পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ হলো মা। মাকে কেন্দ্র করে বিশ্বে চলচ্চিত্র, গান, নাটক প্রচুর নির্মাণ হয়েছে এবং দর্শক হৃদয় কেড়েছে। বিশ্বে মাকে ঘিরে নির্মিত চলচ্চিত্রে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে আজও যাঁরা সেরা হয়ে আছেন এমন কয়েকটি চলচ্চিত্রের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
শবনমের ‘আম্মাজান’
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায়। এ দেশে মাকে নিয়ে নির্মিত সেরা ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এটিকে। ছবিতে নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন শবনম। আরও অভিনয় করেছেন মান্না, আমিন খান, মৌসুমী, ডিপজল প্রমুখ। ছবিতে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ‘আম্মাজান আম্মাজান’ আজও সমান জনপ্রিয় হয়ে আছে।
শ্রীদেবী
শ্রীদেবীর ‘মম’
শ্রীদেবীর ৫০ বছরের অভিনয় জীবনে ‘মম’ অন্যতম সফল ছবি। এ ছবি তাকে জাতীয় পুরস্কারও এনে দিয়েছে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সংগীতকার এ আর রহমান। এ ছবির প্রযোজক হলেন শ্রীদেবীর স্বামী বনি কাপুর। তার কথায়- ‘মম এমন একটি ছবি যেটা এই বিশ্বের সব মা ও সিনেমাপ্রেমী ছবিটির সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করতে পারবেন। এটাই প্রয়াত শ্রীদেবী অভিনীত শেষ ছবি। ২০১৭ সালের ৭ জুলাই মম মুক্তি পায় এবং বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
নার্গিসের ‘মাদার ইন্ডিয়া’
মাদার ইন্ডিয়া ভারতীয় মহাকাব্যিক নাট্য চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন মেহবুব খান। অভিনয় করেছেন নার্গিস, সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার, রাজকুমার প্রমুখ। ছবির রাধা (নার্গিস) নামে এক দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামের নারীর গল্প, যিনি তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে, ছেলেদের লালন-পালন এবং ধূর্ত-ধনদাতার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। ব্যয়বহুল হিন্দি চলচ্চিত্র মাদার ইন্ডিয়া বর্তমানেও সর্বকালের ভারতীয় বক্স অফিস হিট ছবির মধ্যে রয়েছে। এটি ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে মুক্তি পায় এবং রাজধানী নয়াদিল্লিতে এটির একাধিক হাইপ্রোফাইল প্রদর্শনী হয়েছিল, যার মধ্যে দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। চলচ্চিত্রটি ১৯৫৭ সালে শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য অল ইন্ডিয়া সার্টিফিকেট অব মেরিট এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছে, যেখানে নার্গিস এবং মেহবুব খান যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ও শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে পুরস্কার জিতেছিলেন। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনীত হয়।
সোফিয়া লরেন
সোফিয়া লরেনের ‘টু উইমেন’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় কুঁকড়ে যাওয়া মানবতার করুণ গাথা সবচেয়ে ভালোভাবে তুলে এনেছিলেন ইতালীয় নির্মাতা ভিত্তরিও ডি সিকা। আলবার্তো মোরাভিয়ার লেখা ‘টু উইমেন’ উপন্যাসকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন। যুদ্ধের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া এক মা শত্রুশিবিরের লালসা থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রামের সবকিছুই ‘টু উইমেন’-এ উঠে আসে। অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন অভিনয় করেছিলেন এ সিনেমায় মা সেসিরার ভূমিকায়। এ চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় তাকে এনে দিয়েছিল অস্কারসহ মোট ২২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। আজও সেলুলয়েডে সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রামের অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে অমর হয়ে আছে ১৯৬০ সালের এ সিনেমাটি।
আনা রেসমন্ডের ‘মাদার’
এটিকে ‘হারানো চলচ্চিত্র’ হিসেবে ধরা হয়। আমেরিকান নির্বাক স্বল্পদৈর্ঘ্য নাট্য চলচ্চিত্র। প্রযোজনা করেছে থানহাউসার কোম্পানি। উইল অ্যালেন নামের একটি ছেলে তার সৎ বাবার ভয়ানক অত্যাচারের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। আর তার মা একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে ছেলের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। ২০ বছর পর উইল বাড়ি ফিরে আসে একজন প্রখ্যাত উকিল হয়ে। কিন্তু সে তার বাবা-মাকে আর খুঁজে পায় না। পরবর্তীতে উইল একজন মহিলার হয়ে মামলা লড়ে, সেই মহিলাকে উইল মা হিসেবে চিনতে পারে এবং এভাবে তাদের পুনর্মিলন হয়। অভিনয়ে ছিলেন আনা রোসমন্ড, ফ্রাঙ্ক এইচ ক্রেন ও ক্যারি। এটি ১৯১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়।
শার্লির ‘টার্মস অব এনডিয়ারমেন্ট’
বাবাহীন এমাকে আগলে রেখে অরোরা খুঁজে ফেরে সত্যিকারের ভালোবাসা। এদিকে এমাও বড় হয়ে জড়িয়ে পড়ে জটিল এক সম্পর্কে, নিজেও অর্জন করে মাতৃত্বের স্বাদ। তাদের চারপাশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলেও একান্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এই মা-মেয়ে দুজনেই এগিয়ে আসে একে অপরের সাহায্যে। মা-মেয়ের ৩০ বছরের এ গল্প নিয়েই ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় টার্মস অব এনডিয়ারমেন্ট। জেমস এল বুরুকসের পরিচালনায় সিনেমাটি সেবার অস্কার আসর করে নিয়েছিল নিজেদের। ১১টি মনোনয়নের মাঝে জিতেছিল সেরা সিনেমার পুরস্কারসহ পাঁচটিতে। মা অরোরার চরিত্রে অভিনয় করা শার্লি ম্যাকলেইন জিতেছিলেন সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।
এলেন পেজের ‘জুনো’
জ্যাসন রেইটম্যানের পরিচালনায় এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র জুনো নামের এক কিশোরী। দুর্ঘটনাবশত গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার পর মা হওয়ার প্রবল আকাক্সক্ষা, সামাজিক ও পারিবারিক জটিলতা এবং অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে এগিয়ে চলা জুনোর গল্প নিয়ে নির্মিত হয় এ চলচ্চিত্র। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি বক্স অফিসে ঝড় তোলে। কেন্দ্রীয় চরিত্র করেন এলেন পেজ।
কারিশমার ‘শক্তি দ্য পাওয়ার’
এ ছবিটি মূলত মা-কেন্দ্রিক। ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পায়। এতে দেখানো হয়েছে একজন মায়ের লড়াইয়ের গল্প। মায়ের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে কারিশমা কাপুর ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন।