প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের দুই যুগ পার করেছেন। দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে মৌসুমী নিজেই এক আলাদা অধ্যায়। একসঙ্গে আজ প্রেক্ষাগৃহে দুটি সরকারি অনুদানের ছবি মুক্তি পাচ্ছে তাঁর। একটি আশুতোষ সুজনের ‘দেশান্তর’, অন্যটি মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের ‘ভাঙন’। সব মিলিয়ে মৌসুমীর বৃহস্পতি তুঙ্গে। লিখেছেন- পান্থ আফজাল
কেমন আছেন? দুই চরিত্রের এক মৌসুমী! আজ এই রহস্যের জাল খুলবে?
অনেক ভালো আছি। আর হ্যাঁ, আমি আসছি দুটি চরিত্র নিয়ে। আজ একই দিনে আমার অভিনীত দুই ছবি মুক্তি পাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে-‘ভাঙন’ ও ‘দেশান্তর’। দেশভাগের ওপর লেখা ‘দেশান্তর’ উপন্যাসের প্রধান নারী অন্নপূর্ণা চরিত্রে অভিনয় করেছি। আরও অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, আহমেদ রুবেল, শুভাশিস ভৌমিক, মোমেনা চৌধুরী, ইয়াশ রোহান ও রোদেলা টাপুর। অন্যদিকে ‘ভাঙন’ সিনেমায় যে মেয়েটার চরিত্র আমি করেছি, সে ছিন্নমূল। নাম জুলি। তার ডিভোর্স হয়ে যায়, শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেক পোড় খাওয়া একটা জীবন। সেই চরিত্রের বয়স আমার বর্তমান বয়সের কাছাকাছিই। দুটি চরিত্রেই আমাকে দর্শক অন্যভাবে দেখবেন।
দুটি সিনেমা একই দিনে মুক্তি না দিলে ভালো হতো না?
পরপর দুই সপ্তাহে মুক্তির কথা ছিল দুটি সিনেমার। দেশান্তরের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ১১ নভেম্বর। ৪ নভেম্বর মুক্তির কথা ছিল ভাঙনের। তবে পরে সিদ্ধান্ত বদলায়। তবে দুটিই আমার কাছে ভীষণ প্রিয়। অনেক ভালো গল্পের ছবি। দুটি ছবির জন্যই সমানভাবে মায়া রয়েছে।
সিনেমা দুটি কি সর্বস্তরের দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারবে?
এটা বলা মুশকিল। আজ পর্যন্ত আমি যে ছবিটি ভালো বলেছি, সে ছবিটি ভালো চলেছে- এমনটা কখনো দেখিনি। যে ছবিতে ভেবেছি আমার অ্যাওয়ার্ড পাওয়া উচিত, সে ছবিতে কিচ্ছু হয়নি। আবার যে ছবিকে ভাবনায় আনিনি, সেই ছবিতে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। দর্শক পছন্দ করেছেন। হলে গেলে বোঝা যাবে।
ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক নতুন শিল্পী রয়েছেন। তাদের নিয়ে আপনার অভিমত কী?
নতুন শিল্পীরা অনেক মেধাবী। বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে তারা অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে তারা আরও অনেক ভালো কাজ করতে পারবেন। সবাই যদি শুধু স্ক্যান্ডাল খোঁজেন, তাহলে তারা এগিয়ে যেতে পারবেন না। তাদের উৎসাহ দিতে হবে।
এখন তো প্রায়ই নায়িকাদের স্ক্যান্ডালের মুখে পড়তে হচ্ছে...
নায়িকার সবকিছু নিয়েই ভক্তদের আগ্রহ। তাই নায়িকাকে খুব হিসাব করেই পা ফেলতে হয়। আমরা কি ভুল করিনি? আমরাও অনেক ভুল করেছি। তবে আমি কখনই স্ক্যান্ডালকে গুরুত্ব দিইনি। স্ক্যান্ডালকে সব সময়ই তা দর্শক পর্যন্ত রেখেছি, ব্যক্তিজীবনকে তা স্পর্শ করতে দিতাম না। আমাদের সময়ে সবার সঙ্গে এত চমৎকার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল যে, এসব বিষয় নিয়ে স্ক্যান্ডাল করার সুযোগই ছিল না। আর এখন তো সবাই সবকিছু প্রকাশ করে দিচ্ছেন। এতে দর্শকদের মনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ে। আমরা এ ধরনের বিষয়গুলো হিসাব করে চলেছি।
ক্যারিয়ারের দুই যুগ পার করেছেন। বিষয়টি ভাবলে কেমন লাগে?
খুব অল্প সময়ের জন্যই পৃথিবীতে এসেছি। আমার মনে হয়, এই তো সেদিনই কাজ শুরু করলাম। অথচ দুই যুগ পার হয়ে গেছে? ভাবতেই পারছি না এতগুলো বছর কীভাবে কাটিয়ে এলাম! তবে এই সময়ে এসে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়। যেভাবে সময় পার করতে চেয়েছি সেভাবেই কাটাতে পেরেছি। এখনো সম্মান নিয়েই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি।
ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ব্যস্ততা...
অভিনয়ের পাশাপাশি নারী ও শিশুর জীবনমান উন্নয়নে মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৩ সালে ইউনিসেফ বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর নিযুক্ত হই। এরপর থেকে শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য, শিশুর পুষ্টি, জন্ম নিবন্ধন, শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও টিকাদান বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন আপৎকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
নায়ক হিসেবে কার সঙ্গে অভিনয় করে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন?
সালমান শাহ ও আমি একই স্কুলের স্টুডেন্ট ছিলাম। শুটিং করতে এসেই জানতে পারি, আমরা একই স্কুলের। তাই ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা অন্যরকম ছিল। এই বন্ধুত্ব থেকেই কেয়ামত থেকে কেয়ামতের পর শিবলী সাদিকের ‘অন্তরে অন্তরে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘স্নেহ’ এবং শফি বিক্রমপুরীর ‘দেনমোহর’- চারটি ছবিতে অভিনয় করেছি। এরপর তার সঙ্গে আমার আর অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি। সালমানের পর বলা যায় কম-বেশি সবার সঙ্গেই অভিনয় করেছি। যার সঙ্গেই জুটি বেঁধেছি, বেশ উপভোগ করেছি। ওমর সানীর সঙ্গে কাজ করে করে তো তার জীবনসঙ্গীই হয়ে গেলাম। চলচ্চিত্রের পর এখন তো সে আমার জীবনেরও নায়ক। এর বাইরে আরও রয়েছেন মান্না ভাই আর ফেরদৌস। এ ছাড়া ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই, রুবেল ভাইয়ের সঙ্গেও বেশকিছু চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সবার সঙ্গেই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করেছি।
কোনো বিশেষ চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে?
এমন অনেক কিছুই আছে, যা আমার জীবনে হওয়ারই কথা নয়, অথচ আমি তা পেয়ে বসে আছি। তাই আমার কোনো আক্ষেপ নেই। সব মিলিয়েই আমি একজন পরিপূর্ণ নারী, পরিপূর্ণ মানুষ। কোনো ধরনের চরিত্রের প্রতি দুর্বলতা নয় বরং যে কোনো চরিত্রকে দুর্লভ ভেবে কাজ করার চেষ্টা করি এখনো।
প্রিয়দর্শিনী নায়িকা সম্বোধনে কতটা আনন্দ দেয়?
বিষয়টি যদিও অনেক ভালোলাগার, উচ্ছ্বাসের। কিন্তু তারপরও মনে মনে ভাবি, আমি আসলেই এমন কেউ কি হতে পেরেছি যে আমাকে আদর্শ মনে করবে! সবাই প্রিয়দর্শিনী বলে ডাকে। ভালোই লাগে।
স্বপ্নের চরিত্রে অভিনয় করা হয়েছে?
স্বপ্নের চলচ্চিত্র বা স্বপ্নের চরিত্রে এখনো কাজ করা হয়ে ওঠেনি। তবে এখনই স্বপ্নের চরিত্রটি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। স্বপ্নের কথা বলে দিলে তো অন্য কেউ সেটি নিয়ে নেবে।
সামনে আর কোন চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে?
বেশ কটি সিনেমায় কাজ করেছি। এর মধ্যে শিগগিরই মুক্তি পাবে জাহিদ হোসেনের ‘সোনার চর’।