ইরানের শৈল্পিক চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। টার্কিশ, হলিউড, হংকং, ফ্রেঞ্চ, কোরিয়ান, ইতালিয়ান প্রত্যেক ইন্ডাস্ট্রির মতো ইরানি সিনেমার একনিষ্ঠ দর্শক সংখ্যাও হাতে গোনা নয়। সাদাসিধে গল্পকেই ফ্রেমবন্দি করে একের পর এক জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনির উপস্থাপন করে চলেছেন অসাধারণ সব নির্মাতা। সেসব নির্মাতার সেরা কিছু সিনেমা নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল
এ সেপারেশন
সিমিন-নাদেরের ১৪ বছরের সংসারে আচমকা মতবিরোধেই ছবির সূচনা। পারিবারিক সংঘাতের সঙ্গে লিঙ্গ বৈষম্য, মানসিক দ্বন্দ্ব আর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির অপূর্ব সন্নিবেশ আসগার ফারহাদির ‘এ সেপারেশন’। মাত্র ৮ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ছবিটির বিশ্বব্যাপী আয় ২৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালের অস্কার আসরে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতে এটি। অভিনয়ে পেম্যান মোয়াদি, লেইলা হাতামি, কিমিয়া হুসেইনি, শাহাব হুসেইনি।
টেস্ট অব চেরি
‘টেস্ট অব চেরি’ আব্বাস কিয়ারোস্তামির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ১৯৯৭ সালে ছবিটি শ্রেষ্ঠ সিনেমার পুরস্কার জেতে। সিনেমাটির মূল চরিত্রে বাদি নামের একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য কিয়ারোস্তামি অপেশাদার অভিনেতা বেছে নিয়েছিলেন।
চিলড্রেন অব হ্যাভেন
এক জোড়া জুতা নিয়েই আস্ত এক সিনেমা! এই সরস গল্প যদি মরু থেকে শহর, শহর থেকে অলিন্দ পুরো বিশ্বকে জয় করে ফেলে-তাকে আপনি কী বলবেন? অথচ দেড় ঘণ্টার এক সেকেন্ডও আপনার চোখ সরবে না স্ক্রিন থেকে। মাজিদ মাজিদির ছবিটি দেখেনি এমন লোক পাওয়াই দুঃসাধ্য। রেজা নাজি, আমির ফারুক, বাহারে সিদ্দিকী অভিনীত ছবিটি বিশ্বব্যাপী আয় করে ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অ্যাবাউট এলি
যৌবনের সায়াহ্নেও এক দল বন্ধুর মাঝে অপরিসীম জীবনীশক্তি টিকে আছে। তবে আর সব সুসময়ের মতো এও যেন ক্ষণস্থায়ী। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বদলে যায় প্রতিটি সম্পর্কের হিসাব-নিকাশ। গল্পটা এলি কেন্দ্রিক হলেও স্তরে স্তরে বেরিয়ে আসে প্রতিটি চরিত্রের আত্মিক বৈচিত্র্য। আসগার ফারহাদির কাহিনি ও পরিচালনায় নির্মিত ১১৯ মিনিটের ‘অ্যাবাউট এলি’।
দ্য সং অব স্প্যারো
সিনেমাটির কাহিনি আবর্তিত হয় উটপাখির খামারের একনিষ্ঠ কর্মী করিমকে ঘিরে। প্রকৃতিবাদী করিম ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে বস্তুবাদীতে; আত্মার সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। ২০০৮ সালের মাজিদ মাজিদির সিনেমাটিতে অভিনয়ে মোহাম্মাদ আমির নাজি, মারিয়াম আকবারি, হামিদ আগাহি, স্কাবনাম আখলাঘি।
দ্য হোয়াইট বেলুন
১৯৯৫ সালে নির্মিত জাফর পানাহির এ সিনেমাটি একটি ছোট শিশুকে কেন্দ্র করে। ছোট্ট রাজিয়ার কান্না, ভয়, জেদ এবং গোল্ডফিশ কিনতে না পারার দুঃখ দর্শককে ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেবে।
টারটেলস ক্যান ফ্লাই
ইরাক-তুর্কি সীমান্তে একটি কুর্দি শরণার্থী শিবিরকে কেন্দ্র করে নির্মিত এটি। নির্মাতা বাহমান গোবাদি। অভিনয়ে সোরান ইব্রাহিম, আভাজ লাতিফ।
দ্য কালার অব প্যারাডাইস
মাজিদ মাজিদির আরেকটি অসাধারণ চলচ্চিত্র ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’। সিনেমাটিতে উঠে এসেছে শিশুদের ইনোসেন্স আর ভাগ্য ও মানবতার পরিহাস।
হোলি স্পাইডার
৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি দেখে মুগ্ধ হন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। ফলশ্রুতিতে দর্শকদের কাছ থেকে অর্জন করে ৭ মিনিটের দাঁড়ানো অভ্যর্থনা। ইরানের শহর মাশাদের এক সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে তৈরি এই সিনেমা। সিনেমাটি পরিচালনায় আলী আব্বাসী।
দ্য সার্কেল
এটির নির্মাতা জাফর পানাহি। কয়েকটি মহিলার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প উঠে এসেছে। অভিনয়ে নার্গিস মামিযাদেহ, মারিয়াম পালভিন, মোজগান ফারামাজি।
দ্য সেলসম্যান
অস্কারের ৮৯তম আসরে আসগর ফারহাদির ‘দ্য সেলসম্যান’ সেরা বিদেশি ভাষা বিভাগের অস্কার জয় করে। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণে আসগর ফারহাদি পুরস্কার নিতে আসতে পারেননি। পরে তার পুরস্কারটি প্রতিনিধি গ্রহণ করেন।