মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : কুমার বিশ্বজিৎ

যত দিন বাঁচি আনন্দ নিয়েই বাঁচতে চাই

শৈশব- কৈশোরের পূজা উৎসব ছিল অন্যরকম। তখন ঢুলির সঙ্গে ১০-১৫ দিনই থাকতাম

যত দিন বাঁচি আনন্দ নিয়েই বাঁচতে চাই
চিরতরুণ কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক কুমার বিশ্বজিৎ। গানে গানে অনেকটা সময় পেরিয়ে এলেন তিনি। এ বছর সংগীত জীবনের চার দশক পার করেছেন। চল্লিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছেন। সংগীত জীবনের এই দীর্ঘ জার্নি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন-পান্থ আফজাল

কেমন আছেন? দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল, যাচ্ছেন?

অনেক ভালো আছি। বাইরে এখন যাব না। চার দশকপূর্তির আয়োজন নিয়ে অনেক ব্যস্ত। অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তবে নভেম্বরের দিকে যেতে পারি।

 

তাহলে ৪০ বছরপূর্তি আয়োজন কবে হচ্ছে?

জানুয়ারিতে। তার আগে সংবাদ সম্মেলন করে এই আয়োজন নিয়ে সবাইকে জানাতে চাই। এটি নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। দেখা যাক।

 

নভেম্বরে দেশের বাইরে যাবেন, কোনো উপলক্ষ আছে?

১৭ নভেম্বের যাব। আমার ছেলের জন্মদিন ২২ নভেম্বরে। তার জন্মদিনে কেক কেটে উইশ করেই দেশে ফিরে আসবে।

 

পাঁচ দেশের মঞ্চে গান গাওয়ার কথা ছিল...

এখন যাওয়া হবে না। নেক্সট ইয়ার।

 

সংগীত জীবনে ৪০ বছরপূর্তি আয়োজন নিয়ে পরিকল্পনা কী?

বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে। উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। ১৯৮২ সালের আগেই আমি গান গাইতে শুরু করি। তবে শ্রোতা-দর্শক আমাকে চিনতে শুরু করে ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’ গানটি দিয়ে। এ গানের মাধ্যমেই পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করি। সেই হিসেবে আমার সংগীত জীবনের চার দশক পূর্ণ হয়েছে। আমার সংগীত জীবনে যাদের অবদান ছিল, তাঁরা অনেকেই বেঁচে নেই। আয়োজনে তাঁদের স্মরণ করা হবে। যারা বেঁচে আছেন, তারা এই আয়োজনে থাকবেন।

 

এই আয়োজনে কোনো সারপ্রাইজ থাকছে?

হ্যাঁ। এখন সব ফোকাস এই আয়োজন নিয়ে। এই আয়োজনের জন্য নিজের গাওয়া কিছু ভালো লাগা গান নতুন সংগীতায়োজনে তৈরি করছি। আমি মনে করি, ওই গানগুলোর মধ্যে অনেক সুন্দর কথা আছে, যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। নতুন গানও থাকবে। নতুন কম্পোজিশনে। এরই মধ্যে কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বাকিটুকু না হয় সারপ্রাইজ থাকুক। আমি জানি না সংগীত জীবনের হাফ সেঞ্চুরি বা সুবর্ণজয়ন্তী পাব কিনা! যেহেতু চার দশক পেয়েছি, তাই এটাই উদযাপন করতে চাই। যত দিন বাঁচি আনন্দ নিয়ে বাঁচতে চাই, আর সবার জন্য আরও কিছু ভালো ভালো গান উপহার দিয়ে যেতে চাই। জীবন তো আসলে ক্ষণিকের। কে কখন চলে যায়, তার কোনো হিসাব নেই। অনেক সহকর্মীকে এরই মধ্যে হারিয়েছি। তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।

 

আপনার আত্মজীবনী প্রকাশ পেয়েছে, তবে সংক্ষিপ্ত আকারে। আপনাকে জানার আরও অবকাশ রয়েছে ভক্তদের। আপনার কী অভিমত?

আসলে পূর্ণাঙ্গ করা যায় না। চার দশক! দীর্ঘ সময়। আরও অনেক বড় বই বের করতে হবে। বইটিতে কিছু বিষয়, স্মৃতি শুধু টাচআপ করা হয়েছে। কুমার বিশ্বজিতের পূর্ণাঙ্গ জীবনী তো আপনারা লিখবেন। আমার গান তো সার্বজনীন। এত দীর্ঘপথ পেরিয়ে আসাটা মসৃণ ছিল না। এখন তো সবার জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। এখন নতুন শিল্পীরা গাড়িবাড়ি করতে পারছে, আমরা তখন তো পারিনি। এ সময়ে এসে এখন মনে হয়, আরও কিছু ভালো কাজ করতে পারতাম। আমার কর্মের চেয়ে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি বেশি। কখনোই সংগীতের কোনো বিষয়ে আপস করিনি। ফলে কখনো সফল হয়েছি, আবার কখনো হইনি। সংগীতের জন্য অনেক কিছু বিসর্জন দিয়েছি। যখন সংগীত জগতে এসেছি, তখন গানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে কাজ করেছি।

 

সংগীতের প্রথম জাতীয় উৎসব সম্মেলন হলো। সংগীত ঐক্যের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হয়েছে?

সেগুলো এগুচ্ছে। দ্রুতই রেসপন্স পাব মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। দুটি মন্ত্রণালয় (তথ্য ও সংস্কৃতি) ও কপিরাইট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। একটু দেরিতে হলেও আমাদের অনেক দাবি পূরণ হবে। সেই লক্ষ্যে সংগঠন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দাবি পূরণ হলে সংগীত ভুবনের অনেকের মেধা, শ্রম ও সৃষ্টির সঠিক মূল্যায়ন হবে।

 

নতুন গান আসবে?

কিছু নতুন গান পাবেন। অনেকগুলো আন্ডার প্রডাকশনে আছে।

 

স্টেজ শোতে পুরনো জনপ্রিয় গানগুলোই শুনতে চায় সবাই...

কয়েকদিন আগে বনানী ক্লাবে গান করেছি। প্রায় ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট টানা গান করেছি! শেষই হয় না। অনেক বেশি হয়ে গেছে। সবার অনুরোধ, পুরনো গানগুলোই। নতুন কিছু গানও করেছি। ২৯ সেপ্টেম্বর ও ৫, ৬ অক্টোবরও স্টেজে গান করব।

 

সামনে পূজা উৎসব। শৈশবে পূজায় কেমন মজা করতেন?

শৈশব-কৈশোরের পূজা উৎসব ছিল অন্যরকম। ঢুলি আসত রাঙ্গুনিয়া থেকে। তখন ঢুলির সঙ্গে ১০-১৫ দিনই থাকতাম। ওর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো। এর জন্য মায়ের হাতে কত যে মার খেয়েছি। মা তো চলে গেছেন! আসলে এখন তো দেওয়ার সময়। চাওয়া-পাওয়ার সময় তো কবেই চলে গেছে।

সর্বশেষ খবর