স্থবির চলচ্চিত্র জগৎ

স্থবির চলচ্চিত্র জগৎ। ছবি মুক্তি, নির্মাণ, সিনেমা হল বন্ধ হয়ে আছে প্রায় দুই মাস হতে চলল। এতে ভালো নেই চলচ্চিত্র জগতের মানুষ। বিশেষ করে যারা ‘দিন আনে দিন খায়’ চলচ্চিত্রের এমন কলাকুশলী, সিনেমা হলের স্টাফ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মূলত জুলাই মাস থেকে দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে থমকে যায় চলচ্চিত্র জগৎ। আন্দোলনের মধ্যে ১৮ জুলাই মুক্তি পায় ‘আজব কারখানা’ ছবিটি। কিন্তু দেশের অস্থির অবস্থার কারণে ছবিটি দর্শক পায়নি। বেশ কিছুদিন বিরতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এ সময়ে গত ২৩ আগস্ট মুক্তি পায় ‘মানুষ হল অমানুষ’ ছবিটি। সেটিও দর্শক খরায় পড়ে। এ বিষয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ বলেন, ‘সিনেমা হলো একটি বিনোদনমাধ্যম। বিনোদন পাওয়ার জন্য কখন মানুষের মন কাঁদে, যখন সবদিক দিয়ে সে শান্তিতে থাকে, সচ্ছলতা থাকে। এখনতো সেই পরিবেশ নেই। তাই চলচ্চিত্র জগৎ স্থবিরতায় পড়বে এটাই স্বাভাবিক। মানুষ এখন চায়ের আড্ডায় বসে আলাপ করছে কখন সব ঠিক হবে আর কখন চলচ্চিত্র জগৎ আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আমিও তাদের মতো ভাবছি এবং আশা করছি শিগগিরই এ জগৎ আবার আলো ছড়াবে।’ আরেক খ্যাতিমান চিত্রনির্মাতা রায়হান রাফি বলেন, ‘দেশের ওপর দিয়ে যখন এত বড় একটা ধকল গেল তখন সবকিছু স্বাভাবিক হতেতো একটু সময় লাগবেই। এখন ধীরে ধীরে সবাই শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাজ শুরু করার আগে প্রসেসিংয়ের একটা ব্যাপার থাকে, সেটিই এখন হচ্ছে। এ কথা সত্যি যে, অনেক দিন ধরে চলচ্চিত্র জগৎ যখন স্থবির হয়ে আছে তখনতো এ জগতের সঙ্গে যুক্ত সবাই ক্ষতির মুখে পড়বে। বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে যারা দিন আনে দিন খায় সেই কলাকুশলীরা। এখন দরকার সবাই মিলে এ জগৎটাকে স্বাভাাবিক করে তোলা। আমি শিগগিরই ওটিটির জন্য একটি কন্টেন্ট ও দুটি ছবির নির্মাণ কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।’ সিনেমা হল মালিক সমিতির সিনিয়র কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ‘সার্বিকভাবে চলচ্চিত্র জগতের অবস্থা এখন ভালো নেই। আমি এ অবস্থার দ্রুত পরিত্রাণ ও উত্তরণ চাই। না হলে শিল্পটি আর টিকবে না। আমরা সিনেমা হল মালিকরা এখন খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছি। জানি না এ দুর্দিন কখন কীভাবে কাটবে।’ এদিকে অনন্য মামুনের ‘দরদ’, এম রাহিমের ‘জংলি’ ও সানী সানোয়ারের ‘এশা মার্ডার কর্মফল’ ছবিগুলো অনেক আগেই মুক্তির জন্য প্রস্তুত ছিল। তবে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এখনো সেন্সর বোর্ড তাদের কার্যক্রম শুরু না করায় ছবিগুলোর মুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই এসব ছবির নির্মাতারা পড়েছেন চরম বিপাকে। দুর্গাপূজায় ‘দরদ’ বাংলাদেশ ও ভারতে একসঙ্গে মুক্তি পাবে- এমন ঘোষণা আগে দেওয়া থাকলেও এখন সেটাও সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন ছবিটির নির্মাতা অনন্য মামুন। কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা ছবিগুলো মাসের পর মাস পড়ে থাকলে প্রযোজকের ক্ষতি বলেও মনে করেন মামুন। ‘এশা মার্ডার কর্মফল’ ছবিটির নির্মাতা সানী সানোয়ার বলেন, ‘আগস্টেই আমরা শুটিংয়ের পরিকল্পনা করেছিলাম। সেটা তো আর হলো না। এখন আবার নতুন করে অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে শিডিউল নিয়ে বসতে হবে। এ অবস্থায় এ বছর ছবিটি আর মুক্তি দিতে পারব না।’ রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলটি সংস্কার করেছেন এর কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। এতে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করেছেন। অথচ কোনো কন্টেন্ট না থাকায় হল চালু করতে পারছেন না নওশাদ। তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে সত্যিই হল চালানো আর সম্ভব হবে না। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কিছু দাবি নিয়ে যাব। এর মধ্যে যোগাযোগও করেছি। হয়তো কিছুদিনের মধ্যে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাহেবের সঙ্গে দেখা হবে।’ এদিকে সরকার পতনের পরপরই একাধিক ছবির ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্মাতারা। ‘আয়নাঘর’, ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’, ‘হারুনের ভাতের হোটেল’, এমন ছবিগুলোরও নেই কোনো আপডেট। চলচ্চিত্রের এ স্থবির অবস্থায় কোনো প্রযোজক আর ছবি নির্মাণে অর্থ লগ্নি করতে চাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কাজের অভাবে এফডিসির চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক থেকে শুরু করে সব কলাকুশলী এখন বেকার।  তারা কাজের অভাবে উপার্জন না থাকায় মানবেতর জীবনযাপনের মুখে পড়েছে। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র জগৎ আবার দুরবস্থার মুখে পড়েছে বলে উদ্বেগ চলচ্চিত্র বাসিন্দাদের।