বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : নিপুণ

এই জয় সব শিল্পীর, আমার একার নয়

চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জটিলতা সৃষ্টি হয় সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। যা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান নিপুণ আক্তার ও জায়েদ খান। দীর্ঘ ৯ মাস পর সোমবার উচ্চ আদালতের রায়ে সাধারণ সম্পাদক পদ ফিরে পান নিপুণ। নিপুণের বলা যত কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

এই জয় সব শিল্পীর, আমার একার নয়

শুরুতেই বিজয়ের অনুভূতি জানতে চাই

আমার জন্য এই বিজয় অর্জন অনেক কষ্টের ছিল। তবে আমার বিশ্বাস ছিল, জয় আমার পক্ষে আসবে। যখন রায় ঘোষণা হলো তখন মনের মধ্যে থাকা সব কষ্ট লাঘব হয়েছে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখন একটা কথাই বলব, এই বিজয় আমার একার নয়, সত্যের জয় হয়েছে।

 

নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও দীর্ঘ নয় মাস সমিতির দায়িত্ব পালন করেছেন সময়ে আপনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতটা পালন করেছেন?

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনের মধ্যে প্রথম কাজ ছিল সদস্যপদ হারানো সদস্যদের পদ ফিরিয়ে দেওয়া। আমি, আমার শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং নির্বাহী কমিটি মিলে সেই প্রতিশ্রুতি প্রথমে রক্ষা করেছি। অসহায় সদস্যদের কল্যাণে যা করার সবই করার চেষ্টা করে গেছি। তবে পদ নিয়ে আইনি পথে হাঁটতে গিয়ে সব কাজ সুচারুরূপে পালন করা শতভাগ সম্ভব হচ্ছিল না। এখন সময় এসেছে সব ওয়াদা পূরণের। আর একটা কথা না বললেই নয়, কাঞ্চন ভাই আমার জন্য অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। তারপরও তিনি হাল ছাড়েননি। সব কথার বাইরে গিয়ে তিনি সমিতির উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন। সমিতির পক্ষ থেকে সুন্দর একটি ইফতার পার্টি করেছি আর ঈদে অসহায় শিল্পীদের জন্য যেভাবে যা করা দরকার সেভাবেই কাজ করেছি। বাকি সব কাজ ইনশা আল্লাহ নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে শেষ করার আশা রাখি।

 

এখন চলচ্চিত্র সমিতির উন্নয়নে আপনার ভূমিকা কী হবে?

আমি নির্বাচনের আগেও বলেছি, চলচ্চিত্র যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থা থেকে চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি এফডিসিতে যতদিন না আসবেন ততদিন সিনেমার কোনো উন্নতি হবে না। তাই এখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। তাঁকে এফডিসিতে নিয়ে আসব। চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী। সিনেমার লগ্নিকারক সংকট। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বছরে ৭০ থেকে ৮০টি সিনেমা নির্মাণ করার জন্য অনুদান চাইব। আমরা দেখেছি, তিনি নিজে যেসব ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেন, সেসব সমস্যা দ্রুত দূর হয়। প্রধানমন্ত্রী এফডিসিতে এলে আমাদের সব সমস্যা শুনে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে চলচ্চিত্রের সমস্যাগুলোও দূর হবে। শিল্পীদের অনুদানের টাকায় নয়, কাজ করে বাঁচানোর চেষ্টা করব। তাছাড়া একটা কথা পরিষ্কার বলতে চাই, শুধু সমিতি নিয়ে থাকলেই চলবে না, সবাইকে কাজের মধ্যে আনতে হবে। সেই দায়িত্ব সবাইকে নিয়ে এখন পালনের সময় এসেছে। সব শিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে সমিতিকে আরও অনেক ভালো কাজ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সবশেষে বলব, সত্যের জয় হয়েছে। এখন আমার মাথা ‘পরিষ্কার হয়েছে’, মন দিয়ে চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে যাব।

 

সমিতির গঠনতন্ত্রে উল্লেখ আছে সমিতির নিয়ম না মানলে সদস্যপদ স্থগিত কিংবা বাতিল হতে পারে  আইন কী জায়েদ খানের জন্য প্রযোজ্য হতে যাচ্ছে?

আপনারা জানেন, তিনি কিন্তু একটা বড় অপরাধ করেছেন কোর্টের একটি মিথ্যা সার্টিফিকেট দেখিয়ে। আসলে কোর্টের বিষয় কিন্তু সবার বোঝার উপায় নেই। সেই সার্টিফিকেট দেখার পর কাঞ্চন ভাই কিন্তু তাকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। সেই সার্টিফিকেটের বিষয়টি কিন্তু আমরাও জানতাম না, পরবর্তীতে চেম্বার জজ থেকে জেনেছি। এখন এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন।

 

আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবার বলছেন শেষ জয় তারই হবে, নিয়ে কী বলবেন?

এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই, কারণ আমাদের নির্বাচনে যা নিয়মনীতি ছিল সেটিই পালন করেছি। নিয়মনীতির বাইরে একদমই যাইনি। সে জন্য আমরা খাবার পাইনি, পানি পাইনি, আমরা ওয়াশরুম ব্যবহার করতে পারিনি, সব মেনে নিয়েছি। আমার বিশ্বাস ছিল সত্যের জয়টা হবে এবং ফাইনালি তা হয়েছে। আদালতের রায়ে সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে। সত্যের জয় হয়েছে। আজ আনন্দে চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে বারবার। এই রায়, এই জয় সব শিল্পীর, আমার একার নয়।

 

জায়েদ খানের উদ্দেশে কিছু বলতে চান?

তাকে শুভকামনা জানাই এবং সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। একজন নারী তার কর্ম দিয়ে এগিয়ে যায়। তার দৃষ্টান্ত আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাই তাকে বলব, নারীদের ছোট করে কথা না বলার জন্য।

 

এর আগে সমিতির বিভিন্ন পদ থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন, তারা কি থাকবেন সমিতির আগামী সভায়?

তারা তো আগে থেকেই বলছিলেন, মিটিং মানি না। অনেকে মিটিংয়ে আসেননি। এখন বৈধতা পাওয়ার পর হয়তো আমরা সবাই মিলে কাজ করব। কারণ, এত কম লোক দিয়ে সংগঠন চালানো যায় না। এ ব্যাপারে আমার সভাপতি যা বলবেন, সেটিই চূড়ান্ত হবে। আর আমরা কিন্তু কাউকে বলিনি এফডিসিতে না আসতে। এফসিডিতে আসার অধিকার সব শিল্পীর রয়েছে। তারা এলে তো না করব না; বরং একসঙ্গে কাজ করে যাওয়াই সবার জন্য ভালো।

 

এবার আপনার চলচ্চিত্রের কাজের ব্যস্ততা সম্পর্কে বলুন-

বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাজ আছে হাতে। এর মধ্যে অন্যতম শ্রদ্ধেয় দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘সুজন মাঝি’। ছবিটির কাজ প্রায় শেষ। এ ছাড়া আরও কিছু কাজের প্রস্তাব রয়েছে। গল্প ও চরিত্র ভালো লাগলে অবশ্যই সেগুলোতে কাজ করব।  এখন তো সমিতির দায়িত্বও আমাকে পালন করতে হচ্ছে। তাই বুঝেশুনে ভেবেচিন্তে ভালোভাবে দুই দিকের কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। যাতে কোনো কাজই মানহীন না হয়।

সর্বশেষ খবর