বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : শারমিন সুলতানা সুমি

যেখানেই যাই চেষ্টা করি দেশকে সঙ্গে নিতে

যেখানেই যাই চেষ্টা করি দেশকে সঙ্গে নিতে

চিরকুট ব্যান্ডের প্রধান ভোকালিস্ট শারমিন সুলতানা সুমি। সুমি নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। চিরকুট দলের অধিকাংশ গান তাঁরই লেখা ও সুরারোপ করা। এ ছাড়াও তিনি অন্য শিল্পীদের জন্য গান করেন, লেখেন ও সুর  করেন। তিনি সত্যিকারেই গানের মানুষ; গানের কারণেই পৃথিবীর নানা প্রান্ত ঘুরে বেড়ান তিনি।  তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

অভিনন্দন! ‘নদীরক্স’ প্রজেক্টের জন্য দুই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কেমন লাগছে?

অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রজেক্টটি এবার ‘সোশ্যাল’ এবং ‘নেটিভ’ দুই ক্যাটাগরিতে ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নিয়েছে। আসলে জলবায়ুর এই বৈশ্বিক দুর্যোগে নদীমাতৃক বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে মৃতপ্রায় নদীগুলোর প্রতি যত্নবান হতে গানে গানে তারুণ্যকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বিশেষ পথচলা ‘নদীরক্স’। আজকের এই বিচ্ছিন্নতার সময় তারুণ্যকে নদী আর প্রকৃতিমুখী করা, ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ করা, যত্নবান করাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ তারাই আমাদের আগামী। সল্ট ক্রিয়েটিভসের এই উদ্যোগে সিজন ওয়ানে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি নদী- পদ্মা, বুড়িগঙ্গা, কুশিয়ারা, সাঙ্গু, পশুর, ডাহুক ও চিত্রা নামে গান করেছে দেশের জনপ্রিয় সাত ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেইথ, আর্বোভাইরাস, অ্যাশেজ, চিরকুট, এফ মাইনর, বাংলা ফাইভ ও স্মুচেস। সামনে ব্যান্ডগুলা নিয়ে কনসার্টও হবে।

 

দীর্ঘ ২০ বছরের জার্নি ব্যান্ড ‘চিরকুট’র। এতদিনের জার্নি ও সামনে ‘চিরকুট’ নিয়ে পরিকল্পনা জানতে চাই।

জার্নিটা খুবই আনন্দের। আবার একই সঙ্গে অনেক শ্রমের, ত্যাগের, প্রাপ্তির ও ভালোবাসার। তাই এসব মিলে যদি একটি জিনিস গড়ে ওঠে এবং তার বয়স যখন ২০ বছর হয়, সেটা সত্যিই আলাদা কিছু। এ বছরই চিরকুটের বয়স ২০ বছরে পড়েছে। বছর শেষে আমাদের কিছু প্ল্যান আছে চিরকুটের ২০ বছর পূর্তি নিয়ে। বাংলাদেশের সিনেমায় চিরকুট বরাবরই নতুন গান দিয়ে এসেছে। এখনো গান করেই যাচ্ছি। নতুন প্রজেক্ট চলছে। ফোক গান করছি, ‘মাটিগীতি’। আমরা তো পুরনো ফোকগান নতুনরূপে শুনি। তবে এ সময়ের মানুষ, এ সময়ের দুঃখ, এ সময়ের আবেগ- এগুলোও তো আমাদের ফোকে ধরা উচিত। সে কথা ভেবেই এই ‘মাটিগীতি’ প্রজেক্টটি। চারটি গান আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে অবমুক্ত হয়েছে। গানগুলো আমরা লাইভেও করছি। সামনে আরও কিছু মাটিগীতির গান করব। যেখানে আরবান ফোকসং আছে, আবার শহরের দুঃখ, বেদনা, দুর্দশার কথাও আছে। পৃথিবীর, মানুষের, গাছেদের, পাখিদের দুঃখ, জলবায়ুর দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। সবকিছু নিয়েই প্রজেক্টটি। কাজ হচ্ছে, কাজ হবে- যতদিন সুস্থ থাকি, বেঁচে থাকি।

 

বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড দল স্করপিয়ন্সের সঙ্গে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন মাতালো চিরকুট। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

এই কনসার্টটি আমাদের জন্য আরও আবেগের ছিল কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কনসার্টটি হয়েছে। যেখানে ৫০ বছর আগে বিশ্বসেরা সংগীতশিল্পী জর্জ হ্যারিসন, পন্ডিত রবিশংকর, ববডিলানসহ অনেক বিখ্যাত শিল্পী গান করেছেন। তো সেই উত্তরাধিকার সূত্রে ৫০ বছর পর আমরা যখন বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি এবং স্করপিয়ন্সের মতো বিশ্বসেরা দলের সঙ্গে একই মঞ্চে পারফরম করেছি- এটা আনন্দের ও দেশের জন্য গর্বের।

 

কিছু উপহারও দিয়েছিলেন স্করপিয়ন্সের সদস্যদের...

যেখানেই যাই, যেখানেই সুযোগ পাই, সর্বদা চেষ্টা করি সঙ্গে করে দেশকে নিয়ে যেতে। যতটুকু সুযোগ পেয়েছি ওদের জন্য আমরা রিকশা পেইন্টের সানগ্লাস, চিরকুটের টি শার্ট উপহার দিয়েছি। দেশ থেকে লুঙ্গি নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু সময়ের অভাবে ওগুলো দিতে পারিনি। একদমই সময় ছিল না।

 

বেশ কিছু সিনেমায় চিরকুট গান করেছে। মুক্তিপ্রতীক্ষিত মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’ সিনেমায় চিরকুট কেমন ধরনের চমক নিয়ে আসছে?

অনেক দিন ধরে দিদারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ওর সিনেমা ‘বিউটি সার্কাস’ নিয়ে। পরে পাভেল আরিন মিউজিকটা প্রডিউস করে। মূলত ওর ডিরেকশনে চিরকুট ফিচার করেছে, যেটা আমি গেয়েছি। গানটির সুর এবং কথা আমার। গানটির নাম ‘নক্ষত্র’ (বয়ে যাওয়া নক্ষত্র)। একদম অন্যরকম একটি প্রেমের গান। গানটি শুনলে নতুন করে সবারই প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করবে।

 

শুনেছি সিনেমাটির প্রমোশনে সময় দেবেন...

কথা চলছে। সিনেমাটি যেহেতু দেখিনি, তবে যেহেতু জয়া আপা, ফেরদৌস, তৌকীর ভাই আছেন, নিশ্চয়ই অন্যরকম হবে। আর সার্কাস এমন একটি ঐতিহ্যবাহী বিষয়, যেটি এখন বিলুপ্তির পথে। সেটিকে কেন্দ্র করে সিনেমা, সত্যিই ইতিবাচক। খুবই ইন্টারেস্টিং কিন্তু এই সিনেমার কনসেপ্ট! দিদার সেটা চিন্তা করতে পেরেছে।

 

দুটি গানের কিছু অংশ নিয়ে ফিউশন, অভিমত কী?

এটা নতুন কিছু নয়। এটা আগে থেকেই হয়ে আসছে। গ্লোবালিও হয়ে আসছে। কোলাবোরেশন বলে। আমার প্ল্যান ছিল, চিরকুট একসময় ২০০ মিউজিশিয়ান কাজ করবে। ইনশাল্লাহ হবে।

 

ব্যান্ডের নাম ‘চিরকুট’। নামটা কীভাবে মাথায় এলো?

চিরকুট মানেই তো মেসেজ দেওয়া। সে চিন্তা থেকেই। আমরা তো গানের মাধ্যমেই মেসেজ দেই। কখনো ভালোবাসার, প্রেম, দ্রোহ, বিচ্ছেদের বা মিলনের। 

 

নতুনদের নিয়ে চিরকুটের ভাবনা কী?

‘নদীরক্স’ করেছি। আমার নিজের ‘কোকিল স্টুডিও’ থেকে নতুন একজন আর্টিস্টকে ফিচার করছি। রোজ নাম। ব্রিলিয়্যান্ট গান করে! আরও পরিকল্পনাও রয়েছে।

 

দেশের পাইওনিয়ার ব্যান্ড দলগুলোর এই যে ভাঙন...

দেখুন, আমি এই শব্দটার মানে ভাঙনের ঘোর বিরোধী। সো ‘ভাঙন’ কথাটি আর বলবেন না। আজ থেকে ৫০ বছর আগে যারা ছিল, তারা কি এখন আছে? নাই কিন্তু। একটা অস্তিত্ব যখন দাঁড়ায় তখন এটির পেছনে সবারই সমান অবদান থাকে। যারা খুবই দৃঢ়চেতা, তার হাত ধরেই কিন্তু সামনে চলতে থাকে। চিরকুটের বয়স ২০ বছর। অনেক মানুষ এসেছে, অনেক মানুষ চলেও গেছে। আমি কিন্তু ২০ বছর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এখন পাভেল, ইমন, নিরব আছে। নতুন আরেকজন (নিয়াজ) যুক্ত হয়েছে। কালকেও যদি চিরকুট থেকে দু-একজন চলে যায়, আমি কিন্তু চিরকুটেই থাকব। আমি যে স্বপ্ন নিয়ে চিরকুট দাঁড় করিয়েছি, সেটা চলতেই থাকবে। প্রত্যেকেরই কিন্তু কনট্রিবিউশন আছে। আমি বিশ্বাস করি যে, আপনার জীবন আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু আপনার কাজটির জন্য আরও বেশি পরিশ্রম করতে পারবেন। আমিও পরিশ্রমে বিশ্বাসী। সো চিরকুটে আমি গান করে যাব। একসময় ২ কোটি মানুষ শুনত। এমনও যদি সময় আসে যে, ২ জন মানুষ শুনছে তাও আমি গান করে যাব।

সর্বশেষ খবর