শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : শহীদুজ্জামান সেলিম

সিনেমায় পজিটিভ চরিত্রটি নিয়ে সবাই প্রশংসা করছে

সিনেমায় পজিটিভ চরিত্রটি নিয়ে সবাই প্রশংসা করছে

দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। দীর্ঘদিন ধরে থিয়েটার, টিভি নাটক আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। ছোট পর্দায় আশির দশক থেকে বর্তমানের সেতুবন্ধে যাঁর রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। এখনো অভিনয় করে যাচ্ছেন চলচ্চিত্র ও ছোট পর্দায়। সাম্প্রতিক অবস্থা ও সমসাময়িক কাজ নিয়ে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

সম্প্রতি আপনার অভিনীত দুটি ছবি নিয়েই আলোচনা চলছে। ছবি দুটো নিয়ে প্রত্যাশা কেমন ছিল?

দুটো সিনেমা দুই ঘরানার। অনন্য মামুনের ‘সাইকো’ সিনেমাটি বাণিজ্যিক ঘরানার। সুন্দর গল্প, লোকেশন, ভালো অভিনয়শিল্পী মিলে দারুণ একটা সিনেমা। ঢাকার বাইরে মফস্বলে ভালো চলেছে বলতে পারি। পরাণও বাণিজ্যিক। এই ঈদে তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে- দীন : দ্য ডেও ভালো ছিল। তবে আমি সাইকো ও পরাণ-এ অভিনয় করেছি। এদের মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে ‘পরাণ’ সাফল্য পেয়েছে। কেন বলছি অপ্রত্যাশিত? টিম ভাবেনি। যদিও আমার কাছে প্রত্যাশিত ছিল। আমি বলব, সাইকো আলাদাভাবে মুক্তি পেলেও ব্যবসাসফল হতো।

 

পরাণ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হচ্ছে। আপনার অভিমত কী?

পরাণে সাধারণ ঘটনা অসাধারণভাবে পরিবেশিত হয়েছে। আমাদের আশপাশের সাধারণ লোকেশন হলেও কনসেপ্ট, পরিবেশ, মিউজিক, ক্যামেরার কাজ, শিল্পীদের ডেডিকেশন, নির্মাতার মুনশিয়ানা-সবমিলিয়ে বাজিমাত করেছে। আমি তো বলব, আরও দু-এক মাস পরাণের রেশ থাকবে। যে জাতীয় সিনেমা বাঙালি দেখতে চায়, তা কিন্তু পরাণে আছে। সিম্পল অ্যাকশন, প্রেম, পরিবার, আনন্দ, বেদনা আছে। এই কনসেপ্ট সাধারণ দর্শক দেখতে চায়। মধ্যবিত্ত দর্শকরা কিন্তু সিনেমায় কে আছে, তা দেখছে না।

 

দুটো সিনেমায় আপনার আলাদা দ্ইু চরিত্রে, নেগেটিভ ও পজিটিভ। কোনটাকে দর্শক এগিয়ে রাখছেন?

আমি কিন্তু খুব বেশি সিনেমা করিনি। তবে যা করেছি, দর্শক নিয়েছে। রেদওয়ান রনির ‘চোরাবালি’র সময় সিনেমায় জোয়ার দেখেছি। আয়নাবাজির সময় ছিল জোয়ার। এখন পরাণের জোয়ার চলছে। কারণ প্রচারণা। প্রচারণা ভালো হয়েছে। দর্শক দেখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত রিয়েকশনও পাচ্ছে সবাই। দুটো সিনেমায় আমার আলাদা দুই চরিত্র। সাইকোতে পুরোপুরি নেগেটিভ। আর পরাণ সিনেমায় একেবারে পজিটিভ চরিত্র। দর্শক আমাকে আগেও নেগেটিভ চরিত্রে দেখেছে। তবে পরাণ সিনেমায় পজিটিভ চরিত্র নিয়ে সবাই প্রশংসা করছে। আমি মনে করি, কে কীভাবে কাজটি করল সেটিই বড় বিষয়।

 

আজ হাওয়া মুক্তি পাচ্ছ। সিনেমাটি নিয়ে অভিমত কী?

দর্শক কিন্তু ভালো সিনেমাই দেখবে। হাওয়া সেই ভালো সিনেমার একটি। এর আগে শান, গলুই, তালাশ দর্শক দেখেছে। শান ভালো চলেছে। দর্শক এসেছে। এরপর পরাণে দর্শক বেড়েছে। এখন হাওয়ার জোয়ার চলছে। সিনেমাটি নিঃসন্দেহে ভালো চলবে। আর মেজবাউর রহমান সুমনের কাজ মানেই অন্যরকম বিষয়! বিজ্ঞাপন কি নাটক- তাঁর কনসেপ্ট ভিন্ন ও বৈচিত্র্যময়। চিন্তা অন্যরকম তাঁর। হাওয়া কিন্তু ফর্মুলার সিনেমা না। এটার দর্শক ভিন্ন। আমি নিজেও হাওয়া দেখতে সদলবলে হলে যাব। বাংলা সিনেমার যে জোয়ার শুরু হয়েছে- তা ধরে রাখতে হবে। নন-ট্র্যাডিশনালের সময়। পার্শ্ববর্তী দেশের পর এ দেশে এটির বিস্তার ঘটছে। কনটেন্ট, কনসেপ্টে আমরা সবসময়ই এগিয়ে ছিলাম। সেটা নাটকের ক্ষেত্রে। এবার সিনেমা শিল্পের জোয়ার। এটা ধরে রাখতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সিনেপ্লেক্স করার। ভালো পরিবেশ, বসার জায়গা হলে দর্শক ফিরবেই।

 

দেশে নাটকের কী অবস্থা?

এখন তো দুই ধরনের নাটক হচ্ছে। ওটিটির জন্য ভিন্ন কনসেপ্টে সাহসী গল্পের। আর হচ্ছে ইউটিউবের জন্য। টেলিভিশনের জন্য তেমন করে নাটক কম হচ্ছে। তবে আশার বিষয়, পারিবারিক গল্পের নাটকের সংখ্যা কিন্তু বেড়েছে। হালকা কমেডি, অন্য ধরনের নিম্নমানের গল্পের ও নির্মাণের নাটকও হচ্ছে। ইউটিউবের জন্য তৈরি হচ্ছে। এগুলোরও কিন্তু বাণিজ্য হচ্ছে। আসলে দর্শকের রুচি নানারকমের। দর্শক চাইলে পরিচ্ছন্ন নাটকও দেখতে পারে আবার চাইলে নিম্নমানের নাটকও দেখতে পারে। এটা তাদের রুচির বিষয়।

 

থিয়েটার চর্চায় সাম্প্রতিক সংকট, উত্তরণের উপায়?

আরও আগেই করা উচিত ছিল এই বিষয় নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সভা। সম্প্রতি সবাই মিলে বসেছিলাম। আগে তো মহিলা সমিতিতে মঞ্চ নাটক হতো, এরপর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। নাটক করার জন্য, দর্শক বাড়ানোর জন্য, পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য, বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এই বসাটা জরুরি ছিল। এখন তো মঞ্চ নাটকের কোনো খবর টেলিভিশনে প্রচার হয় না। বিজ্ঞাপনের খবর অর্থের বিনিময়ে দিতে হয় পত্রিকায়। পত্রিকায় সিনেমা, হলিউড-বলিউডের খবর, বা অন্য বিষয় নিয়ে লেখা হয়। কিন্তু মঞ্চের কোনো খবর নেই। মঞ্চের লোকদের প্রযোজনা খরচ বহন করার তেমন সামর্থ্য থাকে না। সরকার যে হল ভাড়া মওকুফ করবে তার উদ্যোগ নেই। ভালো ভালো অনেক নাটক হচ্ছে এখন। হাউস ফুলও হচ্ছে এখন মঞ্চনাটকের। নাটকের জন্য সাউন্ড সিস্টেম, মিউজিক, হল, পরিবেশ ঠিক নেই। এটা শিল্পকলা একাডেমির দেখা বিষয়। কিন্তু রয়েছে তাদের উদাসীনতা। এগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। যাঁরা থিয়েটার চর্চা করেন, তাঁদের এই স্থবিরতা ভাঙতে হবে।

সর্বশেষ খবর