মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ঈদে খুলছে বন্ধ ১৫০ সিনেমা হল

আলাউদ্দীন মাজিদ

‘আগে হলের মালিকদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা ছিল। কে কোন সিনেমা তাঁদের হলে দেখাবেন, এটা নিয়ে যে আগ্রহ ছিল; এখন তেমনটা নেই। বেশির ভাগ হল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর যেগুলো দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর বেশির ভাগ সিনেমা চালানোর মতো অবস্থায় নেই

‘এখন সিনেমা হল শুধু বন্ধ হয়, নতুন করে খুলে না। এই চিত্র কমপক্ষে ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকে। তবে সিনেমা হল ব্যবসার প্রধান দুই মৌসুম ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহাকে ঘিরে কাক্সিক্ষত মুনাফার আশায় কিছু বন্ধ সিনেমা হল খুলে। এসব সিনেমা হলকে বলা হয় মৌসুমি সিনেমা হল। এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে খুলতে যাচ্ছে সারা দেশের বন্ধ থাকা প্রায় দেড়শতাধিক সিনেমা হল।’ জানালেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন।

আসন্ন ঈদে এখন পর্যন্ত তিনটি ছবির মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এগুলো হলো- ‘দিন : দ্য ডে’, ‘পরাণ’ ও ‘সাইকো’। এর মধ্যে আজ পর্যন্ত চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতিতে ঈদে মুক্তির জন্য মাত্র একটি ছবির আবেদন জমা ও অনুমতি পেয়েছে। ছবিটি হলো ‘দিন : দ্য ডে’। ‘পরাণ’ গত পরশু সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। এর নির্মাতা সূত্রে জানা গেছে, প্রযোজক সমিতিতে এখন ছবিটির ঈদে মুক্তির আবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ‘সাইকো’ ছবিটির দু-এক দিনের মধ্যে সেন্সর শো হওয়ার কথা। সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটি ঈদে মুক্তির জন্য আবেদন জমা পড়বে প্রযোজক সমিতিতে। সব ঠিক থাকলে এখন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে, এই তিনটিই হচ্ছে আসন্ন ঈদের ছবি।  এদিকে, প্রযোজক সমিতির কর্মকর্তা সৌমেন বাবু জানান, ঈদের আগে অফিস খোলা থাকা পর্যন্ত যে কোনো নির্মাতা চাইলেই তাঁর ছবি ঈদে মুক্তির জন্য আবেদন জমা দিতে পারবে। সে হিসেবে এখন দেখার পালা ঈদে এই তিন ছবির সঙ্গে আর কোনো ছবি যোগ হয় কি না।

এদিকে, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, দেশে এখন আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। অন্যদিকে দেশের কয়েক স্থানে বন্যা চলছে। এই দুই পরিস্থিতির আর অবনতি না হলে ঈদে অবশ্যই বন্ধ থাকা প্রায় দেড় শ সিনেমা হল খুলতে পারে। তিনি বলেন, কমপক্ষে নব্বই দশক পর্যন্ত দেশে ‘বন্ধ সিনেমা

হল’ এবং ‘মৌসুমি সিনেমা হল’ বলে কিছু ছিল না। নব্বই দশকের শেষ ভাগে এসে অশ্লীলতা, পাইরেসি, নকলসহ নানা নেতিবাচক কারণে সিনেমা হল যখন সব শ্রেণির দর্শক হারাতে শুরু করে এবং ভালো ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে লোকসান গুনতে গিয়ে দর্শকবিহীন সিনেমা হল বন্ধের হিড়িক পড়ে যায়, তখনই বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কিছু সিনেমা হল বছরের দুই ঈদে ভালো ব্যবসার আশায় মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে খুলতে থাকে। সেই হিসেবে এবারের ঈদেও দেড়শতাধিক বন্ধ সিনেমা হল মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে খুলতে পারে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, বন্ধ সিনেমা হল খোলে মানসম্মত ছবি পেলে। তাই নির্মাতাদের কাছে সিনেমা হল মালিকদের অনুরোধ, আপনারা মানসম্মত ছবি নির্মাণ করুন। এতে আপনারা এবং আমরা সিনেমা হল মালিকরা সমানভাবে উপকৃত হব। মিয়া আলাউদ্দীনের হিসাবমতে দেশে এখন নিয়মিত গড়ে ৬০-৭০টির মতো সিনেমা হল খোলা থাকে। আর ঈদে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে বন্ধ সিনেমা হল খুললে সর্বমোট ২৫০টির মতো সিনেমা হলে দর্শক ঈদের ছবি দেখতে পারে। তাই নির্মাতারাই পারেন ভালো ছবি নির্মাণ করে শুধু ঈদ নয়, স্বাভাবিক সময়েও দেশের বন্ধ সিনেমা হল খোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে। মিয়া আলাউদ্দীন ঈদের ছবি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। তবে খানিকটা হতাশার সুরও শোনা গেল তাঁর কণ্ঠে। ঈদের ছবি নিয়ে যতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়, সেটা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ‘আগে হলের মালিকদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা ছিল। কে কোন ছবি তাঁদের হলে দেখাবেন, এটা নিয়ে যে আগ্রহ ছিল; এখন তেমনটা নেই। বেশির ভাগ হল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর যেগুলো দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর বেশির ভাগ সিনেমা চালানোর মতো অবস্থায় নেই। এক ঈদের সিনেমা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। সেটার জন্য চেইন অব কনটেন্ট লাগবে। সিনেমা হলের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, যাতে দর্শক স্বস্তি বোধ করেন।’

উল্লেখ্য, নব্বই দশকের শেষভাগ পর্যন্ত দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৩০টি। মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে লোকসান গুনে সিংহভাগ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন খোলা আছে ৭০টির মতো। দেশের প্রায় ২৭টি জেলা হয়ে গেছে সিনেমা হলশূন্য। বেশির ভাগ সিনেমা হল বন্ধ করে সেই স্থানে নির্মাণ হয়েছে মার্কেট ও বাণিজ্যিক অফিসের কাজে ব্যবহৃত ভবন। এভাবেই দুঃখজনকভাবে কৌলিণ্য হারিয়েছে দেশের প্রধান গণমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ‘চলচ্চিত্র শিল্প’।

সর্বশেষ খবর