কখনো অভিনেতা, কখনো বা মডেল, কখনো আবার ক্রিকেটার হিসেবে। শাহীন-সুমনের ‘গডফাদার’-এ খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজম খান। পরবর্তীতে আরও ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও তা করেননি। বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল ও একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে ৪১ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত একটানা ১০ বছর ক্রিকেট খেলেছেন আজম খান। ক্রিকেটার হিসেবে ছিলেন অলরাউন্ডার। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে ১৯৯১-২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন।

এ দেশের প্রথম পপতারকা আজম খান। তাঁর পথ অনুসরণ করে ব্যান্ড সংগীত বাংলাদেশে একটি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই মহান সংগীত তারকা বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেছিলেন এসিড-রক ঘরানার গান ‘জীবনে কিছু পাব না এ হে হে!’ বাংলা গানের ইতিহাসে এটিই প্রথম হার্ডরক হিসেবে চিহ্নিত। এই কিংবদন্তির খানের পথ ধরেই পরবর্তীতে এসেছেন হামিন, শাফিন, মাকসুদ, জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, হাসান, নকীব, বিপ্লবসহ আরও অনেকেই। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘আমি যারে চাইরে’, ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’, ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাই কোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি।

‘গুরু’ নামে ৮০-এর দশকের তরুণদের কাছে পরিচিত হওয়া আজম খান ২০১০ সাল থেকে মুখগহ্বরের ক্যান্সারে ভোগেন। এ জন্য দুবার তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়েও চিকিৎসা করানো হয়।  দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে পরিশেষে অন্তিম শয্যায় শায়িত হন এই পপগুরু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।  জানি হারিয়ে গেছ, ফিরে পাব না...

সর্বশেষ খবর