মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : এফ এ সুমন

শিল্পীর আসল জায়গা হচ্ছে স্টেজ

শিল্পীর আসল জায়গা হচ্ছে স্টেজ

সংগীত জগতের পরিচিত নাম এফ এ সুমন। ‘ভিতর কান্দে’, ‘জান রে’সহ অসংখ্য গান গেয়ে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ইউটিউব এবং ওয়েলকাম টিউনেও তাঁর গাওয়া গানগুলোর অবস্থান ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ার জনপ্রিয় প্ল্যাটফরম ‘সারেগামা বেঙ্গলি’র সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথোপকথনে - পান্থ আফজাল

 

‘সারেগামা বেঙ্গলি’তে সন্ধ্যা, লতা, সলিল, কুমার শানু বা রাঘবের পাশাপাশি আপনার গানও শুনতে পাবে সবাই। কেমন লাগছে?

অনুভূতি চমৎকার, অসাধারণ! যেসব লিজেন্ডের গান এতদিন বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে শুনেছি, এবার তাঁদের সঙ্গে আমার গানও একই প্ল্যাটফরমে সবাই শুনতে পাবে, এটা খুবই আনন্দের ও গর্বের। আপনারা জানেন, সারেগামা বেঙ্গলি একটি ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফরম। ইন্ডিয়ার এইএমভির মতো। সারেগামা বেঙ্গলিতে বিখ্যাত সব শিল্পীর গানই প্রকাশ পায়। ১০০ বছরের সেরা শিল্পীদের গানের বিশাল সংগ্রহশালা এটি।

 

কয়টি গানের চুক্তি হয়েছে?

এ পর্যন্ত তিনটি গানের এগ্রিমেন্ট হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমার গাওয়া একটি গান দেওয়া হয়েছে। বাকি আরও দুটি রয়েছে। পরবর্তীতে এগুলো একে একে প্রকাশ পাবে। চারটি ইনস্টলমেন্টে পেমেন্ট করার সিস্টেম। তাই যখনই পেমেন্ট করবে, তখনই গান তাদের দেওয়া হবে।

 

কোন গানটি দিয়েছেন?

তিনটি গানের মধ্যে প্রথমটি ‘মিনু রায় কলকাতায়’। এটি ফাইনাল হয়েছে। আরেকটি (ডেমো ভার্সন) ‘আমার মন লইয়া’ দিয়েছিলাম। ওদের পছন্দ হয়েছে। এটাও ফাইনাল করবে তারা।

 

এরসঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

শুধু বাংলা ভাষাভাষী নয়, পুরো ইন্ডিয়ার সবাই আমার গানগুলো শোনে। আর দেশের তুলনায় ইদানীং ভারতেই বেশি স্টেজ শো করা হয়। এভাবেই একসময় সারেগামা বেঙ্গলি আমার গান নিয়ে আগ্রহ দেখাল। তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো এগ্রিমেন্ট করা যায়। এরপর শুরু।

 

সে দেশে তো অনেক চাহিদা আপনার...

ওপারে অনেকেই আমার গান শোনে। অনেক চাহিদা রয়েছে সেখানে আমার। যেমন, সেখানে একটি স্টেজ শোতে যখন আমার কিছু প্রিয় গানের লাইন শুরু করেছি, তারা আমাকে অবাক করে দিয়ে গেয়ে উঠেছে। একটি গান ধরলে তারা পুরো গান করেছে। আমাকে গাইতেই দিচ্ছিল না। এটা ভাবতেই খুশি লাগে।

 

গোবিন্দর সঙ্গে একই স্টেজে পারফরম করা কতখানি রোমাঞ্চকর ছিল?

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোচবিহারে ওই শো করেছিলাম। ওই শো ছিল আমার কাছে অন্যরকম ভালো লাগার। কারণ প্রথমবার একসঙ্গে একই মঞ্চে পারফরম করেছি জনপ্রিয় অভিনেতা গোবিন্দর সঙ্গে। তাঁর অনেক সিনেমা দেখলেও সেবারই প্রথম কাছ থেকে দেখা। স্টেজ ভাগাভাগি করা। ইন্ডিয়ায় একটা কালচার রয়েছে যে, যারা সুপারস্টার তাঁদের  স্টেজ শোতে নিয়ে আসা। তাঁরা ড্যান্স পারফরম করেন, গান করেন বা দর্শকদের সঙ্গে আড্ডা দেন। ওইদিনের শোতে আমি ১ ঘণ্টা গান করেছি, গোবিন্দ ১ ঘণ্টা পারফরম করেছেন। সেখানে আমার ‘জান রে’ গানটি প্রচুর ভাইরাল। আমি সেদিন যখন এই গানটি শুরু করি তখন মাঠের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ হাজার শ্রোতা মোবাইলের ফ্লাশলাইট জ্বেলে আমার গানের সঙ্গে গাইছিলেন, সুর মেলাচ্ছিলেন। বিষয়টি সত্যিই রোমাঞ্চকর!

 

দেশে স্টেজ শো কেন কম করেন?

শিল্পীদের আয়ের বড় একটি উৎস হচ্ছে স্টেজ শো। দেশে আগে প্রচুর শো করেছি। তবে এখন ওপারে বেশি করা হয়। এটা অবশ্য ঠিক হচ্ছে না। কারণ, অনেকে ভাবেন আমি দেশে তেমন করে স্টেজ শো করি না। তবে ভালো লাগার বিষয় যে, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এ দেশের সবখানে আমার গান মুখে মুখে ফিরে।

 

নতুন কোনো গান আসছে কি?

শ্রোতাদের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়েই সবসময় গান করি। দেশ ও দেশের বাইরে অগণিত শ্রোতা সমান আগ্রহ নিয়ে আমার গান শুনে- এ বিষয়টি নতুন একটি গান তৈরির ক্ষেত্রে সচেতনভাবে মাথায় রাখতে হয়। একটি গান প্রস্তুত রয়েছে। নিজের চ্যানেলের জন্য কিছু গান তৈরি করে রেখেছি। ভিডিও আকারে রিলিজ দিব।

 

গান তো শোনার, ভিডিও কেন?

আসলে ট্রেন্ড হয়ে গেছে এখন। তবে আমার গান কিন্তু শোনে। আমি কিছু সিঙ্গেল ভিডিও করে আমার চ্যানেলে ছাড়ছি। পারতপক্ষে সেগুলো তেমন করে মিউজিক্যাল ফিল্ম নয়।

 

স্পটিফাই অ্যাকাউন্ট খুলেছেন...

এটি নিয়ে ইন্টারেস্টেড ছিলাম না। তবে কিছু ভাই-ব্রাদার এটির বিষয়ে বলল বলে অ্যাকাউন্ট খুললাম।

 

গানের সার্বিক অবস্থা কেমন?

শিল্পীর জায়গা স্টেজ। যে লাইভ যত বেশি করবে সে দর্শকের মাঝে তত বেশি দিন বেঁচে থাকবে। এখন তো শো কম হচ্ছে। তবে গান ভালো হলে প্রমোট করা সহজ হয়। তাও হচ্ছে না। অন্যদিকে ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে গানের প্রকাশ কমে গেছে, ফাননির্ভর নাটক প্রকাশ পাচ্ছে। তাই মানুষ ফানি নাটক বেশি দেখছে। অডিও প্রতিষ্ঠানও গানে ইনভেস্ট কম করছেন। মানুষ টিকটক, লাইকির ভিডিও দেখছেন। এটা গানের জন্য হার্মফুল। আমি চাই, ভালো গান হোক। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াক।

সর্বশেষ খবর