শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : আজিজুল হাকিম

জীনাতের জন্যই আজ আমি আজিজুল হাকিম

জীনাতের জন্যই আজ আমি আজিজুল হাকিম

মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হলেও পরে টিভিনাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান আজিজুল হাকিম। এরপর সিনেমায়ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তিনি।  দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি নাটক ও সিনেমায় সমানতালে অভিনয় করে চলেছেন এই তারকা।  তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন? অফিসে নাকি শুটিংয়ে?

আলহামদুলিল্লাহ! অনেক ভালো আছি। আজ শুটিং নেই, অফিসে আছি। শুটিং করব ১৭, ১৮ তারিখে দীপ্তটিভির ‘বকুলপুর সিজন-টু’র।

 

শুটিং অফিসের ব্যস্ততার সামগ্রিক খবর কী?

হাহাহা... আমার সব খবর জীনাতের কাছ থেকেই সহজে পাওয়া যায়। সেই আমার সবকিছু দেখাশোনা করে। শুধু সামাজিক, পারিবারিক বিষয়ই নয়, আমার কাজের সিডিউল, অফিসের কাজের সমন্বয় জীনাতই মেইনটেইন করে। তাই আমি সবসময় নিশ্চিত থাকি। আমাদের দুজনের মধ্যে রসায়নটা দারুণ। আমাদের কাজের ধরনটাও একই। দুজনের ব্যস্ততা একই রকম। জীনাত সবসময়ই বলে, ‘তুমি একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। তাই তোমার সবকিছুই খেয়ালের দায়িত্ব পুরোটাই আমার। তুমি শুধু তোমার কাজটাই করে যাও। আমি আছি, নিশ্চিন্তে থাক।’ এখনো পর্যন্ত এই নিয়মেই জীবন চলছে... হাহাহা।

 

তাহলে তো বেশ! এত দীর্ঘ সময়েও দুজনের বোঝাপড়ার কোনো ঘাটতি হয়নি...

সেটা কখনো হবেও না। বলতে দ্বীধা নেই, জীনাতের এমন ভালোবাসা, দায়িত্বশীলতা ও সহযোগিতায় আজ আমি আজিজুল হাকিম। আমরা একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। তাই আমি অফিসে না গেলেও সে সবকিছু সমন্বয় করে। অন্যদিকে প্রথম থেকেই ডিরেক্টর-প্রযোজকদের সঙ্গে কাজের বিষয়ে কথা বলা ও আনুষঙ্গিক বিষয় সে করে চলেছে। তাই সবকিছু সহজে সমন্বয় হয়। সে আমাকে বোঝে আমিও তাকে। যেহেতু আমরা দুজনই একই ঘরের মানুষ। তাই যে কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রতিদিন আলাপ-আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে আমার যদি কিছু বলার থাকে আমি বলি, ওর কিছু বলার থাকলে ও বলে। একসঙ্গে থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়। একসঙ্গে থাকার সুবিধাটা কাজের ক্ষেত্রটাকে আরও সহজ করে।

 

ঘরের এই প্রিয় মানুষটিই একসময় আপনার অনেক বড় ভক্ত ছিলেন পরিণয়টা হলো কীভাবে?

এক পয়লা বৈশাখে আমাদের দুজনার দেখা হয়। রমনা বটমূল থেকে বেরিয়ে আমি বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি টিএসসিতে। জীনাত ওর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। ভক্ত হিসেবে জীনাত অটোগ্রাফ নিতে আসে। সেই প্রথম দেখা। তারপর টেলিফোন নম্বর দেওয়া হলো। তখন তো মোবাইল ছিল না। বাসার টেলিফোন নম্বর দিলাম। সেই টেলিফোনে কথা বলতে বলতে কখন যেন মনে হলো কথা বলতে তো ভালোই লাগছে। মনে হলো বোঝাপড়াটা ভালোই হবে। অতঃপর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে। সেই থেকে একসঙ্গে প্রাণবন্ত পথচলা। আসলে প্রেম করার সময় পাইনি। পরিচয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় বিয়ে। তবে জীবনসঙ্গী বলেন আর বন্ধু বলেন আমরা একে অপরের।

 

চিরসবুজ তারুণ্য ধরে রাখার গোপন রহস্য কী?

গোপন রহস্য বলে কিছু নেই। নিয়মিত জীবনযাপন, মানে সময়মতো ঘুম, যথার্থ খাদ্যগ্রহণ, খাদ্যাভ্যাস, ঘড়ির কাঁটা মেপে কাজ করা, জীবন থেকে হতাশা আর বিষাদকে দুই হাতে দূরে ঠেলে দেওয়া- এসব নিয়ম-কানুন মেনে নিতে পারলেই বয়সটাকে চিরসবুজ করে রাখা কোনো ব্যাপার নয়। তবে আমার এই বয়স ধরে রাখার জাদুর পেছনে যার একমাত্র অবদান তিনি হলেন আমার প্রিয় পত্নী জীনাত। তার হাতেই রয়েছে আমার চিরসবুজ বয়সের জাদুর কাঠি।

 

শোবিজে কী কাজে এখন ব্যস্ত রয়েছেন?

দীপ্তটিভিতে চলছে ‘বকুলপুর সিজন-টু’, আরটিভিতে ‘গোলমাল’, নাগরিকে ‘মেঘে ঢাকা আকাশ’, মাছরাঙায় ‘পিতা বনাম পুত্র গং’ ধারাবাহিক। নতুন দুটি সিরিয়ালে কাজের কথা হচ্ছে। নাম এখনো ঠিক হয়নি; প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গ্রিনটিভি ও দীপ্তর জন্য নির্মিত।

 

শুধু কি সিরিয়াল করছেন? শোনলাম ওটিটিতে নতুন একটি কাজ করছেন?

তা নয়; বড়দিনের জন্য একটি কাজ করেছি। কিছু খণ্ড নাটক, ওভিসিতেও কাজ করেছি। আর হ্যাঁ, বিঞ্জের একটি কাজ করছি। ভিকি জাহেদের নির্মাণে। নাম  ‘সাইলেন্স’। এটি পাঁচ পর্বের। নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ১৫ তারিখ পর্যন্ত শুটিং চলবে। দুটি টিভিসির বিষয়েও কথা হয়েছে। নভেম্বরেই হবে।

 

গলুইতে আপনার অভিনয়ে দর্শক মুগ্ধ হয়েছে এরপর নতুন কোনো সিনেমায় কাজ করেছেন?

গলুইয়ের পর এস এ হক অলিকেরই আরেকটি সিনেমায় কাজ করার কথা। আর দুটি মুভি তৈরি হচ্ছে এডিটিং প্যানেলে। একটি মিশুক মনির ‘দেয়ালের দেশ’, অন্যটি জেলেদের নিয়ে চিংড়ি ঘেরের ওপরে উত্তম ও তালাত মাহমুদের ‘কোন এক কালে’।

 

সিনিয়র শিল্পী হিসেবে এখন মূল্যায়ন পান?

আমার ক্ষেত্রে বলব, অবশ্যই পাই। অন্যদের বিষয় জানি না, আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা আমাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন। নতুনদের সঙ্গে আমার কাজের সুযোগ অনেক হয়েছে। যেমন আমি যখন ভিকি জাহেদের ‘রেডরাম’ করেছি, অনেক সম্মান দিয়েছেন। নিয়মিত খোঁজখবরও নিয়েছেন।

 

সিনেমার সুদিন কি সত্যিই এসেছে?

সত্যিই এটি পজিটিভ সাইন। রোজার ঈদ থেকে শুরু হয়েছে এ ধারাবাহিকতা। দর্শক আগ্রহ নিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখছে- বিষয়টি সত্যিই আনন্দের। নাম যদি বলি- গলুইয়ের পর হাওয়া, পরাণ, বিউটি সার্কাস দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। দর্শকের কথা চিন্তা করে এখন তো আন্তর্জাতিক মানের কাজ হচ্ছে। অনেক প্ল্যাটফরম রয়েছে সিনেমা দেখার। টিভির পাশাপাশি ওটিটি, ইউটিউবে দর্শক ভিড়ছে।

 

তারকাদের ইমেজ সংকট নিয়ে অভিমত কী?

অনলাইনে হাতের মুঠোয় আসার কারণে সবকিছু সহজ হয়ে গেছে। আগে তো ফোন করে বা সাংবাদিকরা সরাসরি দেখা করে ইন্টারভিউ করতেন। এরপর প্রিন্টে প্রকাশ। তবে এই বিষয়টি যার যার ব্যক্তিগত রুচি, চিন্তা। তারকারা যদি নিজেদের ইমেজ ধরে রাখতে না পারেন, তবে সেটা তাঁদের ব্যর্থতা।

সর্বশেষ খবর