শিরোনাম
শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : শবনম

চুপচাপ আছি ভালো আছি

চুপচাপ আছি ভালো আছি

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একসময়ের বরেণ্য অভিনেত্রী শবনম। দেড় দশকেরও বেশি সময় নতুন কোনো চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেননি। তিনি চলচ্চিত্রে যুক্ত হয়েছিলেন ১৯৫৮ সালে। এরপর দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ‘আম্মাজান’ সিনেমায়। বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পীর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

‘আম্মাজান’ ছবির পর কোনো চলচ্চিত্রের কোথাও আপনাকে দেখা যায়নি, কেন?

১৯৯৮ সালে ‘আম্মাজান’ ছবির শুটিংয়ের পর কোনো স্টুডিওতে বা অনুষ্ঠানেও যাইনি। অনেক ব্যাপার আছে, প্রাণ খুলে সে সব বলতে পারছি না। পারব না। আর বলে লাভও হবে না। এক দিন শুনবেন, আমি মরে গেছি। তখন এফডিসির লোকজন অস্থির হয়ে উঠবে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি তো আমার ছেলেকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি আমার লাশ যেন কোনোভাবেই এফডিসিতে না যায়। রবিন (রবিন ঘোষ, প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক, শবনমের স্বামী) ঘোষও বলে গিয়েছিলেন, তাঁর লাশও সেখানে নেওয়া হয়নি।

 

এফডিসি নিয়ে এত অভিমান কেন?

অবশ্যই কারণ আছে। আমি তো বলেছি, বলব না। এফডিসি থেকে কত সম্মান পাচ্ছি, তা তো বলে শেষ করতে পারব না। হ্যাঁ, এটা ঠিক, মরে গেলে ফুলের মালা দেব, হয়ে গেল, তাই না। এই সুযোগ আমি কাউকে দিতে চাই না। কাউকে আমার লাশ নিয়ে মায়াকান্না করার সুযোগ দেব না। আমি যেভাবে নিজের বাসায় চুপচাপ আছি সেভাবেই ভালো আছি। শান্তিতে আছি। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে চাই না।

 

চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন?

দীর্ঘদিন ধরে এই ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খুব ভালো নয়। এ কথা মনে পড়লেই মনটা খরাপ হয়ে যায়। আসলে চলচ্চিত্র শিল্পে আগের মতো কিংবদন্তিরা এখন আর নেই। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু বলতে বা লিখতে হলে তো আসবে এহতেশাম, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, রহমান, এ জব্বার খান, শবনম, সুচন্দা, শাবানা, কবরী, ববিতা, রাজ্জাক, আলমগীর প্রমুখের নাম।  তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন বেঁচে নেই। যাঁরা আছেন তাঁরা কতটা সম্মান পাচ্ছেন। কাকে আমার গল্প শোনাবেন! কী যে হচ্ছে, কিছুই বুঝছি না।

 

বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রের কারও সঙ্গে কথা বলেছেন?

না, চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। আমি জানি, এসব বলে কোনো লাভ হবে না। এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ কী বা কী যে হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।

 
আমি মরে গেলে এফডিসির লোকজন অস্থির হয়ে উঠবে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার ছেলেকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি আমার লাশ যেন কোনোভাবেই এফডিসিতে না যায়।

 

নতুনদের কাজ দেখা হয়?

কারও সঙ্গেই দেখা হয় না। এখন কারা কাজ করছে, তাও তো জানি না। আগের মতো ‘চিত্রালি’ পত্রিকা নেই, সিনেমার খবরও রাখি না। সত্যি বলতে, কে আসছে, কে যাচ্ছে, কোন ছবিটা হিট হচ্ছে, কোনটা ফ্লপ- এখন আর এসব খবর জানা যায় না। তাই এসবের কিছুই জানি না।

 

এখনকার শিল্পীদের সম্পর্কে কী বলবেন?

কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’। মান্নার পর এখন শাকিব খান ছবি করছে। অপু বিশ্বাসকে চিনি। শাকিব খান আর অপু জুটি হয়ে অনেক ভালো ছবি করেছে। এরপর আর কে বা কারা আসছে, জানি না। টেলিভিশনে শাকিবের সিনেমা দেখি, সিনেমার গান শুনি। এভাবেই আরেকটু জানা। শাকিব খান আর আমার একসঙ্গে কাজ করা হয়নি। একসঙ্গে কাজ হলে হয়তো অনেক কিছু জানা হতো। শুধু জানি, সে অনেক দিন ধরে সিনেমায় কাজ করছে।

 

চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থার জন্য দায়ী কে?

আগের মতো মেধাবী পরিচালক নেই, গল্প লেখক নেই, টেকনিশিয়ান নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তো কেউ ক্যামেরা চালাতে পারলেই সিনেমা হয়ে গেছে মনে করেন। সিনেমা বানাতে হলে গল্প জানতে হবে, গল্প বুঝতে হবে, গান বুঝতে হবে, সম্পাদনা বুঝতে হবে। এ সময়ের ছবির কথা বেশি দিন কেউ মনে রাখে না। গানগুলো মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারছে না। কারণ, বেশির ভাগই মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে বেশি মনোযোগী। অথচ যেটা আসল কাজ, সেটা তারা মন দিয়ে করছে না। আগে সবাই কাজকে ইবাদত মনে করত, তাই তো এসব কাজ কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

 

এখন কীভাবে সময় কাটান?

আমার পরিবার, শ্বশুরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন নিয়ে ভালোই আছি। বাসায় থাকি। টেলিভিশন দেখি। গান শুনি। রান্না করি। ছেলে ঢাকায় এলে ওর জন্য রান্না করি। কখনো কখনো নিজের জন্য রান্না করি। জীবন তো চলেই যায়। নিজের পুরনো ছবিগুলো দেখি। রবিনের গান অনেক শুনি। আলাউদ্দীন আলী, খান আতাউর রহমানের গানও শুনি। স্মৃতি নিয়েই আমি আছি। কাউকে বিরক্ত করছি না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর