শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
টানা হাউস ফুল হাওয়া ও পরাণে

দর্শক ফিরেছে সিনেমা হলে

দর্শক ফিরেছে সিনেমা হলে

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত দুই সিনেমা-হাওয়া ও পরাণ। মুক্তির আগেই সিনেমা দুটির অগ্রিম টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। রাজধানী ঢাকা তো আছেই, ঢাকার বাইরে অনেক সিনেমা হলে এখনো হাউস ফুল যাচ্ছে ছবি দুটি। যা কোনো বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে আগে দেখা যায়নি। সব শ্রেণির মানুষের মুখে দেশীয় দুই সিনেমা ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’-এর জয়-জয়কার। এ দুই সিনেমার পথ ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিনের বার্তা জানিয়েছেন- পান্থ আফজাল

 

ঈদের দিন থেকেই নতুন করে আলোচনায় বাংলা সিনেমা। ‘পরাণ’ দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ। তারপর সারা দেশে ‘হাওয়া’র ঝড়ো জোয়ার শুরু হয়। এ দুই সিনেমার তান্ডবে চুরমার হয়ে যেতে চলেছে অতীতের বাংলা চলচ্চিত্রের যত রেকর্ড। বাংলা সিনেমা দেখতে নতুন করে সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই জোয়ারে নতুন করে ঢালিউডি সিনেমা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ দিনকে দিন বাড়ছেই। প্রতিনিয়ত বাড়ছে সিনেমার প্রদর্শনীর সংখ্যা।

এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যতম আলোচিত বিষয় ঢালিউডি দুটি সিনেমা-হাওয়া ও পরাণ। দর্শক চাহিদায় স্টার সিনেপ্লেক্সের পাঁচটি শাখায় প্রতিদিন ১৪টি ‘পরাণ’ ও ২৬টি ‘হাওয়া’ সিনেমার শো চলছে। অন্যদিকে যমুনা ব্লকবাস্টারে রয়েছে হাওয়ার ১১টি ও পরাণের তিনটি শো। বাংলা সিনেমার সুদিন নিয়ে আশাবাদী স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (বিপণন ও মিডিয়া) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলা সিনেমা মৃতপ্রায় ছিল। কিন্তু এতদিন পর এই হাওয়া ও পরাণের মাধ্যমে ব্যাপক হারে সব শ্রেণির দর্শক হলে ফিরছে। গত রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া শান ও গলুই-এর মাধ্যমে দর্শকের হলে ফেরার যাত্রা শুরু হয়। এরপর হাওয়া ও পরাণে দর্শকের উপচেপড়া ভিড়, সত্যিই বাংলা চলচ্চিত্রে ইতিহাস হতে চলেছে! এমন গল্প ও কনটেন্টে কাজ করলে দর্শককে হলে ধরে রাখা সম্ভব। এমনও হয়েছে এ দুই সিনেমার জন্য বহুল আলোচিত হলিউড মুভি ‘থর’ও নামিয়ে ফেলতে হয়েছে। এই মুভির স্থানে হাওয়া ও পরাণের প্রদর্শনী দিতে হয়েছে। গত কয়েক বছরে দর্শকদের এমন উত্তেজনা চোখে পড়েনি। এটা আশাজাগানিয়া বিষয়।’

শুধু স্টার সিনেপ্লেক্স বা যমুনা ব্লকবাস্টারেই নয়, দেশের বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনে দেখা গেছে দর্শকের ব্যাপক ভিড়। ঠিক চার বছর পর আবারও যেন বাংলা সিনেমায় সুদিন ফিরেছে। ২৯ জুলাই মুক্তি পায় মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’। অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, নাজিফা তুষি, সুমন আনোয়ার, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল মন্ডল, রিজভী রিজু, মাহমুদ আলম, বাবলু বোস প্রমুখ। মুক্তির আগেই হাশিম মাহমুদের লেখা ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি ভাইরাল হয় দেশ ও দেশের বাইরে। মুক্তির পর থেকে প্রায় সব মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনে হাউস ফুল প্রদর্শনীর পরও দর্শক চাহিদা তুঙ্গে হাওয়া। অগ্রিম টিকিট চেয়েও পাচ্ছেন না সিনেপ্রেমী দর্শক। ছবির চান মাঝি চরিত্রের চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘কোথাও টিকিট নেই। আজও কয়েকজন কাছের মানুষ টিকিটের জন্য বলেছেন। ব্যবস্থা করতে পারিনি। সুখবর হচ্ছে, সিনেমার খরা কাটতে শুরু করেছে। ঢালিউডে সুবাতাস বইছে জেনে ভীষণ আনন্দিত আমি। এই সুবাতাস অব্যাহত থাকুক।’ এর আগে কালোবাজারে চড়া দামে ‘হাওয়া’র টিকিট বিক্রি হয়েছে। এতে বোঝা যায়, বাংলা সিনেমা নিয়ে দর্শকের আগ্রহ কত বেশি। অন্যদিকে হলের সামনে মারামারির ঘটনাও ঘটে। শুধু দেশের প্রেক্ষাগৃহেই নয়, ১৩ আগস্ট ‘হাওয়া’ মুক্তি পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে। সেখানেও এই ছবিটির অগ্রিম টিকিট নিয়ে বাঙালি দর্শকের কাড়াকাড়ি! কানাডার ১১টি হল ও যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তির টার্গেটও ‘হাওয়া’র। 

এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ দিয়ে দ্বার খুলে বেশ কিছু সিনেমা হল। প্রেক্ষাগৃহগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘হাওয়া’র দাপটে ‘পরাণ’ সিনেমার দাপট একটুও কমেনি। দুটি সিনেমাই চলছে সমানে সমান। দর্শকদের এমন ইতিবাচক সাড়ায় মুগ্ধ সিনেমার নির্মাতা, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পীরা। এমন পালাবদলে আনন্দিত ‘পরাণ’ সিনেমার নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, ‘পরাণ’ মুক্তি পেয়েছে প্রায় এক মাস হতে চলেছে। এখনো হাউস ফুল যাচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহগুলোতে দর্শকের ঢল! দর্শকদের চোখে-মুখে সেই একই উন্মাদনা। কী যে দারুণ এক ভালো লাগা!’ পরাণ সিনেমায় মিম ছাড়াও অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ, ইয়াশ রোহান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, রাশেদ মামুন অপুসহ অনেকেই। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়,  দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে লম্বা লাইন ধরে দর্শক ঢুকছেন। সেখানে সব বয়সের পুরুষ-নারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, পরিবার ও নানা পেশার দর্শক ছিল বেশি। এটা বাংলা সিনেমার জন্য স্মরণীয় বিষয়। এদিকে ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’-এর সাফল্যে রীতিমতো তারকা অভিনেতা বনে গেছেন শরিফুল রাজ। অন্যদিকে তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফিও উড়ছেন হাওয়ায়। আর নির্মাতা হিসেবে মেজবাউর রহমান সুমন তো আগে থেকেই সুনির্মাতা। হাওয়া যেন নতুন করে তার সাফল্যে পালক যুক্ত করেছে। সুমন বলেন, ‘আমাদের এখানে সিনেমার নিয়মিত যে ভাষা, হাওয়া সিনেমাটি তার থেকে কিছুটা আলাদা। সেটা একটা শঙ্কার বিষয় ছিল। কিন্তু দর্শক যেভাবে সিনেমাটিকে নিয়েছে তাতে নতুন ভাষায়, নতুন ধরনের গল্পে সিনেমা নির্মাণের সাহস পেয়েছি। এই সাহস শুধু আমারই নয়, আমার ধারণা অনেকেই পেয়েছেন। তবুও আমি উদযাপন করছি না। সিনেমা নির্মাণ করাটাই আমার কাছে উদযাপনের মতো। রাফি বলেন, ‘এমন সাফল্যে কি বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তবে দর্শক হলে ফিরছে এটি আনন্দের। দর্শক এভাবে লুফে নেবে তা অপ্রত্যাশিত ছিল।’ এদিকে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে ‘পরাণ’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যসহ সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। এই সিনেমা দুটির অভাবনীয় সাফল্যে মন্দা চলচ্চিত্রের চাকা ঘুরে গেছে। যাঁরা এতদিন সিনেমা মুক্তি দিতে ভয় পাচ্ছিলেন, তাঁরা নড়েচড়ে বসেছেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন নির্মাতা তাঁদের ছবি মুক্তির তারিখ ঘোষণা করেছেন। নির্মিত হচ্ছে নতুন আরও সিনেমা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর