বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : বর্ষা

ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই না

ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই না

বর্ষা। অভিনেত্রী হিসেবে ইতোমধ্যে ঢালিউডে স্বতন্ত্র একটি অবস্থান গড়ে নিয়েছেন। ঈদুল আজহায় তিনি বড় পর্দায় হাজির হয়েছেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিগ বাজেটের ছবি ‘দিন : দ্য ডে’ নিয়ে। ছবিটি নিয়ে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ও অন্যান্য বিষয়ে  অভিনেত্রী বর্ষার বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

‘দিন : দ্য ডে’ মুক্তি পেয়ে বেশ আলোচনায় রয়েছে, বিষয়টি কেমন লাগছে?

ধন্যবাদ, আসলে যে কোনো প্রত্যাশা পূরণের আনন্দই আলাদা। এটি ছিল আমার আর অনন্তর একটি স্বপ্নের ছবি। করোনাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে ছবিটি মুক্তি দিতে পারিনি। যা হোক আমাদের সৌভাগ্য, শেষ পর্যন্ত ঈদের মতো একটি মহাউৎসবের দিনে ছবিটি মুক্তি পেল এবং প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দর্শক সাড়া পেলাম। এর জন্য আমার প্রিয় দর্শক ও প্রদর্শকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমার আর অনন্তর ছবির প্রতি দর্শক ভক্তদের অবিরাম ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ ও ভালো কাজে উৎসাহ বোধ করছি। আগামীতে উন্নত ও সমৃদ্ধ সব ছবি দর্শকদের উপহার দিতে আসছি।

 

ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবিতে আসলে দেশের জন্য কী মেসেজ দিতে চেয়েছেন?

আসলে আমাদের সব ছবিতেই সুষ্ঠু বিনোদনের পাশাপাশি দেশের উন্নত কাজ নিয়ে চমৎকার একটি মেসেজ থাকে। এ ছবিতে আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর অকুতোভয় কর্মতৎপরতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপন করেছি। কারণ পুলিশ সবসময়ই জনগণের বন্ধু। তাই পুলিশ বাহিনীকে চলচ্চিত্র বা যে কোনো গণমাধ্যম দ্বারা তাদের সুন্দর ভাবমূর্তিকে দেশ বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াকে একটি দায়িত্ব বলে মনে করি। এ ছবির মাধ্যমে সেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি।

 

আপনাদের ছবি মুক্তি পেলে নানা আলোচনার ঝড় ওঠে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

দেখুন ভালো কাজের ক্ষেত্রে আলোচনাও থাকবে আবার সমালোচনাও থাকবে। চলচ্চিত্র যেহেতু একটি প্রধান বিনোদন মাধ্যম, তাই আমরা কিন্তু দর্শকদের নির্মল বিনোদন দেওয়ার জন্যই চলচ্চিত্র নির্মাণ করি এবং দর্শকদের আলোচনা-সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করে তাদের আরও উন্নত কাজ দেওয়ার চেষ্টা করি। আসলে এ আলোচনাই আমাদের আরও ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে বরাবরই অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আসছে।

 

আপনি ও অনন্ত জলিল অভিনয় কিংবা নির্মাণে নিজেদের ঘরানার বাইরে যান না, এ নিয়েও আলোচনা রয়েছে

আগেও বলেছি, আমরা কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং অভিনয় করি দর্শকদের বিনোদন দেওয়া এবং নিজেদের শখ পূরণের জন্য। আমরা কিন্তু ছবি বানাতে গিয়ে লাভ-ক্ষতির হিসাব করি না। দর্শক আনন্দই আমাদের প্রধান মুনাফা। আমরা নিজেদের মধ্যেই কাজ করতে পছন্দ করি। তাই আমাদের প্রযোজনা সংস্থার বাইরে অন্য কারও ছবিতে কাজ করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তাই আমাদের কাজ দেশের পাশাপাশি বিদেশেও আলোচনায় আসে, এটি শুধু আমাদের নয়, আমাদের দেশ ও চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য বিশাল প্রাপ্তি বলে আমি মনে করি।

 

আপনার পরবর্তী ছবি ‘নেত্রী দ্য লিডার’ কখন নাগাদ দর্শকের সামনে আসছে?

‘নেত্রী : দ্য লিডার’ ছবির কাজ অর্ধেকেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই বাকি কাজ শুরু করব। আগামী বছরের একটি উৎসবের দিনে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে।

 

ছবিটির গল্প আপনার রূপায়িত চরিত্রকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে, তাই না?

জি, ছবিটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করছি। একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে হত্যার পর তার কন্যা পিতার অসম্পূর্ণ কাজ বাস্তবায়নে এগিয়ে এসে নানা বাধাবিঘ্নের মুখে পড়ে। এমনই একটি গল্পের ছবি হলো নেত্রী। আশা করছি, ছবিটি আমার ক্যারিয়ারে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এতে আমার চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ পরিশ্রম করছি।

 

এবার আপনার জীবনের গল্পে আসি, ব্যক্তি বর্ষা সম্পর্কে কী বলবেন?

আমি খুব সাধারণ ঘরের মেয়ে ছিলাম। এমনও হয়েছে সকালে আনমনে স্কুলে চলে গিয়েছিলাম। আমার ঘরে খাবারও ছিল না যে, আমি এটা খেয়ে যাব। হঠাৎ করে স্কুলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর আমার টিচার আমাকে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে ডিম দিয়ে খিচুড়ি খাইয়েছিলেন। তারপর আবার ক্লাসে আসি। আমার ৮-১০ বছর পর্যন্ত অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। খাবারটাও ঠিকমতো পাইনি। তারপর আলহামদুলিল্লাহ, আমার ফ্যামিলি এটাকে ওভারকাম করতে পেয়েছে।’ শিক্ষকরা আমাকে খুব পছন্দ করতেন। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে নাটক করতে শিক্ষকরা আমাকে ছেলেদের চরিত্রগুলো দিতেন। একবার চেয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করে কলম উপহার পেয়েছিলাম।’

 

আবার ছোটবেলায় ফিরে যেতে চান?

সত্যি কথা বলতে কী, আমি আসলে ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই না। কারণ অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। তবে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে চটপটি-ফুসকা খাওয়া, নদীর ধারে বসা, বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করা খুব মিস করি। এখন চাইলেই এগুলো করতে পারি না। আমার কাছে মনে হয়, ইশ, ওই দিনগুলোতে যদি ফিরে যেতে পারতাম। তাহলে বান্ধবীদের অনেক ভালো ভালো খাওয়াতে পারতাম। হাহাহা।

 

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় জন্ম নেওয়া মা-বাবা ও বোন হারানো আলোচিত সেই কন্যাশিশুর পাশে দাঁড়ালেন, কেন?

‘সম্প্রতি ময়মনসিংহের ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় এক গর্ভবতী মায়ের পেট ফেটে বাচ্চা বেরিয়ে যায়। এ খবর দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাচ্চাটি যেন আমারই।  যত দিন আমি বর্ষা বেঁচে আছি, বাচ্চাটাকে দেখাশোনা করব, দূর থেকে হলেও। আসলে মানুষ মানুষেরই জন্য, এই প্রবাদটি মনে রেখে কাজ করলে পৃথিবীতে সবাই আমরা ভালো থাকব।

সর্বশেষ খবর