রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বলিউড বাদশাহর ৩০ বছর

বলিউড বাদশাহর ৩০ বছর

বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সফল একজন অভিনেতা। ১৯৯২ সালে চলচ্চিত্রের অভিনয়ে অভিষেক ঘটে তাঁর। শুরু থেকেই সফলতা তাঁর সঙ্গী ছিল। এখনো সফলতার দ্রুতগামী গাড়িতেই ভর করে তরতর করে এগিয়ে চলেছেন তিনি।  দর্শকপ্রিয়তাই হচ্ছে এই সফলতার মূলমন্ত্র। শাহরুখ খানের অভিনয় জীবনের তিন দশকে তাঁর নানা বিষয় তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্র জীবনের অভিষেক

বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান। চলতি বছর তাঁর অভিনয় জীবনের ৩০ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দিওয়ানা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি অসংখ্য বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে সফল অভিনয় করেন এবং খ্যাতি অর্জন করেন। শাহরুখ খান চৌদ্দবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে আটটিই সেরা অভিনেতার পুরস্কার। তিনি বলিউডের অন্যতম সফল অভিনেতা। হিন্দি চলচ্চিত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে ভারত সরকার শাহরুখ খানকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে। তাঁর প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ভক্ত রয়েছে।

 

নার্সের ভবিষ্যৎ বাণী

দিল্লির তালভার নার্সিং হোমে জন্মের পর কোনো এক নার্স নাকি বলেছিলেন ‘শিশুটি বড় হয়ে অনেক বিখ্যাত হবে।’ আর সেই শিশুটিই আজকের শাহরুখ খান। ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন আজকের কিং খান। বাবা ছিলেন পাঠান মুসলিম পরিবার বংশোদ্ভূত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী তাজ মোহাম্মদ খান। মা লতিফ ফাতিমা ছিলেন একজন সরকারি প্রকৌশলী ইফতেখার আহমেদের মেয়ে। খানের মতে, তাঁর দাদা ছিলেন প্রকৃতপক্ষে একজন আফগান নাগরিক।

 

রাস্তার বেঞ্চে ঘুমানো সেই ছেলেটি

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেও যে পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে সফলতা অর্জন করা যায়, তা কিং খান দেখিয়েছেন। একটা সময় তাঁর কাছে না ছিল টাকা, না ছিল থাকার জায়গা। সেই জেদ নিয়েই তিনি বলেছিলেন, এই মুম্বাই শহরকে তিনি জয় করে নেবেন। তিনি সত্যিই জয় করতে পেরেছেন। শুধু মুম্বাই শহরটিই নয়, শহরের আনাচে-কানাচে কোটি কোটি লোকের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।

 

যেভাবে অভিনয় জীবন

একটি টিভি ধারাবাহিকে কাজ করার সুবাদে কিং খান অভিনয় জীবনে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে ‘দিল দরিয়া’ নামক এই সিরিয়ালে চুক্তিবদ্ধ হলেও কাজ শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় পরবর্তী বছর ‘ফৌজি’ নামক টিভি সিরিয়ালে অভিনয় শুরু করেন। ওই নাটকে তিনি ‘অভিমন্যু রায়’ নামের এক আর্মি ক্যাডেট চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন। পরে তিনি কাজ করেন ‘সার্কাস’ নামের আরেকটি ধারাবাহিকে। সার্কাসের পরই তিনি ‘উমিদ’ নামে আরেকটি ধারাবাহিকে পার্শ্বচরিত্রে কাজ করেন। তিনি দিল্লিতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকেও প্রশিক্ষণ নেন।

 

যেভাবে ‘বলিউড কিং’ উপাধি

‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’র ব্যাপক সাফল্যের পর তিনি একে একে উপহার দিতে থাকেন বক্স অফিস কাঁপানো রোমান্টিক ঘরানার সব চলচ্চিত্র। এরপর ‘ডন’ সিরিজের প্রথম মুভি পাওয়ার পর শাহরুখ খান ‘বলিউড কিং’ উপাধি পান। লন্ডনের মাদাম তুসো জাদুঘরে কিং খানের মূর্তি রয়েছে।

 

প্রযোজক শাহরুখ

শাহরুখ খান ছবি প্রযোজনাও করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি নির্মাতা আজিজ মির্জা ও অভিনেত্রী জুহি চাওলার সঙ্গে ড্রিমজ আনলিমিটেড নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট’। এদিকে নেটফ্লিক্সে আসবে তাঁর প্রযোজিত নতুন ওয়েব সিরিজ ‘বেতাল’।

 

বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী তারকা

বর্তমানে শাহরুখ খান পৃথিবীর সফল চলচ্চিত্র তারকা। তাঁর অর্থসম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ কোটি রুপিরও বেশি। ২০০৯ সালে নিউজউইক তাঁকে বিশ্বের ৭৩ম ক্ষমতাশীল ব্যক্তির খেতাব দেয়। ওয়েলথ-এক্স সংস্থার বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হলিউড, বলিউড তারকার তালিকায় শাহরুখ খান দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি হলিউড তারকা ব্রাড পিট, টম ক্রুজ, জনি ডেপ-দেরকে  পেছনে ফেলে দিয়েছেন। অভিনেতা হিসেবে বৈশ্বিক অবদানের জন্য শাহরুখ খানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করেছে স্কটল্যান্ডের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

মানব দরদি কিং খান

বিপদে পড়ে কেউ খানের কাছে এসে খালি হাতে ফিরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। বাবার নামে অ্যাসিড আক্রান্ত নারীদের সাহায্যের জন্য খুলেছেন ‘মীর ফাউন্ডেশন’। প্রতিবন্ধী, বন্যাদুর্গতদের পাশে সবসময় থেকেছেন বলিউডের নাম্বার ওয়ান খান। করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ত্রাণ তহবিলে আড়াই কোটি রুপি দান করেন। পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ হাজার কিটও দিয়েছেন। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গড়তে চারতলা অফিস দিয়ে দেন শাহরুখ-গৌরী।

 

পুরস্কার ও সম্মাননা

চৌদ্দবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, পদ্মশ্রী পুরস্কার, সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিতসহ আইফা, রাজীব গান্ধী, বেস্ট ইন্ডিয়ান সিটিজেন ইত্যাদি সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে মরক্কোর ‘এল’ এতোইলি ডি’অর’ সম্মাননা, ফ্রান্স সরকারের ‘লিজিয়ান অব হনার’, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ। একমাত্র ভারতীয় নায়ক হিসেবে হন দক্ষিণ কোরিয়ার ‘শুভেচ্ছাদূত’।

 

দুবাইয়ে শাহরুখের চমকে দেওয়া ‘জান্নাত’

১৯৯৭ সালে ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ে মুম্বাইয়ের ‘মান্নাত’-এর সামনে নেচেছিলেন শাহরুখ খান। গানটা ছিল ‘চাঁদ তারে তোড় লায়ু’, মানে, ‘চাঁদ-তারা কেড়ে আনব’। সিনেমাটি করার সময় ‘মান্নাত’-এর মালিক কিন্তু তিনি ছিলেন না। শাহরুখ তখন জানতেন না যে, এক দিন এই প্রাসাদই তাঁর হবে। সদিচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রমের ফল যে মেলে, তার প্রমাণ, ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো ‘গডফাদার’ না থাকা সত্ত্বেও শাহরুখের আজ এমন উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়া। শাহরুখ খানের জীবনযাত্রা যে কতটা রাজকীয়, তা তাঁর রুচিতেই ধরা পড়ে। তবে, শাহরুখের একটি প্রাসাদ নয়। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ-তেও রয়েছে আরেকটি। ‘মান্নাত’-এর সঙ্গে মিল রেখেই এই বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘জান্নাত’।  ২০০৭-এর সেপ্টেম্বরে এই ‘ভিলা’ শাহরুখকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ী নাখিল। দোতলা এই ভিলা প্রায় ১৪ হাজার বর্গফুটের। তার মধ্যে সাড়ে ৮ হাজার বর্গফুট এলাকায় রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। এই ১৪ হাজার বর্গফুট এলাকায় বাইরের কারও প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ। এই ভিলার আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই খান-ভিলায় ছয়টি বেডরুম রয়েছে। দুটি রিমোট কন্ট্রোল গ্যারেজ, নিজস্ব সুইমিং পুল, রয়েছে ব্যক্তিগত সমুদ্রসৈকতও।  এই প্রাসাদ থেকে দুবাই স্কাইলাইনও পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। শুধু মুম্বাইয়ের ‘মান্নাত’ বা দুবাইয়ের ‘জান্নাত’ই নয়, দিল্লিতেও শাহরুখের একটি বাংলো রয়েছে। লন্ডনেও রয়েছে ১৬৭ কোটি টাকার একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর