রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : অনিমা রায়

জীবনবোধের অংশ হিসেবেই গাইবার চেষ্টা করি

জীবনবোধের অংশ হিসেবেই গাইবার চেষ্টা করি

রবীন্দ্রচর্চা ও সংগীতে ইতোমধ্যেই একটি উচ্চ আসন গড়ে নিয়েছেন স্বনামধন্য শিল্পী অণিমা রায়। গানের জগতে তাঁর সৃষ্টিশীল বিচরণ ও নিবেদিত ভূমিকার জন্য শ্রোতাহৃদয়ে সহজেই অনন্য স্থান তৈরি করা এই শিল্পীর মুখোমুখি হয়েছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

গান নিয়ে এখনকার ব্যস্ততার কথাই প্রথমে শুনব

বর্তমানে গান নিয়ে আমার ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া তো নিয়মিত আছেই, তবে মঞ্চ হচ্ছে শিল্পীদের প্রকৃত প্ল্যাটফরম। এখন মঞ্চে অনেক কাজ করছি। তাছাড়া কয়েকটি গানও ইতোমধ্যেই করা হয়েছে।

 

গানের কথাই শুনি

ভারতের সংগীতকার প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কম্পোজিশনে ‘নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায়’ গানটি সম্প্রতি করলাম। এটি নৃত্য বিলিয়েড। এর জন্য ওডিসি কম্পোজিশন করাও হয়েছে। ওডিসিতে অংশ নিয়েছে প্রান্তি। সোনারগাঁর চারুশিল্প জাদুঘরে এর দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ব্যানারে এর ভিডিওগ্রাফি করেছে ইয়াসিন ইলান। আরেকটি গান ‘আজি তোমায় আবার চাই শোনাবার’ ইমপ্রেস অডিও ভিশনের ব্যানারে প্রকাশ পেয়েছে। আমার এই প্রিয় গানটির কম্পোজিশনেও ছিলেন প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া কিছুদিন আগে কাশ্মীর গিয়েছিলাম, সেখানে ‘পাখি আমার নীড়ের পাখি’ রবীন্দ্রসংগীতটি ধারণ করেছি। মাস দুয়েকের মধ্যে এটি প্রকাশ পাবে।

 

গানের অবস্থা সার্বিকভাবে এখন কেমন মনে হচ্ছে?

আমি মনে করি, নজরুল ও রবীন্দ্রসংগীতের অবস্থা এখন অনুকূল নয়। যেমন একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, করোনাকালের পর মানুষ যেভাবে আধুনিকসহ অন্যান্য গান শুনছে, তেমনিভাবে নজরুল বা রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এভাবে যদি মৌলিক গান থেকে মানুষ দূরে সরতে থাকে, তাহলে দেশীয় প্রাণের গানের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। এই অবস্থা একজন গানের মানুষ হিসেবে কখনো মেনে নিতে পারি না। আমার কথা হলো, মূলধারার গান কেন হারাবে। এসব গান যদি কেউ শুনতে না চায়, তাহলে দেশীয় সংস্কৃতি মূল শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

 

আমাদের দেশে কিন্তু রবীন্দ্র একাডেমি নেই। আমি বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলব দেশে সঠিকভাবে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা ও শেখার জন্য রবীন্দ্র একাডেমি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। আরেকটি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময় স্কুলেও কিন্তু বাচ্চাদের জন্য রবীন্দ্র-নজরুল প্রতিযোগিতার কোনো আয়োজন নেই।  বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ চিন্তাও করে না।

 

বর্তমান সময়ের শিল্পীদের গান নিয়ে প্রতিক্রিয়া কেমন?

এক্ষেত্রেও বলব এখনকার শিল্পীদের মধ্যে রবীন্দ্র ও নজরুল চর্চার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। একজন শিল্পী যদি রবীন্দ্র ও নজরুল গান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে তাহলে তার মধ্যে গানের প্রতি বোধের জায়গাটি অন্তঃসারশূন্যই হয়ে থাকবে। এখনকার ফোক গান যেভাবে করা হচ্ছে, তাও দুঃখজনক। চটকদার আঙ্গিকে ওয়েস্টার্ন ভঙ্গিতে ওই ধরনের পোশাক পরে যদি ফোক আর রবীন্দ্র-নজরুল কিংবা লালন গীতি গাওয়া হয়, তাহলে ভিনদেশি কালচারের দোলাচলে পড়ে আমাদের সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটতে বাধ্য।

 

দেশে গানচর্চার যথেষ্ট প্ল্যাটফরম আছে কি?

না, এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভাব রয়েই গেছে। আমাদের দেশে কিন্তু রবীন্দ্র একাডেমি নেই। আমি বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলব, দেশে সঠিকভাবে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা ও শেখার জন্য রবীন্দ্র একাডেমি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। আরেকটি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময় স্কুলেও কিন্তু বাচ্চাদের জন্য রবীন্দ্র-নজরুল প্রতিযোগিতার কোনো আয়োজন নেই।  বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ চিন্তাও করে না। বাচ্চাদের অন্তরে মূলধারার গানের আলো জ্বালাতে অভিভাবকদেরও দায়িত্ব হচ্ছে তাদের মৌলিক গান সম্পর্কে জ্ঞান দান ও চর্চার ব্যবস্থা করা।

এখনকার প্রজন্ম নতুন প্রযুক্তির জাঁতাকলে পড়ে ভিনদেশি গান আর সংস্কৃতির প্রতি অন্ধভাবে ঝুঁকে পড়ছে, এটি একটি দেশের সংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এতে করে এই প্রজন্ম না হবে ময়ূর না হবে কাক। বঙ্গবন্ধু যেখানে নজরুল আর রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ সেখানে জাতি হিসেবে আমরা তাঁর আদর্শ কেন নিজেদের মধ্যে লালন করতে চাইব না বা পারব না, এটি কী দুঃখজনক নয়?

 

সবশেষে একজন রবীন্দ্রশিল্পী হিসেবে আপনার অনুভূতি?

রবীন্দ্রনাথের গান আমি আমার জীবনবোধের অংশ হিসেবেই গাইবার চেষ্টা করি। তাই প্রতিটি গানই বিভিন্ন ধরনের সংগীতায়োজনে হয়ে ওঠে অনন্য। রবীন্দ্রসংগীত তাই সবসময়ের জন্যই সমসাময়িক।

আর আমি মনে করি, একজন শিল্পী হিসেবে শুধু রবীন্দ্র গান গাওয়াই নয়, তাঁর মূল্যবোধের চর্চা করাটাও আমার দায়িত্ব। সেটিই করেছি।

সর্বশেষ খবর