শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : অনন্ত জলিল

সফলতার জন্য বিগ বাজেট নয়, গল্পই প্রধান

সফলতার জন্য বিগ বাজেট নয়, গল্পই প্রধান

অনন্ত জলিল, ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা। চলতি বছরের ঈদুল ফিতর থেকে দেশীয় চলচ্চিত্র আবার দর্শকনজর কাড়ছে। ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে এই অভিনেতার ছবি ‘দিন : দ্য ডে’।  এই ছবিটিও দেশ-বিদেশে সফলতা পেয়েছে। দেশীয় ছবির সুদিন ফেরা নিয়ে অনন্ত জলিলের বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

দীর্ঘদিন পর ঢাকার ছবি দেশ-বিদেশে সফল হচ্ছে, অনুভূতি কেমন?

এটি আসলেই অসাধারণ একটি ভালো লাগার ব্যাপার। আমাদের ছবি যদি দর্শক দেখতে আবার সিনেমা হলে ফেরে তাহলে চলচ্চিত্র শিল্প ফের ঘুরে দাঁড়াবে। প্রযোজক, প্রদর্শক, নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী সবাই প্রাণ ফিরে পাবেন। দেশের এই প্রধান গণমাধ্যমটির জন্য এরচেয়ে বড় সফলতা আর কী হতে পারে। এই সফলতার ধারা ধরে রাখতে হবে। তাহলে বন্ধ হওয়া সিনেমা হল খোলাসহ নতুন সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হবে। এতে ছবি প্রদর্শনীর স্থান বাড়লে একজন প্রযোজক পুঁজি ফেরত পাওয়ার আশ্বাসে নির্ভয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসনেব। এতে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি পেয়ে সিনেমা হল মালিকরাও সিনেমা হল পরিচালনায় স্বস্তি পাবেন।

 

ভালো ছবি নির্মাণের ধারা কীভাবে ধরে রাখা যায়?

দর্শক দেখতে চায় এমন গল্পের ছবি নির্মাণ করতে হবে। এর জন্য বিগ বাজেট প্রয়োজন নেই। ছবির গল্পে সমসাময়িক চিত্র, উন্নত নির্মাণ, নতুন প্রজন্মকে সুস্থ বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি সমৃদ্ধ বাণী থাকলে সে ছবি যে অবশ্যই দর্শক দেখতে সিনেমা হলে ফিরে আসে তার প্রমাণ সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার পাওয়া গেছে। এই কনসেপ্ট নিয়েই ভালো ছবি নির্মাণের ধারা বজায় রাখতে হবে।

 

ভালো গল্প বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?

ভালো গল্প মানে মৌলিক গল্প হতে হবে। যে গল্পে দেশ, সমাজ, পরিবার, থ্রিলার, অ্যাকশন, রোমান্স থেকে শুরু করে ফুল প্যাকেজের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুধু অ্যাকশন বা রোমান্স দিয়ে ছবি বানিয়ে লাভ নেই। কারণ একটি ছবিতে যদি সুস্থ বিনোদনের সঙ্গে সমৃদ্ধ বাণী না থাকে, তাহলে সেই ছবি দর্শক দেখে কতটুকু আনন্দ পাবে বা কি শিখবে। এখন ছবির গল্প হবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে ঘিরে। মানে একদিকে নতুন প্রজন্মের চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে হবে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম যাতে দেশ, পরিবার আর সমাজের জন্য ক্রিয়েটিভ কিছু করার উৎসাহ পায় তা যদি তুলে ধরা হয় তাহলে বর্তমান পজিটিভ বাংলাদেশের আগামীটা আরও সুখ ও সমৃদ্ধির হবে। যেমন- যদি দেখানো হয় ছবির ইয়ং নায়ক তার বাবা, মায়ের কথা শুনছে, দেশ, পরিবার ও সমাজের জন্য কল্যাণকর কাজ করছে এবং এর সুফলও সে পাচ্ছে, তাহলে বর্তমান প্রজন্ম ছবির গল্পের নায়কের কাজে প্রভাবিত হয়ে নিজেও সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে। কারণ আজকাল প্রায়শই দেখা যায় ইয়ং জেনারেশন পড়াশোনা, কাজকর্ম ফেলে রেখে মোবাইলে সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকে। এতে তার ভবিষ্যৎ যেমন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে তেমনি দেশও আগামীর একজন দায়িত্বশীল নাগরিক পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেউ যখন কোনো ভুল কাজ করে তখন সে তা বুঝতে পারে না। চলচ্চিত্রের গল্পই পারে সেই ভুল সংশোধন করে দিতে। একমাত্র চলচ্চিত্রের গল্পই পারে এই জেনারেশনকে পজিটিভ ওয়েতে ফিরিয়ে আনতে। কারণ ছবির নায়কের কাজ সবসময়ই সবার জন্য অনুকরণীয় হয় এবং মনের মধ্যে প্রভাব ফেলে। তাই ছবির গল্প তৈরিতে এই বিষয়টির পাশাপাশি দর্শক কী চায় তা সঠিকভাবে তুলে আনতে এক্সপেরিমেন্ট অত্যন্ত জরুরি।

 

ভালো ছবি নির্মাণে নির্মাতারও দায়বোধ আছে, বিষয়ে কী বলবেন?

অবশ্যই শতভাগ দায়ভার নির্মাতার। কারণ তিনি হলেন ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। একটি দর্শকগ্রহণযোগ্য ছবি নির্মাণে একদিকে যেমন ক্রিয়েটিভিটি দরকার তেমনি অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ছবি নির্মাণে ক্রিয়েটিভিটির যেমন বিকল্প নেই তেমনি অভিজ্ঞতাকেও ইগনোর করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে এখন অনেক নতুন নির্মাতা আসছেন তারা তাদের সৃষ্টিশীলতা ও মেধা দিয়ে দর্শক আনুকুল্য পাচ্ছেন, এটি আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। অন্যদিকে সিনিয়র নির্মাতা যাঁরা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তাঁরাও কিন্তু সুনির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এভাবেই আসলে ছবির সফলতা, দর্শক আস্থা ফেরানো- সর্বোপরি দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে একজন নির্মাতার দায়বোধ শতভাগ থাকতে হবে বলে আমি মনে করি।

 

বিদেশেও এখন বাংলাদেশের ছবি সাড়া জাগাচ্ছে, বিষয়টি কেমন লাগছে?

বিদেশে বাংলাদেশের ছবির চাহিদা সবসময়ই ছিল  এখনো আছে। বিদেশে যখন দর্শক বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাদের ছবি দেখে তখন তারা তীব্রভাবে নিজের দেশকে মিস করে। দেশের প্রতি ভালোবাসা বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই দেশকে যাতে কেউ ভুলে না যায়, যে বাবা, মা অনেক কষ্টে তার সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়েছে সে সন্তানরা যাতে বাবা, মা, পরিবারকে ভুলে না যায় এর জন্য দেশের সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ দেশ, সমাজ, পরিবারের গল্পে সুস্থ বিনোদন ও বাণীর ছবি নির্মাণ করতে হবে, দেশের পাশাপাশি বিদেশে প্রদর্শন করতে হবে, তাহলেই একদিকে বিশ্বে যেমন আমাদের ছবির সফলতা আসবে তেমনি প্রবাসীদের মধ্যেও দেশ ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সম্মান বাড়বে। সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই, চলচ্চিত্রে কোনো বিষয়ে নেগেটিভ কিছু দেখানো উচিত নয়। যত পজিটিভ বিষয় চলচ্চিত্রে তুলে আনা যায় ততই তা আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প, দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

সর্বশেষ খবর