মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : জাকিয়া বারী মম

প্রতিটি মুহূর্তেই মানুষ বাঁচে

প্রতিটি মুহূর্তেই মানুষ বাঁচে

ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার জনপ্রিয় তারকা জাকিয়া বারী মম। এই লাক্সতারকা পছন্দ করেন বৈচিত্র্যময় ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ বছর ধরেই নাটক, সিনেমা আর ওটিটিতে মমকে বহুরূপে দেখেছেন দর্শক। বর্তমানেও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্র ও ওয়েব কনটেন্টে কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

‘কার্তিকের আমন্ত্রণে ভৈরব তীরে, সূর্য-রাঙা মেঘে কাঁচা সুপারির ঘ্রাণ অলীক চন্দ্রপ্রভা’-ফেসবুকে এমন ক্যাপশন দিয়ে সুন্দর কিছু ছবি পোস্ট করেছেন। কোথায় আছেন? আজ কি শুটিং করছেন নাকি এভাবে ঘুরেই বেড়াচ্ছেন?

হাহাহা... এই ক্যাপশনটি দিয়ে কিছু ছবি পোস্ট করেছিলাম দুই দিন আগে। তখন খুলনায় ছিলাম, ভৈরব নদের আশপাশেই। মোবাইল দিয়ে ভালো লাগা কিছু মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করেছিলাম। ছয় দিন ছিলাম একটি সিনেমার শুটিংয়ের জন্য। এখন অবশ্য ঢাকায়ই আছি।

 

কোনো সিনেমার শুটিং করেছেন? আপনার অভিনীত চরিত্রটি কেমন?

সিনেমার নাম বদলাবে। তাই সঠিক করে বলতে পারছি না। এটি সাইফুল ইসলাম মান্নু ভাইয়ের সিনেমা। চরিত্র? মাত্র তো শুরু করলাম। চরিত্র, গল্প ও আনুষঙ্গিক বিষয় এখনই বলতে চাচ্ছি না। সব ঠিকঠাক হলে বলব। পরিকল্পনা করে কথা বলাই তো ভালো, তাই নয়?

 

এই সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাবে?

তা তো অবশ্যই করা যায়! এক্সপেরিয়েন্স অনেক ভালো ছিল। কাজটি করতে গিয়ে অনেক ইনজয় করেছি। সুন্দর লোকেশনে, সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছি। আসলে মুহূর্তেই মানুষ বাঁচে। তাই মুহূর্তগুলো সুন্দর হওয়া দরকার।

 

এরই মধ্যে নতুন আর কোনো কাজ করছেন?

অনেক দিন হলো বিটিভির কোনো কাজ করা হয় না। এবার বিটিভির জন্য একটি কাজ করব। ইমদাদুল হক মিলন ভাইয়ের লেখা, নাদের চৌধুরী ভাইয়ের পরিচালনায় কাজটিতে আমার সঙ্গে রয়েছেন সজল।

 

সম্প্রতি ‘দশ রূপে মম’র পোর্টফোলিও অনেক সাড়া ফেলেছে। কোন উদ্দেশ্যে কাজটি করা হয়েছে?

নাটকে তো দ্বৈত চরিত্র করেছি বেশ কবার। তবে এবার একসঙ্গে ১০টি চরিত্র ক্যারি করতে হয়েছে। তবে এই মাধ্যমটা একেবারে আলাদা। যেখানে স্থিরচিত্রের মাধ্যমে ভিজ্যুয়ালটি সাজানো হয়েছে। সোসাইটির বিভিন্ন স্তরের নারীদের তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই ‘পোর্টফোলিও’র মাধ্যমে। এটির মূল উদ্দেশ্য নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতা, নারীর অবদান, নারীর স্ট্রাগল, সমাজে নারীর কন্ট্রিবিউশন ও সৌন্দর্যসহ ১০টি দিক তুলে ধরা। এটি করা হয়েছে প্রোফাইল ট্যালেন্টের উদ্যোগে, যার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে ছিলেন ইয়াছির আল হক, স্টাইলিংয়ে রুবামা ফাইরুজ এবং ফটোগ্রাফিতে ভাস্কর স্যাম। এই তিনজনে মিলে কাজটি সুন্দর করে ডিজাইন করেছেন। আমি মনে করি, টিমওয়ার্ক ভালো হলে কাজের আউটপুটও ভালো হয়। কাজটি করে আমার খুবই ভালো লেগেছে।

 

‘ওরা ৭ জন’ নিয়ে প্রত্যাশা কেমন?

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পাই এই দেশ। তাই মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্মের পরিচয় বহন করে। শুধু গল্প পড়ে বা সিনেমা দেখে নয়, আমার নানার কাছ থেকে ছোটবেলায় তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার নানা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর কাছ থেকে সেই সময়ের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তর শুনেছি। সেটি একটা এক্সপেরিয়েন্স। পরবর্তীতে একটি মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে কাজ করেছি। খিজির হায়াতের ‘ওরা ৭ জন’ মানুষের গল্প। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়কে ধরতে চেয়েছি। নির্মাতাও এই গর্বের ও সম্মানের মুক্তিযুদ্ধকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন সাত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে। এর বাইরে নারীদের পাওয়া-না পাওয়া, ত্যাগের গল্প ওঠে এসেছে। কাজটি করে ভালো লেগেছে। দর্শকদেরও পছন্দ হবে।

 

ময়লাওয়ালির চরিত্রে অভিনয় কতটা কঠিন ছিল?

৪০ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘কোহিনূর’। এটি একটি কঠিন কাজ। এটির কথা ভাবলে, এখনো মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে। কাজটি করার সময় বিপদেও ছিলাম। এই কাজটির মধ্যে নিমজ্জিত থাকতে হয়েছে প্রতিক্ষণ। আমার চরিত্রের নাম কোহিনূর। যখন এই সিনেমার কাজে মাতুয়াইলে ময়লার ভাগাড়ে সরাসরি গেলাম, তখন আসলে অনুভব করলাম বাস্তবতা। উপলব্ধি করলাম জীবন কতটা কঠিন। কাজটি করতে গিয়ে একটা সময় দেখলাম সবাই বমি করছেন। পানি খাচ্ছেন। আমারও অবস্থা একই। মাত্র ৩-৪ হাজার টাকার জন্য ভাগাড়ে কাজ করছে কোহিনূরের মতো হাজারো মানুষ। ঢাকায় কি করে সেটা জানে না বাড়ির মানুষ। এসব ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়। টিমকে থ্যাঙ্কস, দারুণ একটি কাজে আমাকে যুক্ত করার জন্য।

 

আফজাল হোসেনের সঙ্গে একটি কাজ করেছিলেন...

‘মর্নিং কফি’। আফজাল ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করাটা দারুণ এক এক্সপেরিয়েন্স! কাজটি আমি অনেক আনন্দের সঙ্গে করেছি। পুরো টিম, নির্মাতা বাশার জর্জিস, আফজাল ভাই দারুণ ইফোর্ট দিয়েছেন।

 

ওটিটিতেও আপনি অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন। এসব দর্শকনন্দিত হওয়ার মূল কারণ কী?

টিভি নাটকের মতো কন্ট্রাক্ট, মহানগর, সাহসিকা-টু, রিফিউজি ছাড়াও প্রতিটি ওয়েব সিরিজ খুবই যত্ন নিয়ে করেছি। কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ কাজগুলোর মধ্যে ডেডিকেশন, মন ও মগজের সংযোগ ছিল। এভাবে সব কাজই ভালো হয়। এখন জীবনকে আরও কাছ থেকে বলার সময় হয়েছে। আমি শুরু থেকে অভিনয়ই করতে চেয়েছি। অভিনয়টাকে হৃদয়ঙ্গম করতে চেয়েছি। সেই যাত্রা এখনো অব্যাহত আছে এবং থাকবে।

 

ফটোশুটেও অন্যভাবে উপস্থাপন, রহস্য কী?

হাহাহা... কোনো রহস্য নেই। এসব আসলে ভেবেচিন্তে করা নয়। অনেক দিন ধরেই তো কাজ করছি। নানাভাবে দর্শক দেখছেন আমাকে। তাই জীবনকে সুন্দর করার জন্য সবার কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ। 

সর্বশেষ খবর